আশির দশকের কাশ্মীর। ভিড় সিনেমা হলের সামনে।
ব্রডওয়ে, রিগ্যাল, নীলম, প্যালাডিয়াম—এক সময়ে শ্রীনগরে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে কার্যত স্বর্গ ছিল এই হলগুলি। প্রায় দু’দশক পরে ফের বড় পর্দায় সিনেমা দেখার সুযোগ পেতে পারেন ভূস্বর্গের বাসিন্দারা।
১৯৮০-এর দশকে ১৫টি সিনেমা হল ছিল কাশ্মীরে। তার মধ্যে ৯টি ছিল শ্রীনগরে। জঙ্গিদের হুমকি আর হামলার মুখে বন্ধ হয়ে যায় সেগুলি। প্রায় দু’দশক পরে ফের কাশ্মীরে সিনেমা হল খুলতে উদ্যোগী হয়েছেন শ্রীনগরের ‘দিল্লি পাবলিক স্কুল’-এর কর্তা বিজয় ধর।
এক সময়ে ব্রডওয়ের মালিকানা ছিল বিজয়েরই হাতে। ব্যক্তিগত ভাবে প্রবল সিনেমাপ্রেমী তিনি। মাসে এক বার দিল্লি গিয়ে সিনেমা দেখে আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের অন্য প্রান্তে তরুণ-তরুণীরা বিনোদনের যে সুযোগ-সুবিধে পান তা এখানেও পাওয়া উচিত। কেউ যদি আপত্তি করেন বা সিনেমা না দেখতে চান, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু যাঁরা সিনেমা দেখতে চান তাঁদের এই সুযোগ-সুবিধে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।’’
আরও পড়ুন: মোদীর ‘জোশ’ এখন বলিউডে
১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে সিনেমা, বার ও বিউটি পার্লারের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে জঙ্গিরা। তাদের দাবি ছিল, এগুলি ‘ইসলাম-বিরোধী’। কেউ তাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিনেমা, বার, বিউটি পার্লারে গেলে খুন করার হুমকিও দেয় তারা। ফলে ধীরে ধীরে সিনেমা হলগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। ১৯৯০-এর মধ্যে প্রায় সব হল বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯৬ সালে সরকারের আশ্বাস পেয়ে তিনটি হলের মালিকেরা ফের সিনেমা দেখানো শুরু করেন। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে রিগ্যাল সিনেমায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এক জন দর্শক নিহত হন। ফলে ফের ধীরে ধীরে হলগুলির দরজা বন্ধ হতে শুরু করে।
এখনও সিনেমার বিরুদ্ধে প্রচার চালান হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক। কিন্তু বিজয় ধর তাতে কান দিতে নারাজ। তাঁর মতে, ‘‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ শুরু করলে কোনও কাজই সফল হতে পারে না।’’
কাশ্মীরে সিনেমা নিয়ে হইচইয়ের দিনগুলি স্পষ্ট মনে আছে শ্রীনগরের বাসিন্দা মনজুর খানের। তাঁর কথায়, ‘‘অমিতাভ বচ্চনের কালিয়া দেখতে গিয়ে টিকিট পাইনি। মাঝরাত পর্যন্ত টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বাড়ি ফিরে বাবার কাছে বকুনি খেয়েছিলাম।’’ এখন ডাল লেকে এক হাউস বোটের মালিক মনজুরের স্মৃতিতে আছে রিগ্যাল, প্যালাডিয়ামের এমন অনেক মুহূর্ত। তিনি জানাচ্ছেন, প্যালাডিয়ামে ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত। অনেক সিনেমা দিল্লির আগেই কাশ্মীরের হলে চলে আসত।
বিজয় ধর সফল হলে ফের ভূস্বর্গে বড় পর্দায় দাপিয়ে বেড়াতে পারবেন দেশি-বিদেশি তারকারা। আশায় বুক বাঁধছেন মনজুরের মতো অনেক সিনেমাপ্রেমী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy