পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সিনেমা হলে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টা আগে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর ভবিষ্যত্ স্পষ্ট নয়। কেন, বা কার নির্দেশে ছবি নামিয়ে নেওয়া হল, আদৌ তা আবার সিনেমা হলে ফিরবে কিনা— এখনও পর্যন্ত এ সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাননি খোদ পরিচালক অনীক দত্ত।
রবিবার সকালে অনীক এবং ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর বেশ কয়েকজন অভিনেতা সাউথ সিটিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ফের জানতে চেয়েছিলেন, কেন এই ছবি তুলে নেওয়া হল? ‘হায়ার অথরিটির নির্দেশ’, ব্যতীত অন্য কোনও উত্তর দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। ‘হায়ার অথরিটি’ কে বা কারা, সে প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যাওয়া হয়। এমনকি ‘হায়ার অথরিটির নির্দেশ’-এর কোনও লিখিত প্রমাণও দেখাতে পারেননি হল কর্তৃপক্ষ।
এর পর বেলা তিনটে নাগাদ ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে উপস্থিত হন অনীক এবং এ ছবির কলাকুশলীরা। সেখানে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ হল থেকে নামিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে নাট্যকর্মীরা আগে থেকেই অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। ধর্মতলা মেট্রোর দু’নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অনীক বললেন, ‘‘আমরা আজও জানতে চাইছি, ছবিটা কেন তুলে নেওয়া হল, বা সিনেমা হলে আবার দেখানো হবে কিনা। প্রযোজকরা বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টা জানিয়েছেন। সৌমিত্রদা খুব স্ট্রং একটা চিঠি লিখেছেন। মুম্বই থেকে লাল (সুমন মুখোপাধ্যায়) মেল করেছে। বহু শিল্পী, দর্শক পাশে আছেন।এখানে আমরা ছবির সঙ্গে যাঁরা আছি, তাঁরা ছাড়াও আজ অনেকে এসেছেন। ‘আমরা আক্রান্ত’ থেকে অম্বিকেশ মহাপাত্র এসেছেন। তরুণ মজুমদার এসেছেন। সকলেরই এক প্রশ্ন।’’
আরও পড়ুন, রাজনৈতিক সিস্টেমকে প্রশ্নের মাসুল? আচমকা বন্ধ ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রদর্শন
কেন বন্ধ করা হল, শনিবার থেকেই তার সঠিক ব্যখ্যা দিতে পারেননি কোনও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। কেউ বলেছেন, টেকনিক্যাল ফল্ট। কেউ বা ‘ওপরওয়ালার নির্দেশ’-এর যুক্তি দিয়েছেন। আগে থেকে টিকিট কেটে ফেলা দর্শকদের টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
এই ছবি তৈরির সময়েই নানা বাধা এসেছিল। শুটিং বন্ধ করে দেওয়ারও চেষ্টা হয় বলে দাবি করেছেন পরিচালক। রবিবার দুপুরে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে সে সব অভিজ্ঞতার কথাই বলছিলেন অনীক।তাঁর কথায়,‘‘এক বছর ধরে কাজ চলছে। অনেকেরই হয়তো মনে হয়েছে এই ছবির সঙ্গে থাকব কিনা, পাশে দাঁড়াব কিনা, কিন্তু অভীকের (মুখোপাধ্যায়) মতো ক্যামেরাম্যান, অর্ঘ্যর (কমল মিত্র) মতো এডিটর, দেবুর (দেবোজ্যোতি মিশ্র) মতো মিউজিক ডিরেক্টর পেয়েছি। আমাদের বক্তব্য গানের মধ্যেও ছিল। এর মধ্যে একটা গান গেয়েছে পরমা। আমি চারটে লাইন শুনে ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা হতে চলেছে। গানটা হয়ে যাওয়ার পর সেটা পাল্টাই।’’ পাশে দাঁড়িয়ে তখন দেবোজ্যোতি বলছেন, ‘‘আমরা আছি, সবাই সঙ্গে আছি।’’
কী এমন গান, যা নিজেই পাল্টে দিয়েছিলেন অনীক? পরমা গাইলেন বাতাবিবালা নামের একটি চরিত্রের গান, ‘‘শয়তানেরা আটকে দিলে তবে, এসপার ওসপার হবে...।’
প্রথম দিনই যাঁরা সিনেমাটি দেখেছেন, তাঁদেরই কয়েক জনের ব্যাখ্যা, আসলে পরিচালক তাঁর ছবিতে বুঝিয়েছেন, কিছু মানুষ তাঁদের কাজ, চিন্তাভাবনা বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য জীবিত অবস্থাতেই কোণঠাসা হয়ে যান এই সমাজে। দেখিয়েছেন, শাসক-ক্ষমতা বা সমসাময়িক সিস্টেমের দিকে যে বা যাঁরা আঙুল তুলেছেন তাঁরাই অবশেষে ভূতে বিলীন হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি, মাচা থেকে মঞ্চ, হোক কলরব—সমসাময়িক অনেক ঘটনাই অনীক রেখেছেন তাঁর চিত্রনাট্যে। পাশাপাশি এই রাজ্যে আগের জমানায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। ওই দর্শকদের ব্যাখ্যা, ভূতেদের সাহায্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোটের পরিকল্পনার কথাও রয়েছে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এ।
আরও পড়ুন, এটা কি মগের মুলুক? প্রশ্ন শিল্পী মহলে
সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পাওয়া কোনও সিনেমা কারও লিখিত নির্দেশ ছাড়াই কোনও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ কি নামিয়ে নিতে পারেন? ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এ হেন আইনি প্রশ্নও এ বার উঠছে বিভিন্ন মহলে।
(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy