Advertisement
E-Paper

‘নাইটির ওপরে গামছা পরা বৌদিও এখন মাল্টিপ্লেক্সে ছবি দেখে’

সাদা কাগজ আর কলম হাতে পেলে আজও ছবি তৈরি করেন তিনি। জীবন তাঁর কাছে ‘ঘাম’। প্রেম ‘অস্থিরতা’। মৃত্যু ‘শান্তি’। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ইন্ডাস্ট্রিতে পনেরো বছরের জীবনে তুলে ধরলেন শহুরে আর গ্রামের ছবি মিশে যাওয়ার কথা। সাদা কাগজ আর কলম হাতে পেলে আজও ছবি তৈরি করেন তিনি। জীবন তাঁর কাছে ‘ঘাম’। প্রেম ‘অস্থিরতা’। মৃত্যু ‘শান্তি’। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ইন্ডাস্ট্রিতে পনেরো বছরের জীবনে তুলে ধরলেন শহুরে আর গ্রামের ছবি মিশে যাওয়ার কথা।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১১:৩৮
বরাবর মুখের ওপর সোজা কথা, কড়া কথা বলেন রুদ্রনীল। ফাইল চিত্র।

বরাবর মুখের ওপর সোজা কথা, কড়া কথা বলেন রুদ্রনীল। ফাইল চিত্র।

অভিনয় তাঁর কাছে ‘গ্ল্যামার’ নয়। দায়িত্বশীল কাজ। তিনি জানেন, পাড়ার হাবুলকে হলদে প্যান্ট, খয়েরি জামা আর রাতে ডার্ক গ্লাস পরালে ‘গ্ল্যামারাস’ লাগবে। গ্ল্যামার বা স্টারডমের লোভ তাই তিনি সরিয়ে রাখতে জানেন। অভিনয়ের মাটি, গন্ধ তাঁর প্যাশন।

‘‘অনেক রুটেড চরিত্র থাকে ছবিতে। যাদের গায়ে ধুলোবালি। তাদের পোশাক ধুলোটে। তাদের পাশে ঝকঝকে পোশাক পরা মানুষগুলোকে মেকি লাগে। দেখবেন খেয়াল করে। এই ধুলোবালির চরিত্র আমায় আজও টানে। যেমন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, খরাজ মুখোপাধ্যায়কেও টানে।’’ এ বার পুজোতে তিনি অবশ্য ‘এক যে ছিল রাজা’-র ডাক্তার অশ্বিনী কুমার।

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’ ভাওয়াল রাজার ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। এই ঘটনার নির্যাস নিয়েই উত্তম কুমার অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’ তৈরি হয়েছিল। ‘‘কিন্তু ‘সন্ন্যাসী রাজা’-তে সত্যি ইতিহাস তুলে ধরা হয়নি। সেখানে অনেক মিথ্যে দেখানো হয়েছে। ইতিহাস যার সঙ্গে একমত নয়। এর কারণ, উত্তম কুমারকে যেন কারও খারাপ না লাগে। সেই দিক থেকে সৃজিত প্রচুর পড়াশোনা করে সত্যি তুলে ধরেছেন। সৃজিতের ছবির চরিত্রটাও একটা পিরিয়ডের। এবং তার বয়সের তিনটে সময়কে দেখানো হয়েছে। এই ছবিতে আমি ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ইন্টারেস্টিংলি এই ডাক্তারও কিন্তু আপনাদের দেখা ‘খারাপ’ ডাক্তারের মতো নয়। ছবিটা দেখলেই বুঝবেন।’’ উত্তেজিত রুদ্রনীল। এই ছবি নিয়ে তাঁর প্রচুর আশা। বেশ কড়া সুরেই বললেন, ‘‘ক্লাসিক কিছুর কোনও প্রতিযোগিতা হয় না। আমি, যিশু, অনির্বাণ যে ভাবে শুট করেছি। উফফ! হয়তো মরেই যেতাম।’’

আরও পড়ুন: ‘সৃজিতের সঙ্গে কাজ করে অপয়া ফেজ়টা হয়তো কেটে গিয়েছে!’

বরাবর মুখের ওপর সোজা কথা, কড়া কথা বলেন তিনি। ‘‘আরে, আমার সঙ্গে ঝগড়া করে যাবে কোথায়? আর যাদের মুখের ওপর কথা বলি আমার প্রকৃত বন্ধু তারা। তাদের সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হই না। শিক্ষিত, বিচক্ষণ মানুষের যথাযথ সমালোচনা করলে তাঁরা খুশি হন। সবসময় প্রশংসা করলে মনে হবে তাদের স্তাবকতা করছি। আর শুনুন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে তেল সবাই দেয়। পদ্ধতি অনেক রকমের হয়। কেউ এক বালতি দেয়। আমি এক মগ দিই।’’ স্বভাবোচিত স্বরে বললেন রুদ্রনীল।
তবে তাঁর কথা থেকেই বেরিয়ে এল বাস্তব। কাস্টিং-এর বিষয়ে পরিচালক, প্রযোজকের মানসিক ইচ্ছে কাজ করে। তিনি মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতির কথা বলে উল্লেখ করেন, ‘‘নাসিরুদ্দিন শাহ-এর তুলনায় অমিতাভ বচ্চন অনেক বেশি চরিত্র পান। তাতে কী? অভিনয়ের ধারা মেনে বলা যায়, পাঁচটা অমিতাভ মিলে একটা নাসিরুদ্দিন শাহ হয়।’’

‘এক যে ছিল রাজা’-র একটি দৃশ্যে রুদ্রনীল ঘোষ এবং অঞ্জন দত্ত। ছবি: ইউটিউব।

নিজের জীবনকে অতিরঞ্জনের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলতে চান না তিনি। জানেন, দর্শকদের চাহিদায়, ভালবাসায় তিনি তৈরি হয়েছেন। তিনি তাঁর জন্মকে দু’ভাবে ব্যাখ্যা করেন। ‘‘আমার প্রাতিষ্ঠানিক জন্ম হয়েছে। কিন্তু মৃত্যু হবে অভিনেতা হিসেবে। আমি আমার দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধ। আমাদের মাধ্যমেই তাঁরা তাঁদের ক্লান্তি ভুলতে আসেন। ক্লান্তি ভোলানোর দাম সমাজে একটু একটু করে চড়তে থাকে। সলমন খান তাই দরকার হলে দশ কোটিও চাইতে পারেন...’’, অভিনেতা রুদ্রনীল বলে ওঠেন।

দর্শকের ক্লান্তি আর তাঁর ঘাম ঝরানোর জীবনে দায়বদ্ধতা থেকেই মা চলে যাওয়ার দিন স্টেজ শো করতে গিয়েছিলেন তিনি। এক সময়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়ে রোজগারের পথ নির্ণয় করেছেন। তাঁর নামও যায়নি সেই চিত্রনাট্যে!
'আমার সারভাইভ করার মতো তখন কোনও বিকল্প পথ ছিল না। সেই সময় বড় চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে ফর্সা এবং লম্বা হওয়া জরুরি ছিল। এখন হাঁটতে গেলে হোঁচট খেতেই হবে। হাত-পা কাটবে। কষ্ট হবে। চোখের জল পড়বে। ওই চোখের জলের প্রয়োজন ছিল। তাই জীবনকে চিনতে পেরেছি। তাই হয়তো আজকে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’’ জীবনযুদ্ধে ঘা খাওয়া রুদ্রনীল বলে উঠলেন।

আরও পড়ুন: আজও অনেক বয়ফ্রেন্ড থাকলে মেয়েদের চরিত্রহীন বলা হয়: রাজনন্দিনী

এখন সময় বদলেছে। তিনি বিশ্বাস করেন। মেনস্ট্রিম আর আর্বান ছবি মিশে গিয়েছে। ‘‘বৃহত্তর বাংলা কৃষকের নয়। সিমেন্টের বাংলা। শিবুর ‘পোস্ত’ নাইটির ওপর গামছা পরা বৌদিও দেখছে, আবার হট প্যান্টের আধুনিকারাও দেখছে। এই বাংলায় শিবপ্রসাদ-নন্দিতা-সৃজিত-কৌশিক-অরিন্দম যে ছবি তৈরি করছে সেটাই অনেক। ভাল জিনিস চিরকাল কম থাকে। বাংলা ছবি কম হচ্ছে, আর বলা চলে না!’’ বুঝিয়ে দিলেন রুদ্রনীল।

‘এক যে ছিল রাজা’-র সেটে যিশু এবং রুদ্রনীল। ছবি: ফেসবুক

বাংলা ছবিতে অভিনেতাদের জায়গা আরও বাড়ছে। তিনি মনে করেন সেই কারণেই অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মতো অভিনেতার চাহিদা বাড়ছে।’’ যিশু অ্যাক্টর মেটিরিয়াল। কিন্তু খেয়াল করুন, আগে ছিল মিষ্টি হিরো! কিন্তু এখন অভিনেতাদের বাজারেও অ্যাক্টিং বুম হয়ে আসছে! পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তেরোটা চুল নিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন সবাই ওর সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত! শাশ্বত কবে থেকে ফাটিয়ে অভিনয় করে। কিন্তু ‘কহানি’ না করলে অভিনেতা হিসেবে চূড়ান্ত খ্যাতির জায়গায় ও পৌঁছতে পারত না’’ বিস্ফোরক রুদ্রনীল। বুঝিয়ে দেন, শাহরুখ খানের ছবির চেয়ে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর ছবি হলে গিয়ে দেখে।

শুধু অভিনয়ের ধারা নয়, বদলে যাচ্ছে সমাজ। তাঁর রাজনীতিতে আসা নিয়ে সমালোচনা হলেও রাজনীতি আর থিয়েটার তাঁকে মুখোশের আড়ালের মুখ চিনিয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এক সময় পকেটে একশো টাকার নোট থেকে গাড়ি-বাড়ির এই সাম্রাজ্যে মনের ভেতর যুদ্ধ চলে তাঁর। শুম্ভ-নিশুম্ভের। ‘‘এসি ঘর, এসি ফ্লোর, এসি গাড়ি, উঁচুতল থেকে নীচের জীবন ভুলছি না তো? দর্শকরা কী চায় জানতে পারছি কি? আগে মেয়েদের দেখতাম বুকে ওড়না। এখন গলায় কেন? জানি কী?...’’
প্রশ্ন ঘুরছে তাঁর চেতনে-অবচেতনে! কোথায় যেন প্রাপ্তির মধ্যে সংশয়! প্রাপ্তির থেকে যেন লোভ বেশি না হয়...

(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

Celebrity Interview Rudranil Ghosh Ek Je Chhilo Raja Tollywood Celebrities রুদ্রনীল ঘোষ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy