এর পর?
তাল ছাড়া গান হয়না তাই পরবর্তীতে তাল এবং নজরুলগীতির তালিম হয় ধ্রুব কাকু ( বিশ্বাস ) এর কাছে | পুরাতনী শিখেছি স্যার তিমিরবরণ ঘোষের কাছে। কীর্তন শিখেছি শ্রীমতি কঙ্কণা মিত্র ও গুরুমা সরস্বতী দাসের কাছে। ওঁর সামনে বসে শিখতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করি। এটা আমার সারা জীবনের পাওনা। আর এ বিষয়ে শ্রীখোল এর তালিম করেছি শ্রী গৌতম ভট্টাচার্যর কাছে | পন্ডিত শঙ্কর ঘোষালের কাছে তালিম করেছি নজরুলগীতির|
আপনি তো রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী?
হ্যাঁ। রবীন্দ্রভারতীতে গান নিয়ে পড়াশোনা করেছি। ভোকাল মিউজিক সাবজেক্ট ছিল। সব কিছু শিখতে হয়েছে। তবে তখন পুরাতনী গান, কীর্তন গানের কোনও ধারণা ছিল না। এখানে একটা মজার গল্প আছে।
বলুন প্লিজ...
মাধ্যমিকে আমার অ্যাডিশনাল সাবজেক্ট মিউজিক ছিল। সেখানে একটা পদাবলী কীর্তন গাইতে হত। ওটা সিলেবাস। স্যরের কাছেই ওই গানটা শিখেছিলাম। প্রথমে গানটা তুলে খুব আনন্দ হয়েছিল। ভেবেছিলাম, গানের মধ্যে এতটা গল্প বলছে! তখন কেউ গান শোনাতে বললেই ওটা গাইতাম।
আরও পড়ুন, ‘অনস্ক্রিন ন্যুডিটি নিয়ে আমার সমস্যা নেই, তবে...’
তার পর?
তার পর ভোকাল মিউজিকে দেখলাম কীর্তন রয়েছে। প্রথমে যেটা শিখেছিলাম সেটা খুব সোজা ছিল। তার পর যেটা দেখলাম, এমা, এটা তো অনেক কঠিন (হাসি)!
আজ যখন এত সাফল্য এসেছে, পিছনে তাকালে কী মনে হয়?
আজ পেছনে তাকালে মনে হয় কতটুকুই বা এগিয়েছি এখনও অনেক বাকি | আমি যখন কীর্তন নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম তখন অনেকের মনে সন্দেহ ছিল যে, আদৌ কি এই বিষয় নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়? আমাকে শুনতে হয়েছিল, কীর্তন একটা সাবজেক্ট? কী হবে এটা করে? কিন্তু এখন যখন দেখি ইয়ং জেনরেশন কীর্তন শুনছে, আমার সঙ্গে গাইছে, নতুন করে শিখতে চাইছে, তখন সেটা একটা অন্য ভাললাগা তৈরি করে।
সে দিন যাঁরা সমালোচনা করেছিলেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিতে পেরেছেন তা হলে...
একটা কষ্ট ছিল ভিতরে, সেটা কমেছে। জবাব দিতে চাইলে হয়তো পারতাম না। তাঁরা ছিলেন বলেই আজ এটা সম্ভব হয়েছে।
আজও কি সমালোচনা হয়?
কোথায় সমালোচনা হয় না ? কাজ করতে গেলে তো সমালোচনা হবেই, আমি আমার প্রত্যেক শ্রোতার মতামতকে সম্মান জানাই, সংগীত কোন নির্দিষ্ট বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। সঙ্গীত একটি নিখিল চিন্তা। আমার চেষ্টা থাকে কী করে আমার পছন্দের বিষয় অর্থাৎ কীর্তনকে সব বয়সের মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে দেওয়া যায়| তবে আমার বিশ্বাস সমালোচনার মধ্যে দিয়েই কাজের সার্থকতা আসে | তবু বুঝতে পারি না কী করে গানের সুর, তাল, লয়, গায়কী ছাড়াও স্থান-কাল-পাত্র ইত্যাদি বিষয়গুলি কিছু মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে |
কীর্তন মানে কী ?
এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত| তবে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের কথায়, যত মত তত পথ | আমার গুরুশিক্ষায় আমি জেনেছি কীর্তন কথার অর্থ গুণগান।তাই আমি আমার মতো গুণগান করার চেষ্টা করি | কখনও প্রশ্ন ওঠে কীর্তন গাইতে গেলে কি তিন ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরেই গাইতে হয়? তার কম সময় গাইলে কি সেটা সঠিক অর্থে কীর্তন হয় না ? এ বিষয়ে বলতে চাই কীর্তন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় পরীক্ষার পাঠ্যসূচি অনুযায়ী নির্ধারিত ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে পরীক্ষকদের সামনে আমি সম্পূর্ণ পালা কীর্তন গেয়েছিলাম | আবার কীর্তন মানেই কি শুধুই পালা কীর্তন বা নাম কীর্তন? তা হলে পদকীর্তন কোথায় ? এ বিষয়ও জেনেছি পদকীর্তনের ব্যবহার ছাড়া পালা কীর্তন অসম্পূর্ণ| এমন বহু প্রশ্ন আছে যার উত্তর অধ্যাবসায় পাওয়া যায় | তারই চেষ্টা করি এবং খেয়াল রাখি যাতে সঙ্গীতের রূপ মাধুর্য আমার গানে বৃদ্ধি পায়| রিসেন্টলি একটা দারুণ এক্সপিরিয়েন্স হয়েছে।
শেয়ার করবেন প্লিজ...
আমি পৈলানের একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছি. যেটা বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছি, সেটা কলকাতায় দেখতে পাব ভাবিনি।
কী সেটা?
বড় ব্যানার করা। লেখা, ইদ মুবারক। খুশির ইদ। আজকের অতিথি অদিতি মুন্সি। আমি ওখানকার অনুষ্ঠান উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ দেব, ওঁরা সত্যি সত্যিই কোথাও ভেদাভেদ বন্ধ করছেন। আর তাই ধর্ম নয় প্রাধান্য দিয়েছেন সঙ্গীতকে। আর ওখানকার শ্রোতারাও সব ভুলে আনন্দ করেছেন সুরে তালে ছন্দে।
আরও পড়ুন, ‘কাস্টিং কাউচের শিকার হতে যাচ্ছিলাম আমিও’
যে সব সমালোচনা আপনার কানে আসছে, তা কি ইন্ডাস্ট্রির ভিতরেও ফেস করেছেন?
দেখুন সেই অর্থে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকিনি এখনও। তেমন কোনও প্লেব্যাক নেই আমার। ফলে বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি। দু’বছরের কেরিয়ারে ইন্ডাস্ট্রিকে চেনা যায় বলে মনে হয় না। আর ইন্ডাস্ট্রিও তো আমাদের পরিবার। ভাল মন্দ মিলিয়েই তো সব কিছু। তবে আমি যেগুলো বললাম, সেটা বৃহত্তর ইন্ডাস্ট্রির বক্তব্য। কাজের সূত্রে সকলের কাছ থেকেই আশীর্বাদ পেয়েছি। আমি সিনিয়রদের একটা কথা বলব?
নিশ্চয়ই...
আমি তো নতুন। অনেক সিনিয়র রয়েছেন। যাঁদের সাধনা, জানার পরিধি অনেক বেশি। তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমরা যারা কীর্তন গাইতে চাইছি, আমাদের সমালোচনা না করে যদি ভুল বা ঠিকের জ্ঞানটা দেন, তা হলে আমরা আরও ভাল কাজ করতে পারব।
রিয়ালিটি শোয়ের সিনিয়র বা ধরুন, যাঁরা গ্রুমিং করিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
নিশ্চয়ই তাঁদের হাত ধরেই তো নতুন পথ চলা শুরু। অভিজিত্দা, অমিতদা, রাজীবদা, মৃগনাভিদা এখনও আমার কাজের খোঁজ নেন। দোহার দলের সকলের কথাই বলব। এখনও বলেন, কেন এটা করলি? বা ওটা করতে পারিস। দোহার দলের সঙ্গে সারাজীবন যোগাযোগ থাকবে। আর দাদার কথা, কালিকাদার কথা নতুন করে আর কী বলব? দাদা সব সময় আমার মাথার উপর ছিলেন আছেন আর থাকবেন।
বিয়ের দিন অদিতি-দেবরাজ।