Advertisement
E-Paper

কড়ি দিয়ে কেনা হৃদয়ের গল্প

চারটে গল্পকে এক তারে বেঁধেছে ‘রংবেরঙের কড়ি’। তাতে যেমন রয়েছে আবেগের টানটান মূর্ছনা, তেমন রয়েছে লয়-ছন্দের মাপ মানা গতি। প্রতিটা গল্পেই মানুষ, তার জীবন, তার যাপন, তার বিরহ, প্রেম, অপ্রেম, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, স্নেহ, বন্ধন আর মায়ার নিরিখে উজ্জ্বল।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪১

প্রথম ছবি ‘হৃদমাঝারে’র পর দ্বিতীয় ছবি বানাতে সময় নিয়েছেন পরিচালক রঞ্জন ঘোষ। কিন্তু বিরতি সার্থক। অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও বাংলা সিনেমায় নিজের ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ‘রংবেরঙের কড়ি’ তার প্রমাণ।

চারটে গল্পকে এক তারে বেঁধেছে ‘রংবেরঙের কড়ি’। তাতে যেমন রয়েছে আবেগের টানটান মূর্ছনা, তেমন রয়েছে লয়-ছন্দের মাপ মানা গতি। প্রতিটা গল্পেই মানুষ, তার জীবন, তার যাপন, তার বিরহ, প্রেম, অপ্রেম, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, স্নেহ, বন্ধন আর মায়ার নিরিখে উজ্জ্বল। আবার প্রতিটা গল্পের শিরদাঁড়া হয়ে উঠেছে টাকা! ফলে রঙের প্রিজম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকে যে নজরেই দেখা হোক না কেন, চোখে পড়বে লোভ, বিনিময়, স্বার্থ, হতাশা, মৃত্যু! অনেক দিন পর এত মানবিক একটা বাংলা ছবি দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকতে ইচ্ছে করে...

প্রথম গল্পে অরুণিমা ঘোষ এবং সোহম এক দরিদ্র আদিবাসী দম্পতি। নিত্য খটাখটি, অশান্তি এড়াতে তারা বিচ্ছেদে উদ্যত। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রটি এক সরকারি মুরুব্বির। তার কাছেই আসে ওই দু’জন। কিন্তু আইন বলে, বিচ্ছেদ করতেও টাকার শরণ নেওয়া দস্তুর! কষ্টের উপার্জন অন্যের হাতে দিয়ে আরও কষ্টের আয়োজন করবে কি এই দম্পতি? নাকি ফিরে যাবে মায়ার ঘরে? তাই নিয়েই এই গল্প। বড় মিষ্টি বাঁধুনি গল্পটার। সঙ্গে হিউমরও রয়েছে যথাযথ পরিমিতিতে। অরুণিমার অভিনয় মন ভরিয়ে দেয়। সোহম তুলনায় খানিক আড়ষ্ট। এই ধরনের কোনও চরিত্রে তিনি এর আগে তেমন কাজ করেননি বলেই হয়তো...

পরের গল্পেও অরুণিমার ভূমিকা প্রেয়সীর। তবে এই গল্পে সেই প্রেয়সীর জীবনে দুই পুরুষ। এক, তার বিবাহিত জীবনের আগের প্রেমিক। দুই, তার প্রৌঢ় স্বামী। এই দুই চরিত্রে দেখা গেল অর্জুন চক্রবর্তী এবং চিরঞ্জিৎকে। সাধারণ পরিবারের মেয়ে হলেও তার বিয়ে হয় ধনী ইট ভাটার মালিকের সঙ্গে। বয়স্ক সেই স্বামী তার প্রতি ভীষণ যত্নবান। কিন্তু মেয়েটি কি ভুলতে পারে তার আগের প্রেমিককে? আর আগের প্রেমিক যে তার বর্তমান স্বামীর আশ্রিত ভাই! সম্পর্কের জটিলতা এবং টাকার সমীকরণে গল্পটির বুনোট বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু এই অংশের চিত্রনাট্য ততটাও জোরদার নয়। গল্পের অন্যতর উত্তরণের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।

তৃতীয় গল্পটি সদ্য চাকরি হারানো এক যুবক (ঋত্বিক চক্রবর্তী), এক দালাল (ধী মজুমদার) এবং এক যৌনকর্মীকে (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) নিয়ে। শুধু শরীরের ওমটুকুই কি সব? মনের সঙ্গে মনের পরতে মিশে থাকা উষ্ণতাতেও তো কিছুটা আশ্রয় থাকেই... অন্তত সব হারানো মানুষের কাছে। ঋত্বিকের চরিত্রটি এখানেই মিলে যায় ঋতুপর্ণার সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও যে বর্ণান্ধ টাকার গন্ধ! এ গল্পে এসেছে মা-ছেলের সম্পর্কেরও একটা জটিল সমীকরণ। তবে চলনে কিছুটা প্রেডিক্টেবিলিটি রয়েছে। সেটুকু কাটানো গেলে স্বস্তি বাড়ত। ধী এবং ঋত্বিকের অভিনয় অবশ্য বেশ ভাল।

রংবেরঙের ক়়ড়ি

পরিচালনা: রঞ্জন ঘোষ

অভিনয়: ঋতুপর্ণা, অরুণিমা, চিরঞ্জিৎ,
খরাজ, সোহম, ঋত্বিক,
অর্জুন, ধী, ঋতব্রত

৬.৫/১০

শেষ গল্পটি হৃদয়ে রক্তপাত ঘটানোর মতো! এখানেও মা-ছেলের সম্পর্ক। তবে এ গল্পে ভোগ নেই। রয়েছে ত্যাগের কাহন। হা-হুতাশ। ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। মন ভরে যায় শীর্ষ রায়ের ক্যামেরার ব্যবহারেও। তবে এ গল্পটি আর ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে হল না... দর্শক হলে গিয়েই প্রত্যক্ষ করলে ভাল।

কিছু বিচ্যুতি রয়েছেই। যেমন গল্পগুলোর সঙ্গে রঙের যোগাযোগ খুব স্পষ্ট ব্যাখ্যা পায়নি (প্রথম গল্পের রং যেমন লাল বা শেষ গল্পটি সাদা)। তার দর্শন হয়তো মনোগ্রাহী, তবে মরমে পশিলে তবে তো! কোথাও কোথাও আবার সেন্টিমেন্টের ব্যবহার বড়ই বেশি।

কিন্তু সব মিলিয়ে গোটা ছবিটা এমন একটা সম্পূর্ণতা দেয়, যাকে ঠিক অগ্রাহ্য করা যায় না।

Rong Beronger Korhi Bengali film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy