Advertisement
E-Paper

অধীর নাকি জোট, অগ্নিপরীক্ষা তারই

অধীর চৌধুরীর জেদ, নাকি জোটের স্পিরিট? কোনটা এগিয়ে? পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে কৃষ্ণগঞ্জ। বছরখানেক আগে এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে যাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তাঁকেই প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বা বলা ভাল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০২

অধীর চৌধুরীর জেদ, নাকি জোটের স্পিরিট? কোনটা এগিয়ে?

পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে কৃষ্ণগঞ্জ।

বছরখানেক আগে এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে যাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তাঁকেই প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বা বলা ভাল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

নিচুতলার কর্মীদের আপত্তি গ্রাহ্য না করে, এক রকম জোর করেই প্রার্থী করা হয়েছে নিত্যকে। বিশেষ করে হাঁসখালি ব্লকের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের আর্জিতে সাড়া দিয়ে পরে ওই কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। সেই প্রার্থীর হয়ে ভোটে প্রচারও করেছেন কংগ্রেস কর্মীদের একাংশ।

সেই ‘অপরাধে’ হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তীকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের নেতারা নিত্যর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু নিচুতলার কর্মীরা মুখ ঘুরিয়ে নেন। নেতৃত্বের নির্দেশকে কার্যত অমান্য করে সিপিএমের মৃণাল বিশ্বাসকেই ‘জোটপ্রার্থী’ হিসেবে ধরে নেন তাঁরা। তাঁর হয়েই মাঠে নামেন। আর একটা অংশ স্রেফ বসে যান।

এক জেলা কংগ্রেস নেতার মতে, মুর্শিদাবাদে অধীর যে ভাবে দলটা চালান, সে ভাবে অন্যত্রও চালাতে চাইছেন। এক সময়ে গোঁজ দাঁড় করিয়ে অতীশ সিংহের মতো কংগ্রেস প্রার্থীকেও তিনি হারিয়ে দিয়েছেন। এখানেও তা করারই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একই ফর্মুলা যে সব জায়গায় খাটে না, তা তিনি বুঝতে চাইছেন না। এক সময়ে ‘কুড়ুল’ চিহ্নে তিনি গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করাতেন। এখন একই ভাবে জোটের পায়ে কুড়ুল মারছেন।

সাসপেন্ড হওয়া কংগ্রেস নেতা দিনেশ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘এই কেন্দ্রে তৃণমূল যদি ভাল ফল করে, তার দায় কিন্তু অধীরবাবুকেই নিতে হবে। একটা কেন্দ্রে দু’বার প্রার্থী বদল হলে তো গোটাটাই ঘেঁটে যায়। আমাদের কর্মীরা যে ভাবে দলের প্রথম প্রার্থীকে নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন, তৃণমূলকে যথেষ্ট বেগ দেওয়া যেত।’’

কংগ্রেস নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, এমনিতেই তাঁদের ঝুলিতে বিশেষ ভ‌োট নেই, যা-ও বা আছে তার একটা বড় অংশ সিপিএমের বাক্সে গিয়ে পড়তে পারে। কৃষ্ণগঞ্জের ব্লক সভাপতি শঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ মহাজোট তৈরি করে ফেলেছে। আমাদের কর্মীরা তেমনটাই বলছেন। আমরাও সেটা উপলব্ধি করছি।’’

সিপিএমের পালে হাওয়া আরও জোরালো হয়েছে দলের বগুলা লোকাল সম্পাদক তথা ডিওয়াইএফ-এর জেলা সভাপতি মৃণাল বিশ্বাসের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করায়। ছাত্র রাজনীতি করে উঠে আসা মৃণালের হয়ে প্রথম থেকেই তরুণ কর্মীরা ঝাঁপিয়েছেন। কংগ্রেসেরও কমবয়সী কর্মীদের একটা অংশকে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন।

এর উপরে নাটকীয় ভাবে মৃণাল প্রচারের আলোয় চলে আসেন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে। মার খেয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে পরিস্থিতি
পুরোপুরি নিত্যগোপালের প্রতিকূলে চলে যায়। আরও একা হয়ে যান তিনি। কিন্তু অধীর নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার ফলে যে ডামাডোল তৈরি হয় তাতে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যায় তৃণমূল।

দিনেশবাবু বলেন, ‘‘দু’দিন আগে জনসভায় অধীরবাবু বলেছেন যে, নিত্যগোপাল দুর্বল প্রার্থী। জঙ্গিপুরে সিপিএম যদি প্রার্থী তুলে নেয়, তিনিও নিত্যগোপালকে তুলে নেবেন। তা হলে তিনি স্বীকারই করে নিলেন যে, নিত্যগোপালকে প্রার্থী করে তিনি ভুল করেছেন। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে আমাদের অবস্থান সঠিক ছিল। এটা আমাদের কর্মীদের নৈতিক জয়।’’

দিনেশের প্রশ্ন, ‘‘এ বার কর্মীরা যদি প্রদেশ সভাপতিকে প্রশ্ন করেন, কেন আমাকে সাসপেন্ড করা হল, কী উত্তর দেবেন‌ তিনি? কর্মীদের সামনে দাঁড়ানোর কোনও মুখ থাকবে?’’

এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাসের এমনিতে ভয়ের বিশেষ কারণ নেই। গত দু’টি ভোটের পাটিগণিতের অঙ্ক তাঁর অনুকূলে রয়েছে। যদিও কারণে-অকারণে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস রয়েছে তাঁর। গোটা এলাকার সংগঠন তাঁর মুঠোয় ধরা। জোট হলেও তিনি অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন। জোট যখন হয়নি, কংগ্রেসের একটা অংশের সমর্থন সত্ত্বেও মৃণাল বিশ্বাসকে ভয় পাওয়ার সঙ্গত কারণ তাঁর নেই।

অন্তত, আপাতদৃষ্টিতে।

হয়তো সেই কারণেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের ব্লক স্তরের এক নেতা আক্ষেপ করছেন, ‘‘অধীরবাবু কি চেয়েছেন, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা তৃণমূলকে এই কেন্দ্রটা উপহার দিতে চাই নি।’’

তবে নারদার ক্ষীর খাওয়ার পরে তৃণমূলের দিনকাল ভাল নয়, গ্রহতারা ভাল নয়। কে যে কোথায় হেরে বসবে, বলা শক্ত।

কাকে জেতাবে কৃষ্ণগঞ্জ?

সত্যজিৎ বিশ্বাস, তথা সৌজন্যে অধীর চৌধুরীকে? নাকি পাল্টে দেওয়ার পাল্টা হাওয়াকে?

assembly election 2016 congress adhir chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy