কাম সেপ্টেম্বর! আর দু’মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হতে চলেছে অভূতপূর্ব এক বিপ্লবের প্রস্তুতি।
এই বিপ্লব শিল্পের। এবং তারুণ্যের। আগামী মার্চ মাসেই সিমা গ্যালারির উদ্যোগে চালু হতে চলেছে ‘সিমা সম্মান’। অভিজ্ঞতায় জারিত পক্ককেশ খ্যাতিমান শিল্পীদের মুকুটে অতিরিক্ত পালক গোঁজার জন্য নয়। বরং বাঁধভাঙা তারুণ্যকে স্বীকৃতি জানানোর নতুন উদ্যোগ। ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে যে কোনও শিল্পী তাঁর সৃষ্টি পাঠাতে পারেন এই সম্মানের জন্য। হতে পারেন তিনি প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত কোনও চিত্রকর বা ভাস্কর। কিংবা না-ও থাকতে পারে প্রথাবদ্ধ শিক্ষা। গ্রাম, মফস্সলের কোনও স্বশিক্ষিত গৃহবধূও পাঠাতে পারেন তাঁর শিল্পসৃষ্টির নমুনা। শুধু ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটি সিমা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছলেই হল! প্রাতিষ্ঠানিকতার বেড়া ভেঙে শিল্পের এই মুক্তি কি নয় বহু আকাঙ্খিত সে বিপ্লব?
জাল ছিঁড়েছে আরও বহু ভাবে। সম্মানিত হতে পারে যে কোনও শিল্প। আর শিল্প মানে নয় শুধু চিরাচরিত ভঙ্গিতে আঁকা ছবি কিংবা ভাস্কর্য। ফটোগ্রাফি, ভিডিও ইনস্টলেশন, আর্ট পারফরম্যান্স থেকে গ্রাফিক নভেল, ডিজিটাল আর্ট সব কিছু। “এখন এ দেশে তরুণ শিল্পীরা নানা মাধ্যমে কাজ করছেন, সেগুলিকেও সম্মান জানাব আমরা,” বলছিলেন সিমার ডিরেক্টর রাখী সরকার।
আগামী মার্চ মাসে শুধু পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের সিমা সম্মান বা দুই লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের দুটি বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড দিয়েই থেমে যাচ্ছে না সিমা গ্যালারি। পুরস্কারের জন্য আসা শিল্প-নমুনাগুলি বাছাই হবে দুটি পর্বে। চূড়ান্ত পর্বে যে বাছাইগুলি পৌঁছবে, সেগুলি নিয়ে শহর জুড়ে চলবে দুই সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী। গ্যালারির বেড়াজাল ভেঙে শপিং মল, পার্ক, পুরনো বাড়ি বা কফি হাউসের মতো পাবলিক প্লেসেও থাকতে পারে কোনও ইনস্টলেশন বা ভিডিও আর্ট। বিদেশে শিল্প অনেক দিনই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, আভিজাত্যঋদ্ধ গ্যালারির সীমা ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। প্রথাবদ্ধ সীমা ভেঙে মানুষের কাছে শিল্পের পৌঁছে যাওয়াই কি নয় বহু আকাঙ্খিত বিপ্লব? পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের মতে, “মানুষ এ বার বুঝবেন, শিল্পকলা শুধুই নাকউঁচু কিছু সমঝদারের জন্য নয়।”
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে শিল্পী পার্থপ্রতিম দেব এবং রবীন্দ্রভারতীর শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় আশাবাদী, এই উদ্যোগই ভবিষ্যতে কলকাতায় নিয়ে আসতে পারে আর্ট ট্যুরিজম। এ বার প্রতিযোগিতা শুধু জাতীয় স্তরে, ভারতীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ভারতীয় মানে, ভারতের বাসিন্দা কোনও বিদেশিও পাঠাতে পারেন তাঁর শিল্পসৃষ্টি। কিন্তু ভবিষ্যতে যখন দুনিয়ার যে কেউ এই অ্যাওয়ার্ডে পাঠাতে পারবেন শিল্প নমুনা? দুই সপ্তাহের জন্য শিল্পিত চেতনা ও পর্যটনের মিলিত আলোয় ঝলমল করে উঠতে পারে কলকাতা।
সেখানেই ইতিহাস। পঞ্চাশের দশকে শিল্পকলায় এ দেশের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান ললিতকলা শুরু করার পরই হ্যাট্রিক করেছিল কলকাতা। যামিনী রায়, নন্দলাল বসু ও দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী... পরপর তিন বার সেই সম্মান কলকাতার শিল্পীদের। কিন্তু তারুণ্য? আজ যখন ভারতীয় অনীশ কপূর মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের টার্নার প্রাইজে সম্মানিত হন, মুম্বইয়ের তরুণ জিতিশ কাল্লাটের শিল্পসম্ভার সাজানো থাকে বার্লিন ও শিকাগোয়, কোথায় সেই স্পর্ধিত নবীন প্রতিভাকে স্বীকৃতি জানানোর ভারতীয় উদ্যোগ?
কলকাতার নতুন সিমা সম্মান এখানেই পথ দেখাতে পারে ভারতকে। সিমার ডিরেক্টর কথা প্রসঙ্গে টার্নার পুরস্কারের কথা বলছিলেন। “তবে, টার্নার সারা দেশ থেকে সেরা শিল্পীদের বাছাই করে। আমাদের পরিস্থিতি আলাদা। পুরুলিয়া বা পঞ্জাবের কোনও গ্রামে প্রতিভাবান তরুণ শিল্পীকে আমরা চিনব কী ভাবে? সেই জন্যই এই সিমা সম্মানে সকলের জন্য দরজা খোলা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy