১৯ মে ফল বেরনোর পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি। ফাইল চিত্র।
৩৩-এর মধ্যে ২৭ পেয়ে সাফল্য ধরে রাখলেন তিনি।
বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের ঢঙে বছর দু’য়েক আগে তাঁকে অন্য মেজাজে দেখেছে রাজ্য। সিপিএমের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা মজিদ মাস্টার (মজিদ আলি) শাসনে ঢুকলে মহিলাদের আঁশ-বটি নিয়ে তৈরি আছে বলে মন্তব্য করেছেন। সিপিএমের কেউ চা দিলেও খাবেন না, ওদের বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানে যাবেন না— এ ধরনের ফতোয়া জারি করে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গত কয়েক মাস ধরে কোনও রকম বিতর্কে না জড়িয়ে স্রেফ সাংগঠনিক কাজে মন দিয়েছিলেন। যার ফল মিলেছে হাতেনাতে, ভোটের ফলে।
পুরনো বিতর্কের কথা তুলতেই বললেন, ‘‘ও সব ভুল কথা বলেছিলাম। তাতে মানুষ দূরে সরে যায়। দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাকে বললেন, বালু (জ্যোতিপ্রিয়র ডাকনাম) এমন কিছু বলিস না যাতে মানুষ দুঃখ পায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভেবে দেখলাম সত্যিই তাই। আমি স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের ছেলে। ভাল ব্যবহার বা ভালবাসার বিকল্প কখনও কটূ কথা, পেশি শক্তি হতে পারে না।’’
ষোলো বছর আগের কথা। তখন রাজ্য তো বটেই, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ছিল সিপিএমের লাল দুর্গ। ২০০০ সালের বন্যা বিধস্ত জেলায় বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ছুটে বেরিয়েছেন মধ্য তিরিশের তরুণ জ্যোতিপ্রিয়। কখনও সিপিএমের ঘাড় ধাক্কা খেয়েছেন। কখনও গুলি থেকে রক্ষা পেয়েছেন অল্পের জন্য।
গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রে জয় তাঁকে দিদির বিশ্বাসভাজন করে তোলে। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে গাইঘাটা আসনটি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে হাবরা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ান বালু। জেতেন। এ বারও জিতেছেন। শুধু তা-ই নয়, গতবারের ২৬ হাজার ভোটে জয়ের ব্যবধান এ বার বাড়িয়ে প্রায় ৪৬ হাজারে নিয়ে গিয়েছেন।
তা ছাড়া, দলের জেলা সভাপতি হিসাবে ২৭টি আসনে জয়ের কারিগরও তিনি, মানছেন দলের একটা বড় অংশই। এর মাঝে বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচন, বিধাননগর পুরনিগমের ভোট— সবেতেই সাফল্য পেয়েছেন মমতার লড়াকু সৈনিক বালু।
এই জেলায় অবশ্য এক সময়ে তাঁকে ‘বহিরগত’ তকমা শুনতে হয়েছে। একদা লাল দুর্গ বর্ধমানের মন্তেশ্বরে জন্ম জ্যোতিপ্রিয়র। ১৯৫৭ সালের পরে এই প্রথম মন্তেশ্বরে জিতেছে তৃণমূল। বাম আমলে তিনি যখন এই জেলায় দাপাচ্ছেন, তখন মন্তেশ্বরে হামলা হয়েছিল তাঁর বাড়িতেও।
এ বার নিজে অবশ্য ‘বদলা’র পথে হাঁটতে চান না। শনিবারই তৃণমূলের কিছু ছেলে অশোকনগরে কংগ্রেসের পার্টি অফিস দখল করলে তাঁর ও বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের হস্তক্ষেপে সে অফিস ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিউ ব্যারাকপুরে থানায় তৃণমূলের হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এ সব বদমাইশি করলে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। এটা আমাদের দলের সংস্কৃতি নয়।’’
তাঁর নামে সারদা-নারদা অভিযোগ ছিল না। দুর্নীতিরও অভিযোগ ছিল না। তবে যা ছিল, তা হল পরিশ্রম করার অদম্য শক্তি। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাবরায় ৭টি মাত্র জনসভা করলেও জেলায় করেছেন প্রায় ৫০টা! বললেন, ‘‘জেলায় যখন আমাদের যে প্রার্থী কোনও সমস্যার কথা বলেছেন, ছুটে গিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা প্রচার করেছি।’’
হাবরার সেই উন্নয়নের কথাই বলছিলেন, তাঁর হাত ধরে দলে আসা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অন্যতম সৈনিক নীলিমেশ দাস, হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy