Advertisement
E-Paper

স্মৃতির সময় ফিরিয়ে দিতে ছোটদের গল্প শোনাবেন শ্রীকান্ত-খরাজ-ব্রততীরা

মালদহ থেকে অর্ণার মোবাইলে একটা হোয়াটস্অ্যাপ আসে। একটি চার বছরের বাচ্চা ছেলে খরাজের সংলাপ অনুকরণ করে মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। কেউ আবার খেতে না চাইলে তার দিদিমা গল্পটা শোনালে সে সেটা শুনতে শুনতে খেয়ে ফেলছে।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ১৫:৩৫
শ্রীকান্ত, ব্রততী এবং খরাজ।

শ্রীকান্ত, ব্রততী এবং খরাজ।

‘‘মেঘ করা ছুটির দুপুর। ঠাকুমা ছাদে আমাদের এক গুচ্ছ ভাইবোনকে মাদুরে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে গল্প শোনাতেন। টিফিনের পরের পিরিয়ড। ক্লাসরুম ঝিমোচ্ছে। আমাদের আবদারে মাস্টারমশাই গল্প বলতে শুরু করলেন। ক্লাসরুমের জানলা বন্ধ হল। গা ছমছমে পরিবেশ।’’ স্মৃতির আবেগে পেছনে হাঁটলেন শ্রীকান্ত আচার্য। ঠাকুরমার ঝুলি। ভূত-পেত্নি। দৈত্যদানো। লালকমল নীলকমল। আলিবাবা। আলাদিন। গল্পের পাতা যেন ফুরতে চাইতো না।

সেই গল্প থেকেই স্বপ্ন। আর স্বপ্ন থেকে কল্পনা। মনোবিদরা বলেন, দিনের গল্পই রাতে স্বপ্ন হয় ফেরে। ‘‘ছোটদের এই গল্প বলার জগতটাকে আবার ফিরিয়ে দিতে চাইছি আমি বা মিউজিয়ানা কালেক্টিভ। কার্টুনে দেখা গল্পে বাচ্চারা কল্পনা করবে কোথায়? গল্প শুনতে শুনতে ভাষার সঙ্গে পরিচিতিটাও দরকার। সেই ভেবেই আমি গল্প বলার জায়গাটা ধরতে চাইছি।’’ বললেন ডিজিটাল দুনিয়ার গল্পের রূপকার অর্ণা শীল। অর্ণার লেখনি আর গানের ভক্ত তিনি সেই কলেজ থেকে। বন্ধুর গল্প বলার প্রস্তাবে তাই রাজি হয়ে যান খরাজ মুখোপাধ্যায়। ‘‘আমরা তো দিদিমা ঠাকুমার কাছে গল্প শুনে বড় হয়েছি। কই, এখন তো সে সব আর দেখি না। তাই নতুন মাধ্যমে পুরনো দিনের গল্প বলার ধরনকে ফিরিয়ে আনা অন্তত বাংলা ভাষার সঙ্গে ভাব করার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। তাই এখানে গল্প বলে খুব আনন্দ পেয়েছি।’’ বললেন খরাজ।

মালদহ থেকে অর্ণার মোবাইলে একটা হোয়াটস্অ্যাপ আসে। একটি চার বছরের বাচ্চা ছেলে খরাজের সংলাপ অনুকরণ করে মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। কেউ আবার খেতে না চাইলে তার দিদিমা গল্পটা শোনালে সে সেটা শুনতে শুনতে খেয়ে ফেলছে। এমন অজস্র ঘটনার খবর আসছে অর্ণার কাছে। কিছু স্কুলও সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে বাচ্চাদের ক্লাসরুমে গল্প শোনাবার। এ ভাবেই এগিয়ে চলেছে গল্প আসরের স্বপ্নমালা। খুব শিগগির শোনা যাবে শ্রীকান্ত আচার্যকে ‘দ্রিঘাংচু’ বেশে। আসছেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির বাবা-মায়েরা তো বাচ্চাদের গল্প শোনানোর সময় পান না। অথচ দেখা যায় মোবাইলটা হাতে ধরিয়ে দেন। তো এই মোবাইলেই যদি গেম না খেলে তারা গল্প শোনার অভ্যেস করে? এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’ উচ্ছ্বাস ব্রততীর কণ্ঠে। যিনি তাঁর ছাত্রী উর্মিমালার গল্প ‘প্যাগমপম’ বলবেন গল্পের এই অনলাইন আসরে। উচ্ছ্বসিত রেশমী সেনও। বললেন, ‘‘এই উদ্যোগে থাকতে পেরে আমার ভাল লেগেছে। আসলে গল্প বলার জায়গাটা তো চলে যাচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য সেটা করতে পেরে খুব ভাল লেগেছে।’’

আরও পড়ুন, প্রায়শ্চিত্তের টানেই পঞ্জাবের গ্রামে থাকতেন সেহমত

বাংলা ভাষাকে, সাহিত্যকে ছোটদের মনের পাতায় ধরে রাখতে চাইছে এই সংস্থা। ক্রমশ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির গল্প’ শোনা যাবে শ্রীকান্তর কণ্ঠে এই প্ল্যাটফর্মে। জগতের এক সেরা রূপকার পিকাসো বলতেন, ‘তুমি যা কিছু কল্পনা করতে পার তাই সত্যি’। সেই কল্পনার দরজাটা আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে মিউজিয়ানা কালেক্টিভ। বাঙালি শিশুর ভাণ্ডারে চ্যাং ব্যাং, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, সাত ভাই চম্পা। তেপান্তরের মাঠ পেরোতে তার একটুও দেরি হয় না। বাঙালি সব শিশুই শৈশবে এক। বড় হয়ে তারা ভিন্ন। এই এক থাকার জায়গায় ফিরে আসুক মা দিদিমার আঁচলে ছেয়ে থাকা নানান গল্প।

বাঙালি একটু বাঙালি থাকুক না!

Tollywood Celebrities
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy