Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দুয়া করবেন, আনিসুরকে মিনতি সৌমিকের

এখন আর একলা চলাফেরা করতে পারেন না। ছায়ার মতো সঙ্গে থাকা ছেলেটি একটা চেয়ার এগিয়ে দিতেই ধপ করে বসে পড়ছেন তিনি। আর, তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটছিল। চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছেন দেখে এগিয়ে আসছেন যিনি, মাঝ বয়সী লড়াইটা এ বার তাঁর সঙ্গেই।

জয়ের পরে আনিসুর রহমান। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

জয়ের পরে আনিসুর রহমান। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

এখন আর একলা চলাফেরা করতে পারেন না। ছায়ার মতো সঙ্গে থাকা ছেলেটি একটা চেয়ার এগিয়ে দিতেই ধপ করে বসে পড়ছেন তিনি। আর, তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটছিল। চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছেন দেখে এগিয়ে আসছেন যিনি, মাঝ বয়সী লড়াইটা এ বার তাঁর সঙ্গেই।

সৌমিক বলছেন, ‘‘সাবধানে, আর একটু হলেই তো পড়তেন!’’

একটু হাসছেন তিনি, নিছকই সৌজন্যের হাসি? সৌমিকের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘ভাল থেকো, আর হ্যাঁ, একটা কথা বলি, তোমরাই তো ক্ষমতায় আসছে, আমি আর বেশি দিন মাঠে-ঘাটে দাপাতে পারব না, ডোমকলটাকে একটু দরদ দিয়ে দেখ ভাই!’’

চেয়ারে বসে থাকা মাঝবয়সী প্রতিপক্ষের দিকে মাথাটা নুইয়ে দিচ্ছেন সৌমিক, বলছেন, ‘‘আপনি আমার জন্য একটু দুয়া করবেন।’’

বাইরে তখন মুখ ভার করা আকাশ। আলো পড়ে এসেছে। ডোমকল গার্লস হাইস্কুলের কাউন্টিং সেন্টারে মনখারাপ করা বৃহস্পতিবারের দুপুরে তখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আনিসুর রহমান আর, সৌমিক হোসেন।

প্রথম জনকে এ বারও ফেরায়নি ডোমকল। তৃণমূলের ভরা জোয়ারেও, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, জোটপ্রার্থী সিপিএমের আনিসুর ডোমকলে জয়ী হয়েছেন ৬ হাজার ৮৯০ ভোটে। অথচ, এ বার তাঁকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করবে কিনা, তা নিয়েই দোটানায় ছিল সিপিএম। স্নায়ু রোগে স্বাস্থ্যভাঙা আনিসুর, ভরা গ্রীষ্মের নির্বাচনী প্রচারের ধকল কতটা সামলাতে পারবেন তিনি, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন সকলে। গত দেড় মাস ধরে, কখনও ভ্যান রিকশায় কখনও বা মোটরবাইকের পিছনের আসনে বসে টলমল পায়ে সেই প্রচার সামাল দিয়ে আনিসুর এ বারও পেয়েছেন ৭১ হাজার ৭০৩ ভোট। সিপিএমের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘ভাবিনি, সত্যিই ভাবতে পারিনি আনিসুর এই লড়াইয়ে উতরে দেবেন!’’

আর, যাঁরা ভেবেছিলেন, ডোমকল-জয়টা নিছক সময়ের অপেক্ষা, সেই তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলছেন, ‘‘আসলে ও (সৌমিক) রাজনীতিতে এখনও পরিণত নয়। মানুষকে চিনতে পারেনি। তাই এতটা নিশ্চিত ছিল।’’

ফল ঘোষণার পরে ভার মুখে সৌমিকও কী বলেননি, ‘‘আমি হারিনি, আমাকে হারানো হয়েছে। দলের অনেকেই গদ্দারি করেছে!’’

ঘটনাচক্রে সৌমিক, মান্নান-তনয়। নিজের ছেলেকে দীর্ঘ দিন কাছ থেকে দেখা মান্নান জানেন, সীমান্তের প্রান্তিক জনপদ, ডোমকলের রাজনীতির সঙ্গে গত কয়েক মাসে তেমন সড়গড় হয়ে উঠতে পারেননি সৌমিক। তাই ‘গদ্দারি’র তোপ প্রশমনে ছেলেকেই বরং প্রচ্ছন্ন ধমক দিচ্ছেন তিনি।

ডোমকল দখলের জন্য কম ‘পরিশ্রম’ করেননি সৌমিক। ডোমকলে জমি কিনে রাতারাতি বাড়ি করেছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে ঠাঁই গেড়েছিলেন এই প্রান্তিক শহরেও। গত দেড় মাস ধরে কখনও বাইক বাহিনী, কখনও মুম্বইয়ের রুপোলি পর্দার ঝাঁঝাল তারকা নিয়ে যিনি দিবারাত্র ডোমকল দাপিয়ে বেরিয়েছেন তাঁর কাছে ডোমকল অধরা থেকে যাবে? তার উপরে জোট সত্ত্বেও এই কেন্দ্রে আনিসুরের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের আড়ালে অধীরও প্রার্থী দিয়ে বসেছিলেন ডোমকলে। ফলে এই কেন্দ্রে জোটের জয় নিয়েই তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা।

সব হিসেব অবশ্য উল্টে গিয়েছিল সাত রাউন্ডেই। প্রথম রাউন্ডে সেই যে ১১ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছিলেন সৌমিক, তা আর ভরাট করা যায়নি। উত্তরোত্তর তা বেড়েছে। সাত নম্বর রাউন্ডে সারাংপুর আর ভগীরথপুরের ইভিএম খুলতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তফাৎটা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা আর মেক আপ করার মতো জায়গায় ছিলেন না তৃণমূল প্রার্থী। অথচ এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার উপরেই ভরসা করেছিলেন সৌমিক। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএম এবং কংগ্রেস ছেড়ে আসা দুই সংগঠককে নিয়েই ভগীরথপুর এবং সারাংপুর েজমি তৈরি করেছিলেন তিনি। তাহলে সেখানে পায়ের তলা ছথেকে মাটি সরে গেল কেন?

উত্তরটা দিচ্ছেন স্থানীয় সিপিএমের এক কর্মী— ‘‘বোমা মারলে পাল্টা বোমা ছুড়তে জানে ডোমকল, সেখানে চোখ রাঙিয়ে কোনও কাজ হয় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE