একই পথে উড়তে উড়তে যখন ক্লান্ত হন, যখনই তাঁর ‘ডানা’ ভারী হয়ে আসে, বেরিয়ে পড়েন তিনি। পাহাড়ি পথের পাকদণ্ডী বেয়ে সাময়িক হারিয়ে যান। ফুসফুসে টাটকা অক্সিজেন ভরে আবার ফেরেন গানের দুনিয়ায়। উপহার দেন ‘বহতি হাওয়া সা থা উও’ বা ‘ইয়ে হাওয়ায়ে গুনগুনায়ে পুছে তু হ্যায় কঁহা’র মতো গান। শান্তনু মৈত্রের ডানা কি আবার ভারী? তাই কি পথ বদলে নতুন পথে ডানা মেলতে চলেছেন? রবিবার এমনই আভাস দিয়েছেন ‘থ্রি ইডিয়েটস’, ‘পরিণীতা’, ‘হাজারোঁ খোয়াইশে অ্যায়সি’ ছবির সুরকার।
পরিচালনায় আসছেন শান্তনু! ইতিমধ্যেই ছয় পর্বের একটি সিরিজ় বানিয়ে ফেলেছেন তিনি, নাম ‘পঙ্খ’। যেখানে দর্শক-শ্রোতা দেখতে এবং শুনতে পাবেন গান তৈরির গল্প। সঙ্গীত থেকে নিজেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেন কই? এই সুরেলা সফরে তাই গানও থাকবে স্বমহিমায়। নতুন সিরিজ়ে তিনি গান-গল্পের জন্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তীকে বেছে নিয়েছেন।
সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল নব্য পরিচালকের সঙ্গে। নিজের নতুন রূপ কেমন লাগছে?
জানতে চাইতেই শান্তনু ফাঁস করলেন সঙ্গীত পরিচালক থেকে ছবির পরিচালক হয়ে ওঠার নেপথ্য গল্প। তাঁর কথায়, “একটি পেশা বেছে নিয়ে তাতেই যেন বাঁধা গতে চলছিলাম। কাজের বরাত নিয়ে ফোন এলে ব্যস্ত থাকতাম। নইলে ডিম, আলুভাতে-ভাত খেয়ে আরামে, অলসে দিন কাটছিল!” হঠাৎ নিজের ভিতরেই প্রশ্ন জাগে তাঁর, কেন নিজের তাগিদে নতুন পথে হাঁটবেন না? এর পরেই ‘পঙ্খ’-এর জন্ম।
শান্তনুর দাবি, তাবড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। “সুধীর মিশ্র, আলি বিধু বিনোদ চোপড়া, প্রদীপ সরকার, সুজিত সরকার— এঁদের সঙ্গে যখনই কাজ করেছি, এঁরা আমায় বলেছেন, আমার মধ্যে গল্প বলার ক্ষমতা রয়েছে। কেন গল্প বলছি না?” পরিচালক হয়ে উঠতে এই তাগিদও অনুপ্রাণিত করেছে তাঁকে। এর আগে গায়িকা শুভা মুদ্গলকে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এ বার তাঁর পছন্দ কৌশিকী। উপলব্ধি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী অজয় চক্রবর্তীর কন্যার কণ্ঠে যেমন জাদু আছে, তেমনই অনেক গল্পও। তাই কৌশিকীকে বেছেছেন। ইতিমধ্যেই সিরিজ়ের ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। পোড় খাওয়া পরিচালকদের মতোই সেখানে নানা রঙের ছড়াছড়ি। আবার বৈপরীত্যও আছে। সাদা আর কালোয় সেজে উঠেছে কিছু দৃশ্য।
অতীত বোঝাতেই কি সাদা-কালোর সমাহার? প্রশ্ন শুনে খুশি শান্তনু। বললেন, “কাজের দুনিয়ার বাইরে মানুষ রংহীন। কারণ, তাকে তখন মুখোশ পরতে হয় না। আমার দেখানো অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারের মুহূর্তগুলোও ‘আনকাট’, আন্তরিক। ফলে, রঙের প্রাবল্য নেই সেখানে। রইল পড়ে সাদা আর কালো।” ছয় পর্বে ছ’টি গান নানা স্বাদের। তবে সব ক’টিই হিন্দিতে। যার মধ্যে দুটো গান কৌশিকীর লেখা। বাকিগুলো লিখেছেন স্বানন্দ কিরকিরে, তনভির গাজি, অভিপ্সা দেব। সব গানের সুরকার শান্তনু নিজেই।
সিরিজ দিয়ে হাতেখড়ি। আগামী দিনে বড় ছবি পরিচালনা করবেন?
এ বার মৃদু হাসি ভেসে এল ফোনের ও পার থেকে। নব্য পরিচালকের জবাব, “জীবনের কোনও কাজ পরিকল্পনামাফিক হয়নি। চাকরি করেছি। তখনও জানতাম না সুরকার হব। ভাল না লাগলে সাইকেল নিয়ে পাহাড়ি পথে বেরিয়ে পড়ি। আবার সুরের দুনিয়ায় ফিরি। ‘পঙ্খ’ সিরিজ় হল, না তথ্যচিত্র— তাই-ই বুঝতে পারছি না! এর মধ্যে আবার আগামী দিনের ভাবনা?”
সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে যখন যা আসবে তাকেই খুশিমনে গ্রহণ করবেন, কথা শেষের আগে জানালেন সুরের দুনিয়া থেকে সদ্য লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় পা রাখা শান্তনু।