কখনও তিনি ‘সতী’, আবার কখনও ‘দুর্গা’। ‘দেবী’র চরিত্র ছাড়া তাঁকে এতদিন কাস্টই করেনি ইন্ডাস্ট্রি। তিনি অভিনেত্রী পায়েল দে। তবে এখন হাতে এসেছে একেবারে অন্যরকম একটি চরিত্র। ‘তবু মনে রেখো’ মেগা সিরিয়ালের ‘সুপ্রিয়া’। সান্ধ্য ড্রইংরুমে আপাতত তাঁর নিত্য যাতায়াত। ‘দেবী’ থেকে ‘মানুষ’ হয়ে কেমন লাগছে? শেয়ার করলেন পায়েল।
রিস্ক নিয়েছিলেন, ক্লিক করে গেল তো?
(হেসে) সত্যিই মারাত্মক রিস্ক ছিল। এখনও অবধি দেখে মনে হচ্ছে ক্লিক করে গিয়েছে।
‘তবু মনে রেখো’ মেগা সিরিয়ালের আপনার চরিত্র ‘সুপ্রিয়া’র রেসপন্স কেমন?
সুপ্রিয়া করে দারুণ ফিডব্যাক পাচ্ছি। প্রায় ৯৮ শতাংশ পজিটিভ রেসপন্স।
বাকি দুই শতাংশ কি নেগেটিভ?
আসলে বাকি দু’শতাংশ মানুষ এখনও বুঝতে পারছেন না যে, সুপ্রিয়া মেন্টাল পেশেন্ট হওয়ার জন্য ওর রি-অ্যাকশনগুলো অজান্তেই দিচ্ছে। ও জেনে করছে না। কিন্তু কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন ও বাজে মেয়ে। সেটা তো সত্যি নয়।
‘দেবী’র চরিত্র ছাড়া তো আপনাকে এতদিন কেউ ভাবতেনই না, সেখানে এই চরিত্রটা তো একেবারে আলাদা।
এটা আমার কেরিয়ারের জন্য ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া একটা কাজ। এতদিন ধরে সকলে আমাকে পজিটিভ চরিত্রে দেখেছেন, দেবী হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু আমি যে অন্য ধরনের চরিত্র করতে পারি, সেটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল। আমায় সিনিয়াররা খুব সাপোর্ট করছেন। এটা আমার কাছে অ্যাচিভমেন্টের মতো। গত দেড়মাস ধরে ডে-নাইট শুট করছি আমরা।
আরও পড়ুন, ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই’
সেকি! অ্যাডজাস্ট করছেন কী ভাবে?
কষ্ট হয়তো হচ্ছে। কিন্তু আমার টিম অসম্ভব ভাল। টেকনিশিয়ানরা, ডিরেক্টোরিয়াল টিম, কো-অ্যাক্টাররা— কী খায় আমি জানি না, সারাক্ষণ ওদের মুখে হাসি থাকে। এটা একটা টিম এফর্ট। যেটা আমাকে সাপোর্টটা দেয়। আমরা এনজয় করছি।
‘দেবী’র চরিত্র করতে করতে বোর হয়ে যায়নি?
না, ঠিক বোর হইনি। তবে সুপ্ত বাসনা ছিল অন্য কিছু করার। কিন্তু কখনও প্রকাশ করতে পারিনি।
কেন?
যখনই ভেবেছি অন্য কিছু করব, তখনই আবার দেবীর চরিত্রের অফার এসেছে। সেটা করতে হয়েছে। তখন মনে হয়েছে, ঠিক আছে, এটা করে নিই। নিশ্চয়ই অন্য অফার পাব।
অনেক হয়েছে, এ বার ‘দেবী’-র অফার ফেরাবো। এমনটা মনে হয়নি কখনও?
হয়েছে তো। সে কারণেই ‘মা দুর্গা’র প্রজেক্টটা করার পর চার মাস ব্রেক নিয়েছিলাম। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম আর নয়। তবে একটা মজার ঘটনাও ঘটেছিল (তুমুল হাসি)।
কী সেটা?
আসলে সে সময় অনেক মানুষ ভেবে নিয়েছিলেন আমার মধ্যে বোধহয় অলৌকিক শক্তি রয়েছে। একদিন বারান্দায় জামা কাপড় শুকতে দিচ্ছি। দেখলাম, আমার প্রতিবেশী একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তাঁর বাড়ি থেকে আমার দিকে তাকিয়েছেন। চোখাচোখি হয়েছে। আমি ভেবেছি হয়তো গুড মর্নিং উইশ করবেন। কিন্তু উনি দু’হাত তুলে আমাকে প্রণাম করে চলে গেলেন। আমি কী করব বুঝতে পারলাম না, কোথায় যাব! দৌড়ে ঘরে চলে এসেছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করা উচিত।
এ তো খুব অপ্রস্তুত পরিস্থিতি!
সত্যিই তাই। তবে এটা প্রথম নয়।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
তাই? আগেও হয়েছে?
হুম। তখন অন্য একটা প্রজেক্টে ‘সতী’র চরিত্র করেছিলাম। বলা ভাল, সেখান থেকেই আমার ‘দেবী’র যাত্রা শুরু। সে সময় কয়েকদিন হল অন এয়ার হয়েছে সিরিয়ালটা। আমি একদিন অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখতে গিয়েছি, হঠাত্ এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা সামনে এসে পায়ে হাত দিয়ে ফেলেছেন। আমি তো দে দৌড়। খুব লজ্জা লেগেছিল।
এই যে পরপর মেগা করছেন, এর কনটেন্টের সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে?
কোনও কোনও জায়গায় মিল থাকে। আবার কখনও পাল্টে যায়। যেমন সুপ্রিয়া চরিত্রটা। এই ধরনের পেশেন্টরা এমন অ্যাগ্রেসিভ ভাবেই রিঅ্যাক্ট করেন।
মিল বেশি না অমিল?
এটা এ ভাবে বলা খুব মুশকিল। যেমন ধরুন রূপকথার গল্প। তা কি কখনও বাস্তবে হয়? পুরোটাই তো কল্পনা।
নিজেকে কনভিন্স করাতে অসুবিধে হয় না?
কিছু কিছু সময় হয়, এটা সত্যি। কিন্তু একটা পাবলিক ডিমান্ড তো থাকেই। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ীই তো স্টোরি লাইনটা পাল্টে দেওয়া হয়।
দর্শকরা কিন্তু এখন বাংলা সিরিয়ালের খুব সমালোচনা করেন, জানেন নিশ্চয়ই?
শুনেছি কিছু কিছু। আমার এখানে একটাই প্রশ্ন, পছন্দ না করলে দর্শক এই সিরিয়ালগুলো দেখছেন কেন? কোথাও নিশ্চয়ই ভাললাগার বিষয় রয়েছে। হাতের পাঁচটা আঙুল তো সমান নয়। দেখুন, কেউ ভাবছেন কনটেন্ট ইমপর্ট্যান্ট, কেউ ভাবছেন পারফরম্যান্স। আবার কেউ ভাবছেন, এগুলো ঠিক হচ্ছে না। এটা ডিপেন্ড করে…।
সম্প্রতি রাজ্যপালও বলেছেন, ‘‘অনেক সিরিয়ালই সমাদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।’’ আপনি একমত?
রাজ্যপালের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, মানুষ দেখতে চাইছেন, তাই সেটা দেখানো হচ্ছে। দিনের শেষে দর্শক দেখছেন বলেই কিন্তু আমরা আছি।
আরও পড়ুন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন’
নেক্সট কাজের কী প্ল্যান?
বড়পর্দায় কাজ করার ইচ্ছে আছে। সে কারণেই সুপ্রিয়া চরিত্রটা আমার কাছে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। প্রথমে করতে চাইনি এই কাজটা। আমি পারব না ভেবেছিলাম। তারপর এই প্রজেক্টের ক্রিয়েটিভ হেড সাহানাদি আমাকে বুঝিয়েছিলেন। অভিনেত্রী হিসেবে আমার চ্যালেঞ্জটা নেওয়া উচিত।
ফিল্মের অফার এসেছিল?
হ্যাঁ, এসেছিল তো। কিন্তু তখন এই প্রজেক্টটা নিয়ে ফেলেছি।
ফিল্মটা নিলে বেটার এক্সপোজার হত না?
ফিল্মটা নিলে অবশ্যই বেটার হত। কিন্তু কমিটমেন্ট তো ভাঙতে পারব না।
অনুশোচনা হয়?
না, কোনও অনুশোচনা নেই। কারণ যে কাজই করি, আমি প্রাণ দিয়ে করি। আমার কাজটা যদি লোকের ভাল লাগে, আমি ডেফিনেটলি বড়পর্দায় নিজেকে একদিন দেখতে পাব।
দ্বৈপায়ন, মানে আপনার হাজব্যান্ডও অভিনেতা। কোনওদিন ইগো ক্ল্যাশ হয়নি?
কোনওদিনও হয়নি। আমরা বিন্দাস।
আপনি কি ওঁর থেকে বেশি জনপ্রিয়?
আমার তা মনে হয় না। কারণ আমরা যখন এক সঙ্গে রাস্তায় বেরোই কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। ওকে কেউ ‘ইমন’ বলে, কেউ ‘পিকলু’ বলে। আমাকে চিনতেই পারে না। মেয়েদের অবশ্য মেকআপ ছাড়া চিনতে পারা একটু মুশকিল। ও হয়তো লিড করেনি মেগায়। কিন্তু ও একইরকম পপুলার।
ছবি: অনির্বাণ সাহা, ফেসবুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy