বহু দিন পর ফিল্মে ফিরছেন।
হ্যাঁ, অনেক দিন পর।
‘শর্টকাট’ গল্পটা বেছে নিলেন কেন?
ছ’-সাত বছর আগে এই গল্পটা লিখেছিল নচিদা (নচিকেতা চক্রবর্তী)। সুগতদা দারুণ স্ক্রিপ্ট করেছে। এ ধরনের কাজ আগে হয়নি।
আপনার চরিত্র কি কিছুটা আলাদা?
আমার চরিত্রের নাম অঞ্জু। বিশুর দিদি। বিশুর চরিত্র পরমব্রত করছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। লুকটা একদম অন্য রকম। প্রায় মেকআপ নেই। আমি এ ধরনের চরিত্র আগে করিনি। আমার কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন। নিজেকে ভাঙতে হচ্ছে।
গল্পটা কেমন?
এটা দুটো ক্লাসের গল্প। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। রাস্তাকেন্দ্রিক গল্প। আসলে নচিদার সব গানেই তো টুইস্ট পাওয়া যায়। এ গল্পটাতেও সাঙ্ঘাতিক একটা টুইস্ট আছে। ভাবা যাবে না। খুব বেশি বললে চমক চলে যাবে।
আপনাকে নিয়েই তো নচিকেতা ‘রাজশ্রী তোমার জন্য...’ গেয়েছিলেন?
(মুচকি হাসি) এটা নচিদাই ভাল বলতে পারবে।
আরও পড়ুন, ‘অনস্ক্রিন ন্যুডিটি নিয়ে আমার সমস্যা নেই, তবে...’
অনেকে কিন্তু বলেন, আপনিই সেই রাজশ্রী...
নচিদা পৌলমী, নীলাঞ্জনা, শতাব্দী— প্রচুর মেয়েকে নিয়ে লিখেছে। আমি ফিল করি। এই রাজশ্রীটা আমি হলে ভাল লাগবে। হয়তো রাজশ্রী নামের অনেকে রয়েছে, তার মধ্যে এক জন আমি। আমি কি না আমি সিওর নই। হা হা...।
‘শর্টকাট’ ছবিতে এই লুকে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে।

কখনও নচিকেতাকে জিজ্ঞেস করেননি?
জিজ্ঞেস করলে বলে, তোকে চমক দিলাম একটা। এ বার তুই ভাব (হাসি)। আমি ভাবলাম, হয়তো আমি। আবার হয়তো আমি নই। নচিদা মানুষটাই এমন। ও চমকে থাকতে ভালবাসে। আপনি ভেবে গেলেন একটা, আর গিয়ে দেখলেন আর একটা।
নচিকেতা কি প্রিয় বন্ধু?
নচিদা খুব কাছের মানুষ।
সমস্যায় পড়লে নচিকেতার সাহায্য নেন?
যে প্রবলেম সল্ভ করতে পারি না, সেটা নচিদাকে জিজ্ঞেস করি। সব সাজেশনই নচিদার থেকে নিই।
ধরুন, অনেক রাতে কলকাতার রাস্তায় বিপদে পড়লেন। প্রথম ফোনটা কাকে করবেন?
সম্ভব হলে নচিদাকেই করব। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বলে শুচিস্মিতা।
আরও পড়ুন, ‘কাস্টিং কাউচের শিকার হতে যাচ্ছিলাম আমিও’
সম্ভব নয় কেন?
(সিরিয়াস হয়ে) নচিদা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। আর ফোন বন্ধ করে রাখে। ফলে ওকে পাওয়া যাবে না।
বেশ। অভিনয়ের কথায় ফিরি। এই যে এখন জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ফাগুন বউ’-এ অভিনয় করছেন। কেমন ফিডব্যাক?
দারুণ ফিডব্যাক। রাস্তায় যেখানে লোকে দেখছে, হাত ধরে জিজ্ঞেস করছে, বিয়ের পর নায়ক-নায়িকার প্রেম কি হবে?
ইদানীং তো সিরিয়ালের কনটেন্ট নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। আপনার কী মত?
দেখুন, সিরিয়ালে টিআরপি-টা বড় বিষয়। আমার কথা হল, কনটেন্ট যা-ই হোক না কেন, লোকে কি দেখছে? খুব ভাল একটা কনটেন্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে, চার জন লোক দেখে বলল, বাহ্। কিন্তু সিরিয়ালটা চলল না। তাতে লাভ কী? এত আর্টিস্ট, এত খরচ, এত পরিশ্রম কী কাজে লাগবে, যদি লোকে না দেখে? আমার কথা হল, গল্প যা-ই হোক দর্শক যেন দেখেন।
সেলফিতে মগ্ন।

শিল্পী হিসেবে জাস্টিফাই করতে পারেন?
মাঝেমধ্যে একটু একঘেয়ে তো লাগেই। সে জন্যই অন্য রকম চরিত্রের জন্য অপেক্ষা থাকে। এই যেমন ‘শর্টকাট’-এর চরিত্রটা। আমি ‘কেয়াপাতার নৌকো’ নামের একটা ধারাবাহিক করেছিলাম। ভাগ্য না থাকলে ওই চরিত্র পাওয়া যায় না। লীনাদি (লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) আমাকে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা তো সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে কখনও কখনও তো আক্ষেপ থাকেই। আমার মনে আছে ‘অদ্ভুতুড়ে’ করার পর শকুন্তলা বড়ুয়া ফোন করে বলেছিলেন, ‘রাজু, তোর নম্বর ছিল না। তিন দিন ধরে তোর নম্বর খুঁজেছি। তার পর ফোন করছি। খুব ভাল কাজ করেছিস। দেখবি এর পর তোর অনেক অফার আসবে।’ এটা তো আশীর্বাদ। শুধু শকুন্তলাদি নন, এমন অনেকেই বলেছিলেন ‘অদ্ভুতুড়ে’র পর।
আরও পড়ুন, ‘প্রতিম ছাড়া অন্য কেউ হলে ‘আহা রে মন’ করব কি না ভাবতাম’
এই যে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে আপনাদের শুটিং করতে হয়, সমস্যা হয় না?
প্রেশার তো লাগেই। মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে উঠি। কিন্তু দু’দিন কাজ না হলে এই ফ্যামিলিকে মিস করি। এখানে তো একটা পরিবার তৈরি হয়ে যায়। কেউ খাবার আনছে, কেউ নেলপালিশ আনছে...।
দীর্ঘ ২৩ বছরের কেরিয়ারে যতটা পাওয়ার ছিল, পেয়েছেন?
না। পাইনি। অবশ্য সেখানে আমারও দোষ আছে।
কেন?
আমি কোনও দিন কিছু প্ল্যান করে করিনি। ছোটবেলায় খুব সিরিয়াস ছিলাম না। কাজ করতে হবে, নাম করতে হবে, টাকা করতে হবে— এটা ভাবিনি কখনও। এখনকার ছেলেমেয়েদের যেমন সিরিয়াস দেখি, তেমন ছিলাম না। আমি হয়তো সে ভাবে পিআর করতে পারি না। তা ছাড়া লাক হয়তো কাজ করেনি। অন্যের ঘাড়ে দোষ দেওয়ার থেকে তাই নিজেকেই দোষ দিই।
শুটিংয়ের অবসরে।

আক্ষেপ রয়েছে?
খানিকটা আক্ষেপ হয়। আরও একটু ভাল বক্তা হলে, ভাল পিআর করতে পারলে, হয়তো আরও ভাল কেরিয়ার হত।
এখনও বিয়ে করলেন না কেন?
পছন্দের পাত্র পাওয়া গেল না তো!
প্রেমে পড়েন নিশ্চয়ই?
না। আমি প্রেমেও পড়ি না।
কেন?
‘রেখো বন্ধ মনের জানলা কপাট দুয়ার, নইলেই জবরদখল’। আমি এটা বিশ্বাস করি। মনের জানলা বন্ধ রাখতে পারি আমি। ক্লাস নাইনে ছোট্ট ক্রাশ হয়েছিল। তার পর আর প্রেমে পড়া হল না। তবে আমি প্রেমে পড়তে চাই। চাই কাউকে দেখে রাতের ঘুম উড়ে যাক। কিন্তু আমার এটা হয় না।