Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অভিনেতা হতে চাই না

তবে ছবির ট্রেলার দেখে মনে হচ্ছে, তার অভিনয়ই নজর কাড়বে। সাত বছরের শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি আনন্দ প্লাসতবে ছবির ট্রেলার দেখে মনে হচ্ছে, তার অভিনয়ই নজর কাড়বে। সাত বছরের শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি আনন্দ প্লাস

শ্রীজাত। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

শ্রীজাত। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

নিজস্ব সংবাদদাতা
মধুমন্তী পৈত চৌধুরী শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০০:৩০
Share: Save:

অভিনেতা ছেলের সাক্ষাৎকার! তাই বাড়ির ঝুল বারান্দায় আগে থেকেই হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন খুদে শিল্পীর মা। আর অভিনেতা? ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছবি তোলা হবে শুনে ব্যাট-বল নিয়ে চটপট নেমে এল রাস্তায়। দু’-চারটে বল ব্যাট দিয়ে পেটাল। তার পর জামার সঙ্গে ম্যাচিং রঙের সাইকেলে চড়ে আর এক দফার ফোটোশুট। সঙ্গে বাবার কাছে আবদার, এক চক্কর ঘুরে আসবে সে। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাবা রাজি করালেন, সাক্ষাৎকার-পর্ব মিটলেই বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।

এটা ছিল বিটলু ওরফে শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিজার। দোলনা ডে স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘সোনার পাহাড়’-এ যে দাপিয়ে বেড়াবে রুপোলি পর্দা জুড়ে। বিটলু আর শ্রীজাত কি একই রকম দুষ্টু? ‘‘একদম এক। কোনও পার্থক্য নেই,’’ মাথা নেড়ে জবাব দিল শিশুশিল্পী। জীবন সাহার কাছে নাটক শিখত শ্রীজাত। ‘‘উনি পরমদাকে আমার কথা বলেন। তার পর পরমদা বাবাকে ফোন করে। ওয়র্কশপ, কয়েক বার অফিসে কথাবার্তার পরে গত বছর পুজোয় শুরু হয় শুটিং,’’ বলছিল শ্রীজাত।

সাত বছরের শ্রীজাতর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে এতটুকু ভয় করেনি। উল্টে সে পরমব্রতকে প্রশ্ন করত, ‘‘এটা কী লেন্স? ওটা কী লেন্স?’’ শ্রীজাতর ছবি দেখা বলতে ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হিরের আংটি’, ‘ফেলুদা’। তবে আলাদা করে পছন্দের শিল্পী কেউ নেই। ক্রিকেট বলতেই সে এক পায়ে রাজি। বিরাট কোহালির ভক্ত শ্রীজাত আইপিএলে যদিও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ভক্ত। বাইরের কী খেতে পছন্দ করো? ‘‘আগে তো বিরিয়ানি খেতাম। এখন তো এই সব বেরোচ্ছে, ভাগাড়ের মাংস। তাই খাচ্ছি না,’’ বেশ বিজ্ঞের মতোই বলল সে।

পড়াশোনার বাইরে সে ভালবাসে আঁকতে। ড্রয়িং খাতা খুলে নিজেই দেখাতে লাগল তার রঙিন দুনিয়া। প্রিয় বন্ধু কারা জিজ্ঞেস করায় হাতে গুনে সে বলল, তিন। তার পর চার, সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকল পাঁচে। বন্ধুরা কি শুটিংয়ের গল্প জানতে চাইছে? ‘‘সে ভাবে নয়। তবে বন্ধুদের মায়েরা জিজ্ঞেস করে, ‘‘এই স‌ংযুক্তা, তোর ছেলের ছবিটা কবে রিলিজ় করছে রে?’’ গলাটা একটু নামিয়ে তাদের সুরেই কথাটা বলল খুদে।

কথা বলতে শ্রীজাত খুব ভালবাসে। ক্লাসে পড়ানো চললেও প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে গোপন কথা শেষ হয় না। এর জন্য বকুনিও জোটে। ছবির শুটিংয়ে তনুজা দিদার কাছেও এক দিন জোরে ধমক খেয়েছিল সে। ‘‘গাড়ি করে যাচ্ছিলাম। নেটওয়র্কের সমস্যা হওয়ায় আমি জোরে জোরে ঠাম্মার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন উনি গাড়ির দরজাটা সরিয়ে বললেন, ‘এই তুমি, সকাল সকাল এত জোরে চেঁচাচ্ছ কেন?’ শুনেই একেবারে চুপ কথার ফুলঝুরি।

ছবির শুটিংয়ের সূত্রেই প্রথম বার ডুয়ার্সের জঙ্গল আর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ হয়েছিল শ্রীজাতর। কৌতূহলী খুদে পরমব্রতকে জিজ্ঞেসও করেছিল, ‘‘এখানে তো একটাও হাতি দেখছি না। হাতি কই? তখন পরমদা বলল, আমরা যে দিন রওনা দিয়েছি, সেই দিনই, যে হোটেলে আমাদের ওঠার কথা, সেখানে হানা দিয়েছিল হাতি।’’ আর এক দিন টেকনিশিয়ানদের আসার পথ রুখে দাঁড়িয়েছিল হাতির পাল। তবে শ্রীজাতর তা চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হয়নি।

মা বেশি বকে। আর বাবা তাকে বেশি আদর করে। ‘‘মা একটু শর্ট টেম্পারড,’’ বিশ্লেষণ করেই বলল শ্রীজাত। বড় হয়ে কী অভিনেতাই হবে? মাথা দু’দিকে নেড়ে বলল, ‘‘একেবারে নয়।’’ তবে কী? ‘‘এয়ারফোর্স পাইলট।’’ তা হলে এই ছবিটা করলে যে! ‘‘ওই অভিজ্ঞতা ছিল একটু। তাই করলাম,’’ ভনিতা না করেই সাফ উত্তর শ্রীজাতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE