Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
উলুবেড়িয়া পূর্ব

‘দেওয়ালে নেই, হৃদয়ে আছি’ বলছেন জোটপ্রার্থী

উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোডের পাশে মসজিদতলা থেকে গঙ্গার পাড় পর্যন্ত মূল রাস্তার ধারে গঙ্গার নিকাশি নালার হাল দেখলেই মালুম হয় জগদীশপুরের অনুন্নয়নের ছবিটা। পুতিগন্ধময় নালায় জমে আছে বর্জ্য। রাস্তার কিছু অংশ কংক্রিটের, বাকিটা ইট পাতা। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এটি।

প্রচারের ফাঁকে চায়ের আসরে সিপিএম প্রার্থী সাবির আহমেদ মোল্লা।

প্রচারের ফাঁকে চায়ের আসরে সিপিএম প্রার্থী সাবির আহমেদ মোল্লা।

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭
Share: Save:

উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোডের পাশে মসজিদতলা থেকে গঙ্গার পাড় পর্যন্ত মূল রাস্তার ধারে গঙ্গার নিকাশি নালার হাল দেখলেই মালুম হয় জগদীশপুরের অনুন্নয়নের ছবিটা। পুতিগন্ধময় নালায় জমে আছে বর্জ্য। রাস্তার কিছু অংশ কংক্রিটের, বাকিটা ইট পাতা। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এটি। পুরসভার পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পটি হয়েছে এখানেই। অথচ এলাকাবাসীর অভিযোগ, অধিকাংশ বাড়িতেই জলের সংযোগ দেওয়া হয়নি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকায় সরকারি চাকরি পাননি কেউই। শিক্ষিত ছেলেরা তাই উপার্জনের জন্য জরির কাজকেই বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে কাজে মন্দা চলছে। ফলে জরির কাজের উপরে নির্ভরশীল পরিবারগুলির আর্থিক সঙ্কট বেড়েছে।

বুধবার এখানে প্রচারে এসে গ্রামবাসীদের এমন সব অভিযোগেরই মুখে পড়তে হল উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের সাবির আহমেদ মোল্লাকে। প্রসঙ্গত, গত ছ’বছর ধরে উলুবেড়িয়া পুরসভা তৃণমূলের দখলে। এলাকার বিধায়কও তৃণমূলের। ফলে গ্রামবাসীদের সমস্ত অভিযোগ শোনার পর তার অভিমুখ শাসক দলের দিকেই ঘুরিয়ে দিলেন সাবির। দলের নেতা-কর্মীরা অনুন্নয়নের দায় চাপিয়ে দিয়েছেন শাসক দলের ঘাড়েই।

এ দিন প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী-সমর্থকেরা। হাঁটতে হাঁটতে প্রার্থী পৌঁছে গেলেন বাঁশতলায়। খোলা আকাশের নীচে মাটির হেঁশেলে রান্না চাপিয়েছিলেন গৃহবধূ। প্রার্থীর সঙ্গে আসা স্থানীয় কংগ্রেস নেতা কুতুবুদ্দিন মাথা ঝুঁকিয়ে বধূকে বললেন, ‘‘এ বার কিন্তু আমি হাতের জন্য ভোট চাইতে আসিনি। এ বার কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্নে ভোট দিতে হবে।’’ সম্মতির ইঙ্গিত বধূর। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সাবির। মুখে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি। কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘’৩৪ বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। প্রথমবার কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্নের জন্য ভোট চাইছি। কুছ পরোয়া নেই। তৃণমূলকে হটাতেই হবে।’’ নিজে পুরসভার কাউন্সিলর। একইসঙ্গে বিরোধী দলনেতাও। আপনাদের বামফ্রন্টও তো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। তারপরেও এত অভিযোগ কেন? প্রশ্ন শুনে হাঁটতে হাঁটতেই সাবিরের উত্তর, ‘‘এই যে ইটের রাস্তায় হাঁটছি, এটা আমাদের আমলেই করা। তারপরে আর কোনও উন্নতি হয়নি।’’ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের আব্বাস খান অবশ্য অনুন্নয়নের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘সব অভিযোগ মিথ্যা। খাল সংস্কারে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজও হয়েছে। ঢালাই রাস্তা তৈরি হচ্ছে। আসলে বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধিতা করছেন সিপিএম প্রার্থী।’’ উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে এ বার তাঁদের প্রার্থী বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফিই। জগদীশপুরে ঢুকে চোখে পড়ল কোথাও দেওয়াল ফাঁকা নেই। সবর্ত্রই তাঁর নামে ছয়লাপ। সিপিএম প্রার্থীর ঠাঁই নেই বললেই চলে।

প্রার্থীর দেওয়াল লেখায় ব্যস্ত তৃণমূলকর্মী।

সাবির অবশ্য এতে দমবার পাত্র নন। প্রচারে বেরিয়ে কোনও বাড়ি যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে কড়া নজর তাঁর। পুর এলাকার ৩২টি ওয়ার্ড জুড়ে তাঁর এলাকা। সঙ্গে রয়েছে উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ২৩টি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রথম রাউন্ডের প্রচার ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন। উল্টোদিকে যা এখনও শুরুই করতে পারেননি শাসক দলের প্রার্থী। এ দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচারের ফাঁকে এক জায়গায় গ্রামবাসীদের আমন্ত্রণে চা খেতে বসে পড়লেন সাবির। মাঠের উপরেই মাদুর পেতে বসল চায়ের আসর। চায়ে চুমুক দিয়ে সিপিএম প্রার্থীর মন্তব্য, ‘‘দেওয়ালে আমার অস্তিত্ব প্রায় নেই। তাতে কী হয়েছে। মানুষের হৃদয়ে আমার নাম। প্রতিটি বাড়িতে গিয়েই তা টের পাচ্ছি।’’

গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বলা যায় এই বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। লোকসভায় তৃণমূল পেয়েছিল ৫৮ হাজার ৭০২টি ভোট। বামফ্রন্ট ভোট পেয়েছিল ৪৩ হাজার ৯৩৫টি। কংগ্রেসের ভোট ছিল ১৩ হাজার ৯২টি। ২০১৫ সালে পুরসভা তৃণমূল দখল করলেও এখানে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যথাক্রমে পায় ৬টি এবং ৩টি আসন। লোকসভা এবং পুরসভা দু’টি নির্বাচনেই দেখা যাচ্ছে এগিয়ে আছে তৃণমূল।

সে জন্যই কি এখনও প্রচারে নামা হয়নি?

তৃণমূলের এক কর্মীর উত্তর, ‘‘দাদার নাম যাতে সবার চোখে গেঁথে যায় সে জন্যই দেওয়ালে জোর। তবে প্রচারও শিগগিরই শুরু হবে।’’ কী বলছেন প্রার্থী স্বয়ং? সফি সাহেবের কথায়, ‘‘এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দেওয়াল লিখন ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক শেষ। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে বাড়ি বাড়ি প্রচার।’’

যদিও এখনও প্রার্থী প্রচারে না নামায় দলের বহু কর্মী-সমর্থক একটু হতাশ। এমনই এক কর্মীর কথায়, ‘‘শেষ বেলায় পথে নামলে নাকের বদলে নরুন না হয়?’’

ছবি:সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 tmc cpm congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE