Advertisement
E-Paper

মাকে ভোগ নিবেদনের পর দেখলাম, কে যেন হাতে করে ভাঁড় থেকে রাবড়ি খেয়েছে

“কালীপুজোর রাতে শ্বশুরমশাই ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় বসেছেন। হঠাৎ ঘরে এক অলৌকিক আলো! তিনি দেখছেন আর হাসছেন।”

কঙ্কনা ভট্টাচার্য

কঙ্কনা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১১:০৬
ধনঞ্জয়-পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনকথা।

ধনঞ্জয়-পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনকথা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কাকা পান্নালাল ভট্টাচার্যকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। যে বছর ওঁর মৃত্যু, সে বছর তো আমার জন্ম। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের পুত্র দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিবাহের সুবাদে আমি ভট্টাচার্য বাড়ির পুত্রবধূ। খুড়শ্বশুরমশাইকে না দেখলেও বাবুজি (ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য)-র মুখে ওঁর অনেক গল্প শুনেছি। আজও পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান ছাড়া যেন দেবীর আরাধনা সম্পূর্ণ হয় না। অথচ, তাঁর ছিল মাকে নিয়ে বড্ড অভিমান! তিনি যে ভাবে মাকে পেতে চান, কেন মা সে ভাবে তাঁর কাছে ধরা দেন না! তাঁর অভিমান ছিল নিজের দাদাকে নিয়েও। শ্যামাসঙ্গীত শুরু করার পর তিনি মায়ের গান ছাড়া আর কিচ্ছু গান না, অথচ দাদা ধনঞ্জয় মায়ের দেখা পেলেন, তিনি পেলেন না!

দিন যত এগিয়েছে কাকার এই অভিমান তীব্র হয়েছে। তিনি কালীপুজোর দিন পাগলের মতো শ্মশানে শ্মশানে ঘুরতেন। যদি মায়ের দেখা পান! কাকা বুঝতেই পারেননি, তিনি নিজ দেহে মাকে ধারণ করেছিলেন। তাই ওঁর কণ্ঠ থেকে ও ভাবে গানের সময় মায়ের উদ্দেশে আকুতি ঝরে পড়ত। নিজ দেহে দেবীকে ধারণ করলে কেউ তাঁকে কী করে দেখতে পাবে?

আমার বাবুজি আবার ঠিক উল্টো। কালীপুজের আগের দিন সংযম পালন করতেন। মানে, আমিষ খাবার বা আমিষের ছোঁয়া খাবার খেতেন না। পুজোর দিন নির্জলা উপোস। বাড়ির পুজো সেরে প্রতি বছর পৌঁছে যেতেন শ্রীরামপুর। সেখানে গঙ্গার পাড়ে শ্মশানে কালীপুজো হত। তাঁর আমন্ত্রণ থাকত গান গাওয়ার। এই দিনে তিনি যেন শিশুর মতো হয়ে যেতেন। গাইতেন, পুজো করতেন আর ‘মা’ ‘মা’ বলে ঝরঝর করে কাঁদতেন। একদম অন্য লোকের বাসিন্দা। পরে এখানেই একটি বাড়িতে তিনি নামগানের আমন্ত্রণ পান। বাবুজি ভীষণ মাটির মানুষ। শুরুতে সাম্মানিক নিলেও পরে আর নিতেন না। আমাদের সঙ্গে ওই বাড়ির সদস্যদের যেন আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল। ওই বিশেষ বাড়িতে যাওয়ার আগে বাবুজি বাকি বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের ছুটি দিয়ে দিতেন। কেবল থাকতেন এক তবলিয়া। ওঁকে নিয়ে এক বছর নামগান করছেন। সে বছর ওই পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা গান রেকর্ড করবেন। নামগান থামতে আমরা রেকর্ডিং শুনতে চাইলাম। ওঁরা টেপ রেকর্ডার চালু করতেই আমরা স্তব্ধ। তবলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুঙুর বেজেছে! গানের ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে কে বাজাল ঘুঙুর? আজও আমরা উত্তর পাইনি।

বাইরের পুজোর পাশাপাশি ভট্টাচার্য বাড়িতেও নিষ্ঠার সঙ্গে মায়ের আরাধনা হয়ে আসছে। আমাদের পুজোর বিশেষ রীতি, এক সের রাবড়ি মাকে আমরা ভোগ দিই। এক বছর সেই রাবড়ি নিবেদনের পর আমরা সরে এসেছি। নির্দিষ্ট সময় পরে ঘরে ঢুকে হতবাক। দেখি, রাবড়ির ভাঁড় থেকে কেউ যেন হাতে করে রাবড়ি তুলে খেয়েছে! এমন সময় বাবুজিও সেই ঘরে এলেন। দেখেশুনে ওঁর মুখে হাসি ধরে না! আমরা এখনও মাকে তাই অন্তত ১০০ গ্রাম হলেও রাবড়ি দেবই।

অন্য এক বছরের কথা বলি। একই ভাবে মায়ের আরাধনা চলছে। একটা ঝাড়লণ্ঠন আর টিউবলাইট জ্বলছে পুজোর স্থানে। বাবুজি আত্মভোলা হয়ে মায়ের পুজোয় ডুবে। হঠাৎ এক স্বর্গীয় আলো এসে পড়ল বাবুজির উপরে। কোথায় আলোর উৎস? আমরা বুঝতে পারছি না। কেবল এক অবর্ণনীয় আলোয় ঘর ভরে উঠছে। বাবুজি শিশুর মতো কখনও হাসছেন, কখনও কাঁদছেন।

এ রকম বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী এই ভট্টাচার্য পরিবার। ওঁদের সাহচর্যে আমি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি, ওঁরা সামান্য পুরুষ নন। মানবদেহ ধারণ করেছেন দেবীর সেবা করবেন বলে। সেই দায়িত্ব ফুরোতেই তাঁরা মায়ের মধ্যে লীন হয়ে গিয়েছেন। এখনও আমি কাকাশ্বশুর, বাবুজি এমনকি আমার দু’বছর আগে প্রয়াত স্বামী দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। ওঁরা আছেন আমার পাশে, ভীষণ ভাবে আছেন। ওঁরা নির্দেশ দেন আমায়। সেই নির্দেশ মেনেই আজও আমার জীবন চলে।

Dhananjay Bhhattacharya Pannalal Bhattacharjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy