Advertisement
০২ মে ২০২৪

বৈষম্য এ দেশেও, অস্কারের মঞ্চ থেকে বার্তা ‘অন্যদের’

চোখ-ধাঁধানো মঞ্চ। হরেক আলোর খেলা। সঙ্গে জমাটি নাচ-গান এবং অতি অবশ্যই পুরস্কার বিতরণী। মাঝে মধ্যে সূত্রধরের রসিকতা। বিনোদনের মশলা ঠাসা ছিল। তবু মসৃণ হল না ৮৭তম অস্কার-অনুষ্ঠানের চিত্রনাট্য। কখনও বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয় নিয়ে অস্কার কমিটিকে কোঁচা দিলেন সূত্রধর, কখনও নিজের বক্তৃতায় লিঙ্গবৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দিলেন সদ্য পুরস্কার-জয়ী অভিনেত্রী। আবার এডওয়ার্ড স্নোডেনের উপর তৈরি তথ্যচিত্র পুরস্কার পাওয়ায় বিস্ময়ে ডুবে গেল লস অ্যাঞ্জেলেসের অস্কার-প্রেক্ষাগৃহ, যার পোশাকি নাম ‘ডলবি থিয়েটার’।

উচ্ছ্বসিত। অস্কার হাতে সেরা অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর।

উচ্ছ্বসিত। অস্কার হাতে সেরা অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর।

সংবাদ সংস্থা
লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

চোখ-ধাঁধানো মঞ্চ। হরেক আলোর খেলা। সঙ্গে জমাটি নাচ-গান এবং অতি অবশ্যই পুরস্কার বিতরণী। মাঝে মধ্যে সূত্রধরের রসিকতা। বিনোদনের মশলা ঠাসা ছিল। তবু মসৃণ হল না ৮৭তম অস্কার-অনুষ্ঠানের চিত্রনাট্য। কখনও বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয় নিয়ে অস্কার কমিটিকে কোঁচা দিলেন সূত্রধর, কখনও নিজের বক্তৃতায় লিঙ্গবৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দিলেন সদ্য পুরস্কার-জয়ী অভিনেত্রী। আবার এডওয়ার্ড স্নোডেনের উপর তৈরি তথ্যচিত্র পুরস্কার পাওয়ায় বিস্ময়ে ডুবে গেল লস অ্যাঞ্জেলেসের অস্কার-প্রেক্ষাগৃহ, যার পোশাকি নাম ‘ডলবি থিয়েটার’।

এ ধরনের চমক অবশ্য অস্কার-মঞ্চের জন্য বরাদ্দ থাকেই। গত বারও যখন হোয়াইট হাউস থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে ‘আরগো’-র নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট-পত্নী মিশেল ওবামা, তখনও লহমার জন্য থমকে গিয়েছিল ডলবি থিয়েটার। অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এটা কি নিছকই চমক? না কি অন্য কোনও রাজনীতি রয়েছে? একই ঘটনা এ বারও। শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের শিরোপা পেল লরা পোয়েত্রার ‘সিটিজেন ফোর’। মঞ্চে পুরস্কার নিতে এলেন পরিচালিকা। শুধু তা-ই নয়। এডওয়ার্ড স্নোডেনের সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। পাশ থেকে হালকা খোঁচা সূত্রধরের, “কী যেন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করায় আজ আসতে পারেননি স্মোডেন!”

খোঁচার শুরুটা অবশ্য অনুষ্ঠানের গোড়া থেকেই। সূত্রধর নীল প্যাট্রিক হ্যারিস উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই বললেন, “টুনাইট উই অনার হলিউডস বেস্ট অ্যান্ড হোয়াইটেস্ট, সরি ব্রাইটেস্ট (আজ রাতে আমরা শ্রেষ্ঠ এবং শ্বেতাঙ্গদেরই, থুড়ি সম্ভাবনাময়দেরই সম্মান জানাব)।” নিরীহ রসিকতা। কিন্তু যাঁরা জানেন, তাঁরা বিলক্ষণ বুঝেছেন প্যাট্রিকের ইঙ্গিত। কিছু দিন আগেই ঘোষণা হওয়া ‘গোল্ডেন গ্লোব’ পুরস্কারের মতো এ বছর অস্কারেও প্রতিটি বিভাগেই কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধিত্ব যে চোখে পড়ার মতো কম, তা অনেকেই খেয়াল করেছেন।

অস্কার-মঞ্চে জুলি অ্যান্ড্রুজ। ‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’ ছবিটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে
এ দিন বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জুলি। ১৯৬৫ সালে ৫টি অস্কার জিতেছিল ছবিটি।

সেই শুরু। এর পরের কয়েক ঘণ্টায় একাধিক বার ধাক্কা খাবে অস্কারের বিনোদনী-চিত্রনাট্য। যেমন ‘বয়হুড’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার নিতে এসে প্যাট্রিসিয়া আর্কেট বলে যাবেন, “এই সম্মান প্রত্যেক মহিলার জন্য। ...আমরা এত দিন সকলের সমানাধিকারের জন্য লড়েছি। এখন আমেরিকার মাটিতে আমাদের (মেয়েদের) সমানাধিকার পাওয়ার লড়াই।” কথা শেষ না হতেই উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেবেন বিহ্বল মেরিল স্ট্রিপ। বিশ্ব জানবে, লিঙ্গবৈষম্য আজও স্বমহিমায়। আমেরিকাতেও!

এতেই শেষ নয়। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ, শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্যের অস্কার পাওয়ার পর মেকিস্কোর আলেহান্দ্রো গোনজালেজ ইনিয়ার্রিতুর ছবি ‘বার্ডম্যান’ যখন সেরা ছবির শিরোপা পেতে চলেছে, তখন রাজনীতির চড়া সুর প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত সকলের এবং লাইভ সম্প্রচারের দৌলতে তামাম টিভি দর্শকের কান এড়াল না। নাম ঘোষণা করতে গিয়ে দু’বারের অস্কারজয়ী অভিনেতা শন পেন একটু থামলেন। নাম লেখা কাগজটার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন, “এই সারমেয় সন্তানকে গ্রিন কার্ড দিল কে!” প্রেক্ষাগৃহে তখন এক অলৌকিক নৈঃশব্দ। এটা কি নিছকই ঠাট্টা? মেক্সিকোর মানুষ আলেহান্দ্রোই বা এই ঠাট্টাকে কী ভাবে নেবেন? তার পরেই হাসিতে ফেটে পড়েন শন। ঘোষণা করেন, “এ বারের অস্কার জয়ী আলেহান্দ্রো ইনিয়ার্রিতু।” পরিচালক অবশ্য ‘ঠাট্টার’ জবাব দিতে কসুর করেননি। প্রথাগত ‘ধন্যবাদ, অ্যাকাডেমি কমিটি’ ইত্যাদি বাঁধা বুলির পরেই বললেন, “এ দেশে মেক্সিকোর যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বলছি, এখানে সম্মান নিয়ে থাকুন। মনে রাখবেন, এটা অভিবাসীদেরই দেশ।” সুকৌশলে আরও মনে করিয়ে দিলেন ‘গ্র্যাভিটি’ ছবিটির জন্য গত বার শ্রেষ্ঠ পরিচালক হয়েছিলেন আর এক মেক্সিকান। আমেরিকার বাইরে থেকে আসা ‘অন্যদের’ ঠেকাতে এ বার কি অস্কারে নতুন অভিবাসন-নীতি আনা হবে, প্রশ্ন আলেহান্দ্রোর।

এমন যুদ্ধের আবহেই হয়তো শেষ হতে পারতো অনুষ্ঠান। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল আর এক লড়াই। প্রতিকূলতাকে হারানোর লড়াই। সেই তাগিদকেই কুর্নিশ জানালো অস্কার। ‘দ্য থিয়োরি অব এভরিথিং’ ছবিতে পক্ষাঘাতগ্রাস্ত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেলেন এডি রেডমাইন। আবার ‘স্টিল অ্যালিস’ ছবিতে অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত এক অধ্যাপিকার ভূমিকায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা জিতে নিলেন জুলিয়ান মুর।

এ সবের মাঝে অবশ্য ‘সাউন্ড অব মিউজিকের’ ৫০ বছর পূর্তির কথা ভোলেনি হলিউড। রবিবার লেডি গাগার কণ্ঠে আরও এক বার সে ছবির গানগুলো শুনে নিল ডলবি থিয়েটার। এর মাঝেই ফের চমক। মঞ্চে উঠে এলেন ছবির ‘মারিয়া’ জুলি অ্যান্ড্রুজ। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি, চোখের কোণে জল। ইতিহাস বলছে, ৫০ বছর আগে ‘সাউন্ড অব মিউজিক’ পাঁচটি অস্কার পেলেও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারটা সে যাত্রা অধরাই রয়ে গিয়েছিল জুলির!

ছবি: এ এফ পি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

oscar 2015 birdman Eddie Redmayne Julianne Moore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE