Advertisement
১৩ জুন ২০২৪

প্রমীলা বাহিনীকে সামনে রেখেই, রুখে দাঁড়াল জোট

বাধা পেলে যেতে হবে পাল্টা প্রতিরোধে। তার নেতৃত্বে থাকবেন মহিলারা— ভোটের মাঠে খেলতে নামার আগে ছক কষেছিল সিপিএম। বৃহস্পতিবার রুখে দাঁড়ানোর সেই ছবিই দেখা গেল বর্ধমানে।

প্রতিরোধের পরে ভোটের লাইনে। রায়নায় বৃহস্পতিবার উৎপল সরকারের তোলা ছবি।

প্রতিরোধের পরে ভোটের লাইনে। রায়নায় বৃহস্পতিবার উৎপল সরকারের তোলা ছবি।

সুব্রত সীট ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
গলসি ও রায়না শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

বাধা পেলে যেতে হবে পাল্টা প্রতিরোধে। তার নেতৃত্বে থাকবেন মহিলারা— ভোটের মাঠে খেলতে নামার আগে ছক কষেছিল সিপিএম। বৃহস্পতিবার রুখে দাঁড়ানোর সেই ছবিই দেখা গেল বর্ধমানে।

প্রচারের শেষবেলায় মঙ্গলবার বর্ধমানের কার্জন গেটের সভায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘‘আঁচলের নীচে মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে বুথে যান। ভোট লুঠ হচ্ছে দেখলে ঝাঁটা দিয়ে পেটান!’’ রায়না, গলসি থেকে জামালপুর, এ দিন যেখানেই বুথের পথে বহিরাগতদের বাধা বা বোমাবাজির অভিযোগ উঠল, ঝাঁটা-বঁটি-লাঠি নিয়ে তেড়ে গেল প্রমীলা বাহিনী। ফলও মিলল হাতেনাতে। কোথাও নিজেরাই পিছু হঠল দুষ্কৃতীরা, কোথাও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে সরিয়ে দিল।

২০১৩-য় পুরভোটের দিন সকালে ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগে প্রার্থী তুলে নিয়েছিল বর্ধমানের সিপিএম। তার পরে ২০১৪-র লোকসভা ভোটেও এই জেলায় বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি বামেরা। গ্রামীণ এলাকার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে ছিল তারা। তবে এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। বাম-কংগ্রেস জোটের আবহে নানা এলাকায় লাল পতাকার বিশাল মিছিল, বড়সড় সভা হয়েছে। এক সময়ের ‘লাল দুর্গে’ জোর ফিরেছে সিপিএমের গলায়।

ভোটের দিন সন্ত্রাস হলে রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রচারে বারবারই দলের কর্মী-সমর্থকদের বলে এসেছেন সিপিএম নেতারা। দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘ওদের লোকজন যত সহজে আমাদের ছেলেদের গায়ে হাত দেবে, মেয়েদের গায়ে হাত তোলাটা কিন্তু তত সহজ হবে না। তাই আমাদের কৌশল ছিল, প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেবেন মহিলারা।’’

রায়নার পশ্চিমপাড়ায় সকাল থেকেই সিপিএম সমর্থকদের বুথে যেতে বাধা, ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়া, এক জনকে মারধরের অভিযোগ উঠছিল। গ্রামের মহিলা নুরজাহান বেগম, ফিরোজা বেগম, পূর্ণিমা বসুদের অভিযোগ, ‘‘ভোট দিয়ে ফেরার পরে তৃণমূলের লোকেরা হুমকি দিচ্ছিল। সবাই মিলে ঠিক করি, ওদের এলাকাছাড়া করব।’’ এর পরেই জনা পাঁচিশ মহিলা ঝাঁটা-বঁটি হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতীদের তাড়া করেন। খবর যায় প্রশাসনে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ গিয়ে বেশ কিছু ভোটার কার্ড উদ্ধার করে। ধরা হয় এক তৃণমূল কর্মীকে।

সকালে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরের বুথে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন গলসির খেড়োবাড়ি গ্রামের কয়েকজন। হঠাৎ গাছের আড়াল থেকে রাস্তায় এসে পড়ে তিনটে বোমা। এর পরেই প্রমীলা বাহিনীকে সামনে রেখে এলাকাবাসী জঙ্গলের মধ্যে দুষ্কৃতীদের তাড়া করেন। সুমিত্রা সোরেন, মামনি সোরেনরা বলেন, ‘‘তাড়া খেয়ে হুড়মুড়িয়ে চম্পট দেয় ওরা।’’ তবে তাতেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা। সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে, এই দাবিতে রাস্তায় বসে পড়েন সুমিত্রারা। যোগ দেন এলাকার আরও অনেকে। শেষে কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে তাঁদের বুথে পৌঁছে দেয়। সুমিত্রাদেবী বলেন, ‘‘ভোট মিটলে হয়তো হামলা হবে। কিন্তু ভোটটা তো দিতে পারলাম।’’ জামালপুর, মন্তেশ্বরেও বুথে যেতে বাধার খবর পেয়ে মহিলাদের পাড়ার রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘মানুষকে বলেছিলাম, শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে ভরসা করলে হবে না। নিজেদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা কাউকে কোথাও বাধা দিইনি। গোটাটাই সিপিএমের নাটক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Voters Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE