কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় টহল দেবে, এ বার থেকে তার পাঁচ দিনের আগাম পরিকল্পনা জানিয়ে দেবে জেলা প্রশাসন। বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রাজ্যের কাছে এই নির্দেশ পাঠিয়েছে। কিন্তু কমিশনের এই নির্দেশ কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল ও প্রশাসনের একাংশ।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ভোটের এক মাস আগে রাজ্যে আসা ২৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠিক মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর এলাকায় যাচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাহিনীর অপব্যবহার নিয়ে ধোঁয়াশা দূর করতে কমিশন সোমবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘টহলদারির যে পরিকল্পনা এত দিন শুধু মাত্র কমিশনের অফিসারেরা জানতেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে এখন থেকে তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
কিন্তু পাঁচ দিন আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চের খবর আগাম জানা থাকলে হিতে-বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। তাঁদের মতে, স্পর্শকাতর গ্রাম বা পাড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী যাওয়ার খবর আগাম জানা থাকলে শাসক দল সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীদের মুখ না-খোলার হুমকি দিয়ে আসতে পারেন। ভোটারেরা যাতে বাহিনীর সামনে মুখ না খোলেন, সেটা নিশ্চিত করতেই শাসক দল সুযোগ নিতে পারে বলে ওই কর্তাদের ধারণা।
গ্রামবাসীদের অভয় দিতে কমিশনের এই নতুন ঘোষণায় আখেরে কতটা ভাল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিরোধী দলগুলিও। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘ওরা যাই করুক, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। ভাল না খারাপ হল, তা দু’দিন গেলেই বুঝতে পারব।’’ কংগ্রেসের মানস ভুঁইঞার মতে, ‘‘এর ভাল-খারাপ দু’দিকই আছে। বাহিনী ঠিক মতো যাচ্ছে কি না, তা কমিশন যাচাই করতে পারবে। কিন্তু আগে জেনে গেলে তৃণমূলের শাসানি ওই গ্রামগুলিতে চলবে।’’ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগাম জানলে তো দাগিরা গা-ঢাকা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।’’
গত ১৪-১৫ মার্চ কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে এসে আইনশৃঙ্খলার তদারকি করে গিয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যে ১২ হাজার স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এখন থেকে আর মূল সড়কে নয়, গ্রামের ভিতরে টহল দেবে।’’ রবিবার কমিশন এক নির্দেশে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় এলাকায় ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে এবং পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রতি দিন পাঁচটি এলাকায় জেলাশাসককে যেতে হবে। মহকুমাশাসক এবং মহকুমা পুলিশ অফিসারদের অন্তত ১০টি করে এলাকায় বাহিনী নিয়ে পৌঁছতে হবে। এই নজরদারির ছবি-সহ বিবরণ পাঠাতে হবে কমিশনকে। এ বার বাহিনীর টহলদারি নিয়ে নতুন ঘোষণা করল কমিশন।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি জঙ্গলমহল এলাকায় ভোটের দিন আকাশপথেও নজরদারির ব্যবস্থা রাখছে কমিশন। তাদের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। তবে কতগুলি কপ্টার নজরদারিতে থাকবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। থাকবে একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সও।’’ এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি অংশ জঙ্গলমহলে মোটরবাইকে টহল দিতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশনের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy