Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জিপিএস

অচেনা ঠিকানার জন্য যেমন গাড়ির নির্দেশিকা হিসেবে থাকে জিপিএস। তেমনই পুজোর তিনদিন কী ভাবে জম্পেশ কাটাবেন তার জন্য এ হল আনন্দplus নির্দেশিকা। সাহায্যে অরিজিৎ চক্রবর্তীঅচেনা ঠিকানার জন্য যেমন গাড়ির নির্দেশিকা হিসেবে থাকে জিপিএস। তেমনই পুজোর তিনদিন কী ভাবে জম্পেশ কাটাবেন তার জন্য এ হল আনন্দplus নির্দেশিকা।

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:১৮
Share: Save:

মহাষষ্ঠী

দুপুর (হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে ফেলুন)

আজ সোমবার অনেকের অফিস খোলা। পুজো প্ল্যানিংয়ের শুরুটা এই সময় করে নেওয়া ভাল। অফিসে বসেই ঠান্ডা মাথায় বন্ধুদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ। পরের তিন দিনের পরিকল্পনাটা ওখানেই বলে দিতে পারবেন। আর হ্যাঁ, ষষ্ঠীর দুপুরেই এটিএম থেকে বেশি করে টাকা তুলে রাখাটা ভাল। পরে এটিএমে তো টাকা না-ও থাকতে পারে। বাড়িতে পোষ্য থাকলে, তার ব্যবস্থাটাও এই সময় ভেবে ফেলুন। কলকাতাতে অনেক ক্রেশ পোষ্যের দেখভালের ব্যবস্থা করে। পোষ্যকে কয়েক দিনের জন্য সেখানে রাখতে পারেন।

সন্ধে (বেশি ওয়েট নিয়ে ট্রেনিং নয়)

চেষ্টা করুন যাতে অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফেরা যায়। কাল থেকে তো আবার জিম বন্ধ। বাড়িতে জিম না থাকলে পুজোর আগের শেষ জিমটা তো সেরে নিতে হবে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় কিন্তু সতর্ক করে দিচ্ছিলেন, ‘‘তিন দিন জিম করতে পারবেন না বলে ষষ্ঠীর দিন আবার বেশি ওয়েট নিয়ে ট্রেনিং করতে যাবেন না যেন। কার্ডিও করুন স্বাভাবিক যেমন করেন তেমন। ট্রেডমিলে অতিরিক্ত বেশি সময় দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’’ পুজোর পরের তিন দিন বরং ১০-১২ মিনিট সময় বের করে ফ্রি-হ্যান্ড করে নেবেন।

রাত (উত্তর কলকাতা বা দেশপ্রিয় পার্ক)

রাতের প্রথম কাজ হোক কলকাতার পুজো প্যান্ডেলগুলোর ম্যাপ ফোনে ইন্সটল করে নেওয়া। বাড়ির সবাইকে নিয়ে যদি যেতে হয়, তবে ভিড় বাড়ার আগেই উত্তর কলকাতাটা সেরে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর হ্যাঁ, জুতো যেন আরামদায়ক হয়। কারণ মহম্মদ আলি পার্ক বা চালতাবাগানে কিন্তু প্রচুর হাঁটতে হবে। তবে উত্তর কলকাতা যেতে না চাইলে দেশপ্রিয় পার্কের প্রতিমাটা আজই দেখে নিতে পারেন। ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গাপ্রতিমা’ সত্যি না গুজব — সেটা একবার দেখবেন না! তবে অনেকেই কিন্তু বলছেন, ভিড়ে সামনে যেতে না পারলেও ক্ষতি নেই, দূর থেকেই এত উঁচু যে দেখতে পাবেন। আর সামনে পৌঁছনোর সুযোগ পেলে কিন্তু প্রতিমার ছবিটা তোলা থাক প্যানোরমাতে ।

মহাসপ্তমী

দুপুর (সুশি, পর্ক রিব থেকে গার্লিক শ্রিম্পস)

অষ্টমীর দুপুর পর্যন্ত অনেকেই নিরামিশাষী থাকেন। তাই কলকাতার নতুন রেস্তোরাঁর নতুন নতুন পদগুলো পরখ করে নেওয়ার সেরা সময় কিন্তু মঙ্গলবার রাত। সুশি হোক কী পর্ক রিব, প্রথাগত বাঙালি খাবার হোক কী গার্লিক শ্রিম্পস— খাবেন কিন্তু মন আর পেট পুরে। ভাল খাবারের ঠিকানা? কেন শপিং মলগুলোই তো আছে! আর মলভ্রমণ যদি রোজকার ঘটনা মনে হয়, তাহলে আজই না-হয় হয়ে যাক গোলবাড়ির পরোটা আর কষা মাংস। বিকেলটা জমানো থাক কলেজ স্কোয়্যারের জন্য। পুরনো প্রেমের আবহে সন্ধেবেলা প্যারামাউন্টের শরবত মন্দ লাগবে না।

রাত (ম্যাডক্স আর ফেসটাইমে আড্ডা)

ছাতা যেন সঙ্গে থাকে। বলা যায় না কখন আবার বৃষ্টি নামে।
ম্যাডক্সের আড্ডার জন্য তো তোলাই ছিল আজকের সন্ধে। আমেরিকাবাসী বন্ধুদেরও হোয়াটসঅ্যাপে বলে রাখুন যে আপনি সে দিন ম্যাডক্সে থাকছেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সে ক্যালিফোর্নিয়াতেও তাঁরা তা হলে পেয়ে যাবেন ম্যাডক্সের ছোঁয়া। সেলফি, গ্রুপফি তো থাকবেই। তবে ইন্সট্যাগ্রামে পোস্ট করার আগে ‘#পুজো’ দিতে ভুলবেন না যেন। আর এখন তো ডেটা প্যাক ফুরিয়ে গেলেও চিন্তা নেই! পার্ক স্ট্রিট বা ময়দান মেট্রো তো আছে। ফ্রি ওয়াইফাই ওখানেই পেয়ে যাবেন। ডিনারটা হোক পার্ক স্ট্রিটে। তবে মনে করে টেবিলটা বুক করে নেবেন। অবশ্য পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে লম্বা ওয়েটিংয়ে দাঁড়াতে আপত্তি না থাকলে অন্য কথা।

মহাষ্টমী

সকাল (লং ড্রাইভে ইকো পার্ক)

বুধবার অঞ্জলি শেষ করে বেরিয়ে পড়তে পারেন লং ড্রাইভে। নিজের গাড়ি না থাকলেও চিন্তা নেই, স্মার্টফোন তো আছে! উবের-ওলাতেই বুক করে নিতে পারেন ক্যাব। উবের গো না পেলে উবের এক্স বুক করে নেবেন। পুজোতে কে আর অপেক্ষা করতে চায়! এমনিতে পুজোর জন্য তো ডিসকাউন্ট থাকছেই। তবে গাড়িতে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর জুস ভাল করে স্টক করে নেবেন যেন। আর শুধু জুসে প্রাণ না ভরলে তো ককটেল আছেই। তবে ‘কলকাতা কলকাতা’ মন কেমন করলে বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। নিউটাউনের ইকো পার্কেই না হয় কাটুক ঘণ্টা দুই। লাঞ্চের জন্য পাশের হোটেলগুলোতে গেলেই হবে। রুম বুকের জন্য তো এয়ারবিএনবি আছেই। আর ফেরার পথে সঙ্গী হোক পরমা ফ্লাইওভারে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা।

রাত (বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকা আর আইসক্রিম সোডা)

এই রে! ফেরার পথে ফোনের ব্যাটারি রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে? চার্জ নেমেছে ১০ পার্সেন্টে! এ সব ক্ষেত্রে তাই নিজের পাওয়ার ব্যাঙ্কটা যেন সঙ্গে থাকে। দেড়-দু’হাজারেই পাওয়া যায়। ফোনের ব্যাটারি ফুরোনোর চাপ আর থাকবে না। পেলে-সৌরভের উদ্বোধন করা অগ্রণীতে একটা সেলফি কিন্তু মাস্ট। রাতের মেনুতে চাইলে স্ট্রিট ফুড থাকতেই পারে! আর ব্যাগে যেন থাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ওয়েট টিস্যু। আর শুধু রাত জেগে ঠাকুর দেখা তো না, রাত জাগতে হবে ফেসবুকেও। আমেরিকার বন্ধুদের থেকে বেশি বেশি ‘লাইকস’ পেতে আমেরিকার ‘টাইমজোন’ দেখে পোস্ট মাস্ট! আর ‘সে’ যদি থাকে বিদেশে? ক্ষতি কী! স্মার্টফোন তো আছে। আপনি দেশপ্রিয় পার্কে। প্রেমিকা বস্টনে। আগে থেকে প্ল্যান করে নিলেই হল। একসঙ্গেই ঠাকুর দেখুন স্কাইপে। মিস করবেন না বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকা-চুড়মুড় আর আইসক্রিম সোডা। বিদ্যা বালন কিন্তু কলকাতা এলে এখানকার আইসক্রিম সোডা নিয়মিত খান। তবে ডাইজিনের প্যাকেট যেন সঙ্গে থাকে। আর হ্যাঁ, প্রয়োজন পড়ার আগেই যেন ডাক্তারের নম্বরটাও থাকে স্পিডডায়ালে। শুধু খেয়াল রাখবেন সেই ডাক্তার যেন পুজোয় শহরে থাকেন।

মহানবমী/দশমী

সকাল (অ্যাপস-এ বাড়িতে আনুন খাবার)

গতরাতের হুল্লোড়ের পর আর রেস্তোরাঁর লাইন নিশ্চয়ই ভাল লাগবে না। ভাববেন না, জোম্যাটো বা ফুডপান্ডা-র মতো অ্যাপস তো আছে। বৃহস্পতিবার সেখানেই পছন্দের রেস্তোরাঁর খাবার বেছে নিন। অ্যাপসেই কাবাব থেকে বিরিয়ানি চলে আসবে বাড়িতে।

দুপুর (ভাতঘুম আর টিভিতে ক্রিকেট)

দেড়টা থেকে তো চেন্নাইয়ে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ। লাঞ্চের পর সময়টা বরাদ্দ থাক ম্যাচ দেখার জন্য। তবে রাত জেগে বিসর্জন দেখবেন ভাবলে, একটু ভাতঘুমও চলতে পারে।

রাত (ক্রুজে চেপে বিসর্জন দেখা)

এ বছর তো নবমী-দশমী একই দিনে। তবে এ বার আর বাবুঘাটে দাঁড়িয়ে ভাসান দেখা কেন! গঙ্গায় ভেসেই দেখুন না বিসর্জন। একটু নেট ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন অজস্র ক্রুজলাইনের হদিশ। যারা নামমাত্র টাকায় আপনাকে বিসর্জন দেখাবে ক্রুজে চাপিয়ে।

মডেল: রেচেল হোয়াইট; ছবি: কৌস্তুভ শইকিয়া; চুলের সাজ ও মেকআপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার; স্টাইলিং: প্রলয় দাশগুপ্ত; পরিকল্পনা ও বিন্যাস: নাসরিন খান; লোকেশন সৌজন্য: দ্য পার্ক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE