হ্যাঁ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন। উনি যেভাবে ফেলুদাকে রিড করেন সেই জায়গা থেকে কথাটা ঠিক। আমি ওঁর বক্তব্যকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দেখুন, ফেলুদার গল্প লেখা যখন শুরু হয়, তখন ফেলুদার বয়স ২৭। এ বছর ফেলুদা প্রকাশনার ৫০ বছর। তা হলে হিসেব অনুযায়ী ফেলুদার বয়স এখন ৭৭ বছর। আর আমার তো ৬০। (মুচকি হেসে) আই অ্যাম পারফেক্ট !
• কিন্তু আপনার লুক দেখে আবীর চট্টোপাধ্যায়ও বলেছেন আপনাকে ফেলুদা মানাচ্ছে না।
তাই বলেছে বুঝি? আমি জানতাম না। এখন শুনলাম (চারমিনার নয়, বিড়ি ধরালেন)। জানেন, ‘বাদশাহী আংটি’-র সময় অনেকে এসে আমায় বলেছিল আপনি যখন ফেলুদা করছেন না, তখন ‘বাদশাহী আংটি’ দেখব না। আবীরকে ঠিক ফেলুদা-ফেলুদা মনে হচ্ছে না। আমি মিডিয়ায় বলার জন্য বানিয়ে বলছি না কিন্তু। আমি প্রত্যেককে বলেছিলাম ‘বাদশাহী আংটি’-র সময় ফেলুদা ব্যাঙ্কে চাকরি করতে করতে গোয়েন্দাগিরি ধরেছে। সেখানে আবীরের লুকটা একদম ঠিক। আরে, সময় আর গল্পটাকেও তো দেখতে হবে। শুধু সমালোচনা করলে তো হবে না।
• আচ্ছা, এ বারে তো ‘সমাদ্দারের চাবি’, ‘গোলকধাম রহস্য’ দু’টো গল্প নিয়ে ‘ডবল ফেলুদা’। এখানেও কি ফেলুদার হাতে সিগারেট?
এ বার কিন্তু দু’টো গল্পেই ফেলুদা অনেক কম সিগারেট খেয়েছে। আসলে ফেলুদা তো বাচ্চারাও দেখে। তাদের যেন দেখে এটা মনে না হয় যে ধোঁয়ায় টান দিলে তবেই ফেলুদার বুদ্ধি বেরোয়। বুদ্ধির সঙ্গে সিগারেটের কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই। সচেতন ভাবে বাবু এই সিগারেটের অংশটা কম রেখেছে।
• আপনি তো ফেসবুকও করেন না। মোবাইল অনবরত বেজে যায়। হোয়াটসঅ্যাপেও খুব একটা উত্তর মেলে না। ছবিতে ফেলুদাও কি তাই?
প্রথমে ফেলুদার কথা বলি। ফেলুদাকে মোবাইল-ইন্টারনেট এ সবের বাইরে রাখা হয়েছে। ‘ডবল ফেলুদা’য় অন্য কোনও চরিত্র হয়তো মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, কিন্তু ফেলুদা নয়। ফেলুদার মগজই শেষ কথা। এ বার আমার কথা বলি। ছোটবেলা থেকে ভাবতাম ফেলুদা চরিত্রটা আমাকে করতেই হবে। অদ্ভুত একটা নেশায় পেয়ে বসেছিল। আমার কিন্তু ফেলুদার জন্যই সিগারেট খাওয়া শুরু। আর ফেসবুক করার সময় নেই আমার। দিনে ১৫০টা ফোনের মধ্যে ৯০টা ভুলভাল ফোন আসে। কেউ তোপসে চরিত্র করতে চায়। কেউ স্ত্রীর অসুখ বলে টাকা চায়। কী করব বলুন! তবে কেউ দরকারি মেসেজ করে রাখলে আমি উত্তর নিশ্চয়ই দিই।
• আবার ফেলুদাতেই ফিরি। আপনার মতে সেরা ফেলুদা কে?
দেখুন, যত দূর আমি জানি সত্যজিৎ রায়ও তাঁর মনের মতো ফেলুদা খুঁজে পাননি।
• মানে?
সত্যজিৎ রায় চেয়েছিলেন এমন এক ফেলুদা যার মধ্যে বরুণ চন্দের হাইট, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বর, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের লুক আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় থাকবে — এও কি সম্ভব? যত জনকে ফেলুদা হিসেবে দেখেছি তার মধ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই সেরা ফেলুদা। তবে আমার সত্যিকারের ফেলুদা আর কেউ নন, সত্যজিৎ রায় স্বয়ং।
• ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর পর ছবির টাইটেল কার্ডে আবার ফেলুদা...
ছবির নাম ‘ডবল ফেলুদা’। এটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার। ফেলুদার ৫০ বছর বলে দেখছি ইউনিটে সবাই টগবগ করে ফুটছে। ফেলুদার ট্রিবিউটে ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’–এর ক্লিপিংস থাকছে।
• আপনার ভয় করছে না?
ভয় করবে কেন? আমার তো এনার্জি দু’ গুণ বেড়ে গেছে।
• ‘সোনার কেল্লা’য় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখার পর ‘ডবল ফেলুদা’-য় লোকে আপনাকে নেবে?
(বারবার চিনি দুধ ছাড়া চা আসছে) আমার তো মনে হয় অবশ্যই নেবে। ‘ডবল ফেলুদা’ মেকিংয়ে অনেক নতুনত্বের কথা ভেবেছে বাবু। শুধু ‘সোনার কেল্লা’ বা ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ নয়, ‘বাক্স রহস্য’ থেকে ‘বাদশাহী আংটি’ সব কিছুর রেফারেন্সই ধরা থাকবে। (প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে) আরও ইন্টারেস্টিং কী জানেন, আগে ফেলুদায় অভিনয় করেছেন এমন চরিত্রদেরও এ বার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সে কারণেই ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় থাকছে। রাজেশ শর্মাকেও দেখা যাবে। একটা মনতাজ মতো করা হবে। এটা আর শুধু ফেলুদার ছবি নয়, ফেলুদার পঞ্চাশ বছরের গল্প ধরা থাকছে সেলুলয়েডে।
‘বাদশাহী আংটি’তে আবীর চট্টোপাধ্যায়।