আমার প্রথম মাতৃত্ব খুবই অল্পবয়সে। আমিও ছোট, আমার মেয়েও সময়ের আগেই জন্মেছিল। ওই যে, গর্ভস্থ সন্তান পা ছুঁড়ে পেটে ধাক্কা দেয়— এ সব টের পাইনি। মনে হয়েছিল, অন্তঃসত্ত্বা হতে না হতেই মা হয়ে গেলাম! কিছুই বুঝলাম না। তখন থেকেই ভাবনায় ছিল, দ্বিতীয় বার মা হব। আমার বড় মেয়ে এখন আট। একটু বড় হয়েছে। নিজেকে সামলাতে শিখেছে। তাই যখন শরীরে নতুন প্রাণের স্পন্দন টের পেলাম, বিষয়টি মেনে নিয়েছি। হ্যাঁ, এ বার মাতৃত্ব চুটিয়ে উপভোগ করেছি। তাল মিলিয়ে কাজ করেছি। নিজে গাড়ি চালিয়ে যাতায়াত করেছি। কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। এখন মনে হচ্ছে, এ বার ভালয় ভালয় সব কিছু মিটুক। আবারও চেনা ছন্দে, কাজের দুনিয়ায় ফিরতে হবে।
মুখে বলছি বটে উপভোগ করেছি, বাস্তবে ততটাও নয়। দ্বিতীয় বার মা হওয়ার কথা ঘোষণার পর কম কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে! একটা করে ছবি দিয়েছি, বেনো জলের মতো মন্তব্য আছড়ে পড়েছে। কম বেশি একটাই প্রশ্ন সকলের, আমার স্বামী কোথায়? তাঁর সঙ্গে কি আবার ঝামেলা হয়েছে? একটা সময় সত্যিই আমাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সে কথা কোনও দিন লুকোইনি। মেয়ের মুখ চেয়ে আমরা সে সব মিটিয়েও নিয়েছি। তার পর দ্বিতীয় মাতৃত্বের সিদ্ধান্ত। আমার স্বামী প্রচারবিমুখ। ফলে, সমাজমাধ্যমেও তাঁকে দেখা যায় না। এ সব কি জোর করে কাউকে দিয়ে করানো যায়? তার মানেই স্বামীর সঙ্গে আমার ঝামেলা! এক এক সময় মনে হয়, আগামীতে আমার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে না প্রশ্ন তৈরি হয়।

মানসীকে ঘিরে সহ অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, পল্লবী শর্মা। ছবি: ফেসবুক।
দ্বিতীয়ত, শ্বশুর-শাশুড়ি খুবই অল্পবয়সে মারা গিয়েছেন। ফলে, যে কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমার বাবার বাড়ির সদস্যদের উপস্থিতি। আমার সাধের সময়েও তাই-ই। তাতেও যেন সকলের সমস্যা। প্রশ্ন ওঠে, কেন শ্বশুরবাড়ি থেকে সাধ খাওয়ানো হয়নি! আনন্দবাজার অনলাইনের মারফত নিন্দকদের জানাতে চাই, ওঁদের কী করে ফিরিয়ে আনব বলুন তো? এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা, সাধভক্ষণ অনুষ্ঠানে সাধারণত ছেলেরা আমন্ত্রিত থাকেন না। এমনটাই রীতি। আমাদের বাড়িতে অন্তত সেটা পালন হয়। আমার বাবা পর্যন্ত ছিলেন না। সেখানে বরকে কী করে নিমন্ত্রণ করি? এ সব নেটাগরিকদের কী করে বোঝাই!
আরও পড়ুন:
ওই জন্য এ সব আর গায়ে মাখি না। যাঁদের বলার স্বভাব তাঁরা বলবেনই। আমায় পথ চলতে হবে— এই আপ্তবাক্য মেনে দ্বিতীয় বার মা হওয়ার যাবতীয় ধাপ অনুভব করলাম। শিশুর নড়াচড়াও। চিকিৎসক ১৯ মার্চ সময় দিয়েছেন। তার আগে ঈশ্বরের কাছে আন্তরিক প্রার্থনা, ছেলে হোক বা মেয়ে, সুস্থ ভাবে জন্ম নিক। আমি যেন তাকে প্রকৃত ‘মানুষ’ গড়ে তুলতে পারি।