Advertisement
E-Paper

আমি তো দাদুর সঙ্গে লড়ে ওঁকেও হারাতে চাই

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শোম্যান মহানায়কের সাতাশতম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। সেই উপলক্ষে রাজ কপূর এবং গোটা কপূর খানদান নিয়ে প্রাণখোলা সাক্ষাৎকার দিলেন আধুনিক কপূর প্রজন্মের মশালবাহী রণবীর কপূর। কখনও কখনও তিনি এমন সব কথা বললেন, শুনে আশ্চর্যই লাগল গৌতম ভট্টাচার্য-র। হেডলাইনটা যেমন...ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শোম্যান মহানায়কের সাতাশতম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। সেই উপলক্ষে রাজ কপূর এবং গোটা কপূর খানদান নিয়ে প্রাণখোলা সাক্ষাৎকার দিলেন আধুনিক কপূর প্রজন্মের মশালবাহী রণবীর কপূর। কখনও কখনও তিনি এমন সব কথা বললেন, শুনে আশ্চর্যই লাগল গৌতম ভট্টাচার্য-র। হেডলাইনটা যেমন...

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০০:২৯
শ্রী ৪২০

শ্রী ৪২০

কপূর খানদানে জন্ম নেওয়াটা কেমন ব্যাপার?

কপূর খানদান আর পাঁচটা পরিবারের মতোই। যেখানে বাবা হলেন বাবা। দাদু হলেন দাদু।
জ্যাঠা হলেন জ্যাঠা। আমি ছোট থেকে তাঁদের আলাদা করে ভাবতে শিখিনি। বুঝিওনি। বড় হয়ে অবশ্য বুঝতে শিখি যে কপূর খানদান অনন্য ভারতীয় ফিল্মের ইতিহাসে তাঁদের অবদানের জন্য। কী কী সব মহীরুহ! পৃথ্বীরাজ কপূর! রাজ কপূর! শাম্মী কপূর! শশী কপূর! ঋষি কপূর! এই পরিবারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো করে ভারতীয় ফিল্ম দুনিয়ায় কন্ট্রিবিউট করেছে। কেউ কারও মতো হতে যায়নি। কেউ কারওকে নকল করেনি। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা চিন্তা করার ধরন। নিজেকে প্রকাশের ভাবভঙ্গি। অভিনয়ের স্টাইল। কেউ যে কারওকে কপি করেনি সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর দর্শকও চায় না কেউ কারওকে নকল করুক। কারণ, ওরিজিনাল তো তারা আগেই দেখে ফেলেছে। ওরা চায় নতুন কিছু। কপূরদের ধারাবাহিক ভালবাসার কারণ তাদের বংশের যাবতীয় প্রতিনিধি নতুনত্বকে রাখতে পেরেছে।

এত সব নানারকম স্টাইল আপনার পূর্বপুরুষের। তার মধ্যে তো মাথা গুলিয়ে যাওয়ার কথা যে আমি কোন ছাঁচটা নেব? কাকে কপি করব? আপনি সেই ভিড় থেকে গা বাঁচিয়ে নিজের স্টাইল তৈরি করলেন কী করে?

আমি বরাবর খুব ক্ষুধার্ত। খুব অ্যাম্বিশাস। আমি শুরু থেকে চেয়েছি সবকিছু চেটেপুটে খেতে। অ্যাক্টিং, ডিরেকশন, প্রোডাকশন, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, পুরো বিষয়টা যেন আমার বোধশক্তির মধ্যে থাকে। আরও একটা ব্যাপার। আমি অনেক আগেই ঠিক করে নিই যে ঠিক সেই ছবিগুলোই বাছব যেগুলো আমি নিজে করতে চাই। এমন সব ফিল্ম বাছব না যেগুলো আমার বাবা হলে করতেন। বা আমার দাদু রাজ কপূর হলে করতেন।

শুনেছি ছোটবেলায় বিশেষ কোনও ঝলক আপনার মধ্যে দেখা যায়নি। পড়াশোনায় না। খেলাধুলোয় না। তবু এই যে ফিল্মে আগমন মাত্র আপনি একটা জেট ইঞ্জিনের স্পিড নিয়ে নিলেন এর রহস্য কী?

একদম ঠিক শুনেছেন। আমি জীবনে সব কিছুতে মিডিওকার ছিলাম। কোনও কিছুতেই আমি আলাদা করে ডিফারেন্স তৈরি করতে পারিনি।
নায়ক হব এমন কিছুও ভাবিনি। তবে ওই যে বললাম খিদেটা ছিল, যে একদিন কিছু করতে হবে। আর করলে যা করব সেটা উঁচুতে উঠবে। নিউ ইয়র্ক থেকে ফিল্ম স্টাডিজ পড়ে ফেরত এলাম। স়ঞ্জয় লীলা বনশালি তখন ‘ব্ল্যাক’ ছবিটা বানাচ্ছেন। আমি সেই ছবির অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ছিলাম। মিস্টার বচ্চন আর রানি মুখার্জি ছিলেন সেই ছবিতে। ওঁদের কাজ করতে দেখা। মিস্টার বনশালির ওঁদের দিয়ে কাজ করাতে দেখা — এ সব প্র্যাক্টিকাল দেখেটেখে আমি যা শিখলাম সেটা নিউ ইয়র্কও শেখাতে পারেনি।

সেটা কী?

সেটা হল একটা সিনেমার সঙ্গে কী পরিমাণ ত্যাগস্বীকার জড়িয়ে থাকে। কী পরিমাণ কাজ জড়িয়ে থাকে! কী পরিমাণ প্যাশন মানুষকে এর পিছনে ক্ষয় করতে হয়। বলতে গেলে ওই আমার শিক্ষা শুরু হল এবং এমন একজনের কাছে যিনি কপূর পরিবারের সদস্যই নন— মিস্টার বনশালি। উনি একজন দুর্ধর্ষ মেন্টর। শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ। মিস্টার বনশালি আমাকে একদম মাটিতে নামিয়ে দিলেন। এমন গালাগালি উনি করতেন আর সময়সময় এত মারতেন যে...

মারতেন?

মারতেন।

ঋষি কপূরের ছেলে আর রাজ কপূরের নাতিকে মারতেন?

বনশালি একদম ঠিক করতেন। আমি কপূর না মলহোত্র, আমার বংশ পরিচয় কী, উনি মনে রাখার কোনও চেষ্টাই করেননি। আমাকে জাস্ট আর একজন শিক্ষার্থীর মতো দেখেছেন। এটাই আমাকে শিক্ষিত করল। আমি বুঝতে শিখি ফিল্ম দুনিয়ায় হোয়াট ইজ হোয়াট। ওটাই আমাকে কঠোর করে। শক্তপোক্ত করে। ওটাই আমাকে তৈরি করে দেয় রুক্ষ এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য।

যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আপনি এসেছেন, তাতে স্টার্স্টিং ব্লক-এ দাঁড়িয়ে নার্ভাস হয়ে যাওয়ার কথা। পেছনে এত বড় বড় সব নাম! আমি কি পারব? ওই চাপেই তো অর্ধেক লোক আন্ডারপারফর্ম করত। রোহন গাওস্কর আর অভিষেক বচ্চন শুনেছি ছোটবেলায় নিজেরা একটা ক্লাব খুলেছিলেন যার নাম ওঁরা নিজেরাই দেন— লুজার্স ক্লাব।
খুব ট্র্যাজিক নামটা যে, আমরা যাই করি না কেন, বাবাদের কীর্তির কাছে হারব। আপনার বেলা সেই হতাশাটা যে কাজ করেনি সেটা যত না চমকপ্রদ, তার চেয়ে বেশি বিস্ময়কর।

তার কারণ আমার মানসিকতাটা শুরু থেকেই ছিল যে আমার বংশের লোকেরা যত ভাল কাজই করুন না কেন, যত ভালবাসাই ওঁরা অর্জন করুন না কেন, আমি আরও ওপরে যাব। আমি ওঁদেরও ছাড়াব। আমার বাবা ভাল কাজ করে লোকের মনে আছেন তো কী। আমি তার চেয়েও ভাল কাজ করব। আমার দাদু রাজ কপূর তো কী! আমি ওঁর চেয়েও ভাল কাজ করব। আমি মনে করি কপূর ঘরানা পরের প্রজন্মে প্রবাহিত করার এটাই সেরা উপায় যে, যা এখন আছে সেটাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। সেটাকে ধরার চেষ্টা করলে বা বসে বসে ভাবলে যে, ওঁরা কী অসাধারণ করেছেন তাতে বংশ পরম্পরা রাখা যাবে না। মশালটা জ্বালিয়ে রাখতে হলে আগুনটা বাড়িয়ে যেতে হয়। আমি তাই প্রচণ্ড প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করতে চাই আমার ফ্যামিলির সবার সঙ্গে। আমার সঙ্গে সবার লড়াই। বাবা-দাদু সবার।

প্রথম প্রজন্ম

দ্বিতীয় প্রজন্ম

তৃতীয় প্রজন্ম

চতুর্থ প্রজন্ম

রাজ কপূরকেও হারাতে চান?

অফ কোর্স। আপনি একটু আগে রোহন আর অভিষেকের কথা বললেন। ওদের বাবারা নিজের নিজের ফিল্ডে কিংবদন্তি। তার চেয়ে বড় হওয়া শক্ত। তাও তো ওরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে নিজেদের মতো করে। অভিষেককে তো আমি দেখি খুবই প্যাশনেট। দারুণ লড়ছে এখনও। তবে আমি নিজের কথা বলতে পারি যে আমাদের ফ্যামিলির আগের জেনারেশন বা তারও আগের লোকেদের হারিয়েই ছাড়ব— এটাই আমার রোখ!

তার মানে আপনার লড়াইতে প্রতিদ্বন্দ্বী নায়কেরা নয়। ইতিহাস!

একদম তাই। ইতিহাস আমার কম্পিটিশন।

দারুণ লাগল শুনে রণবীর!

থ্যাঙ্ক ইউ।

তবু একটা কথা বলতেই হবে। আপনার অপ্রিয় লাগলেও।

বলুন না।

অনেকে কিন্তু কমিক সিনে আপনার অভিনয় আর টাইমিংয়ে রাজ কপূরের প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখতে পান। এটাকে কী ভাবে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় ভাবছেন? না কি এটাই ডিএনএ?

স্যর, কমেডিতে অল ইন্সপিরেশনস একটা লোকের থেকেই আসে।
তিনিই উৎস। তাঁর নাম চার্লি চ্যাপলিন। আর দাদুরও তো অনুপ্রেরণা উনি ছিলেন! আমি যে প্রথম ছবিটা করি ‘সাওয়ারিয়া’, তাতে দাদুর টুকরো টুকরো ছোঁয়া ছিল। কিন্তু ‘বরফি’তে যে ক্যারেক্টারটা করেছিলাম, তার প্রভাব তো অবশ্যই চ্যাপলিনের প্রভাব। মানে হেভি প্রভাব। এবার ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি?

নিশ্চয়ই।

আমি অভিনেতা রাজ কপূরের বিশেষ ভক্ত নই। আমি ভক্ত পরিচালক রাজ কপূরের। ওঁর ছবি বানানোর ধরনের। ওঁর আইডিয়া অব রোম্যান্সের। ওঁর চরিত্রগুলো যে ভাবে কথা বলে। ওঁর গল্প যেমন এগিয়ে চলে। সেটা ফ্যাসিনেটিং। ক্রিয়েটর রাজ কপূরকে দেখে আজও আমি মোহিত হয়ে যাই। অভিনেতাকে দেখে হই না।

এবার খানদানের অন্যদের নামগুলোতে আসছি। শশী কপূর।

শশী আঙ্কল বোধহয় পরিবারের সবচেয়ে ভাল মানুষ। ইয়েস, হি ইজ দ্য নাইসেস্ট। কোনও অহঙ্কারী অ্যাটিটিউড ছিল না। অথচ যা সব কাজ উনি জীবনে করেছেন, তার প্যাকেজ মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম। আবার ঘোর কমার্শিয়াল। শ্যাম বেনেগাল থেকে মার্চেন্ট আইভরি। ও দিকে আবার যশ চোপড়া থেকে পৃথ্বী থিয়েটার নিয়ে ওঁর আর জেনিফার আন্টির মরণপণ লড়াই। ভাবাই যায় না! তা ছা়ড়া সেই যুগে রাজ কপূরের মতো বনস্পতির ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজে অন্য ঘরানার একটা বড় গাছ পোঁতা কি সহজ কথা নাকি? শশী আঙ্কল আর শাম্মী কপূর দু’জনেই তখনকার দিনের কত বড় সব স্টার। লোকে ওঁদের শশী বা শাম্মী বলেই চিনত। কেউ তো ওঁদের রাজ কপূরের ভাই বলে ডাকেনি।

শশী কপূরকে তো এখন জনসমক্ষে দেখাই যায় না। এত হ্যান্ডসাম একজন স্টার এখন বাড়িতে নাকি হুইল চেয়ারে ঘুরে বেড়ান।

(দুঃখিত ভাবে মাথা নেড়ে) সত্যি। আমরা পৃথ্বী থিয়েটারে ওঁকে দাদাসাহেব ফালকে পাওয়ার জন্য একটা সংবর্ধনা দিয়েছি রিসেন্টলি। দেখলে খারাপই লাগে। এত বড় একজন স্টার! এত ভাল মানুষ। সব সময় ভাল করে লোককে চিনতেও পারেন না। ওঁর ধৈর্য কমে গিয়েছে। বছরে দু’বার করে ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। একবার বছর শেষে আর একবার পৃথ্বী ফেস্টিভ্যালে।

শাম্মীর কথা বলুন।

উনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম রকস্টার। ডান্সিং সুপারস্টার। শাম্মী আঙ্কলের ডান্স, ওঁর মিউজিক বোঝার ক্ষমতা, ওঁর স্টাইল— ক্যারিশমাটাই আলাদা ছিল। ওই প্যাশন, ওই লাখ লাখ ভক্তের দল, আমার মনে হয় না শাম্মীর আগে কারও ছিল বলে। উনি যা সব কাজ করে গিয়েছেন তাতে শুধু আমার জেনারেশন নয়, তার পরের পরের সব জেনারেশনও অনুপ্রাণিত হতে বাধ্য।

অনেক সময় একটা প্রজন্মের যাঁরা মশালবাহী তাঁরা সচেতন ভাবে একটা সময়ের পর পূর্বপুরুষদের কাজ দেখা বা বেশি নাড়াচাড়া বন্ধ করে দেয়। সে ভয় পায় অবচেতনে অগ্রজদের প্রভাবটা না চলে আসে। আপনিও কি তেমন কোনও ভয় পান যে, ‘জংলি’ বারবার দেখব না। ওই স্টেপিংগুলো অবচেতন মনে গেঁথে যেতে পারে।

আমি ‘জংলি’ দেখে এখনও ইন্সপায়ার্ড হই। কিন্তু সেটা ইম্পরট্যান্ট নয়। ইম্পরট্যান্ট হল একটা কথা আপনার বোঝার চেষ্টা করা যে, ফিল্মে নামার অনেক আগেই আমি সিনেমার একজন ছাত্র ছিলাম। আই ওয়াজ আ স্টুডেন্ট অব সিনেমা। আই ওয়াজ অলসো আ ফ্যান অব সিনেমা। কপূর পরিবারের কনট্রিবিউশন এবং কাজ আমাদের সিলেবাসে পড়তে হয়েছে। আমি যতই একই পরিবারের লোক হই না কেন, আমাকে ছাত্র হিসেবেও জানতে হয়েছে রাজ, শাম্মী, শশী, ঋষি, রণধীর এঁরা কে কী কাজ করেছেন? কোথা থেকে এসেছেন? শেকড়টা কোথায় ছিল? সেখান থেকে কী ভাবে তাকে বাড়িয়ে তোলা হল? এটা জেনে রাখাটা ব্যক্তিগত ভাবে আমার পক্ষেও সুবিধে যে আমি তা হলে বুঝতে পারি, এই প্রজন্মে কোন ডাইরেকশনে এগোব। কোনটার অলরেডি রাস্তা তৈরি হয়ে আছে?

ভারতীয় সিনেমার গোল্ডেন পিরিয়ড বলতে ধরা হয় সত্তর দশককে। আপনার কখনও মনে হয় না আমি যদি সেভেনটিজ-এ কাজ করার সুযোগ পেতাম! এতগুলো লেজেন্ডের পাশে দাঁড়িয়ে যদি কমপিট করতে পারতাম!

মনে হয় না। আমার কাছে গোল্ডেন এরা হল ফিফটিজ। এত ধরনের ছবি ওই সময় বানানো হয়েছে ভাবাই যায় না! যে সব ছবি সেই সময় করা হত, তার নানা ধরনের সামাজিক মেসেজ থাকত! আহা, আমাকে কেউ যদি ক্যারি করে আমার যৌবনকে ফিফটিজে পৌঁছে দিত। দ্যাট উড হ্যাভ বিন আইডিয়াল।

তিনটে ফিল্মের নাম বলুন যা ঈশ্বরের কাছে বর পেলে যাঁরা করেছেন তাঁদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজে করতেন!

‘শ্রী ৪২০’। ‘তিসরি মঞ্জিল’। আর আর...

শোলে?

না না।

ববি?

না। ঋষি কপূরের ‘জমানে কো দিখানা হ্যায়’।

ঋষি কপূরের কথাটাই হল না আমাদের। কী অবস্থা দেখুন।

ঋষি কপূরের জনপ্রিয়তার কারণ আমার মনে হয় ওর স্বতন্ত্রতা। ওঁর সময়ের হিরোদের ভাবুন! সবাই ছ’ফুটের মাচো মেন। ধর্মেন্দ্র। অমিতাভ। বিনোদ খন্না। শশী কপূর। মিঠুন—এত সব পুরুষের পাশে মাই ফাদার লুকড লাইক এ বয়।

আর আমার মা ছিলেন ওঁর আইডিয়াল ম্যাচ। অন্য যে নায়িকারা সেই সময় তাঁদের কেরিয়ারের তুঙ্গে তাঁরা সবাই তখন এক একজন পূর্ণাঙ্গ মহিলা।

জিনাত আমন। হেমা মালিনী। রেখা। মা তাঁদের পাশে অনেক কম বয়সি। একজন গার্লই বলা যায়। এতে কী হল—সব ইয়ং গল্প। ইয়ং ভাবনা। ইয়ং সব গান বাবামায়ের দিকে চলে এল। আর স্ক্রিনে বয় মিটস গার্ল রোমান্সের তুফানটা ভারতবর্ষকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। যখনই ওঁরা এক সঙ্গে হতেন, সে ‘রফু চক্কর’ই হোক কি ‘খেল খেল মেঁ’—লোকে ওই রোমান্সের জোয়ারে দারুণ আকৃষ্ট হত। সেই সময় এত সব স্টাইলাইজড হিরোদের ভিড়ে বাবাই ছিলেন একমাত্র নন স্টাইলাইজড অ্যাক্টর। যে ভাবে উনি পর্দায় প্রেম করতেন। যে ভাবে গিটার বাজাতেন! যে ভাবে নায়িকাদের চোখের দিকে তাকাতেন। ভীষণ অ্যাট্রাকটিভ ছিল।

আর মিসেস নীতু কপূর?

আমি মায়ের ছবির খুব ভক্ত। কিন্তু আমার মা পর্দায় অন্য লোককে রোম্যান্স করছে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আমার মা শুধু আমারই মা। সে বাবার সঙ্গে পর্দায় নাচছে- গাইছে- জড়াচ্ছে ঠিক আছে। কিন্তু বাবা ছাড়া যেন কাউকে রোমান্সটোম্যান্স না করে। দু’ চক্ষে দেখতে পারি না। আমি ওকে কেবল আমার মা হিসেবে দেখতে চাই।

শোনা যায় রণবীর কপূরের ওপর তাঁর বাবার চেয়ে মায়ের প্রভাব বেশি!

আমার জীবনে যা যা ভ্যালুজ আছে সব মা। ইন্টারভিউ শুরুর আগে আপনি আমায় বলছিলেন যে আমায় এত মাটির কাছাকাছি দেখে আপনার বিস্ময়কর লাগছে। এই প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ দিয়েও বলি ওটা আমার প্রাপ্য নয়। পুরোটাই মা। মা আমাদের পরিবারের জন্য যে পরিমাণ ত্যাগ করেছে ভাবাই যায় না। কেরিয়ার তুঙ্গে থাকার সময় মা কাজ ছেড়ে সংসারে সময় দিয়েছে। আমার তো আজকে এক এক সময় মনে হয় যে, ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে গেলে মা অনেক কিছু করতে পারত। আমাদের বাড়িটা যে ভাবে চলে, মা যে ভাবে চালায়, সেটা মোটেও আহামরি ফ্যান্সি কিছু নয়। গোটা বাড়ি, সংসার, কাজের লোক, ড্রাইভার— সব কিছুর উপর মা-র অতন্দ্র লক্ষ্য।

আপনার দুই বোন — করিনা আর করিশমা?

ওরা ছোটবেলাতেই আলাদা চলে যায়। সেই অর্থে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু আফটার অল আমরা তো একই রক্ত। একটা প্রচণ্ড টান তো থেকেই যায়। করিশমা প্রচণ্ড খাটতে পারে। খেটে খেটে ও যে জায়গায় পৌঁছেছে, তা অনবদ্য। দুই বোনই তো বলতে গেলে নিজের চেষ্টায় লড়াই করে উঠেছে।

করিশমা কী খেটেছে, আমি এক এক সময় অবাক হয়ে ভাবি। চারটে পাঁচটা করে ছবি করেছে চার মাসের মধ্যে। করিনা সে দিক দিয়ে একেবারেই ন্যাচারাল। ভীষণ স্পন্টেনিয়াস। ওকে কোনও খাটতেই হয় না। জাস্ট সেটে পৌঁছে ডায়লগগুলো বলে দিলেই যেন হল— এতটাই ভাল অ্যাক্ট্রেস। গ্রেট কনট্রিবিউশন করিনার। সবচেয়ে আমার যেটা ভাল লাগে, ওরা কপূর পরিবারের ছাতার বাইরে বেরিয়েও কত অ্যাচিভ করেছে। আমি খুব গর্বিত করিনার জন্য।

করিনা আর আপনাকে নিয়ে কেউ একসঙ্গে ছবি বানালে কেমন হয়?

দারুণ হয়। আজ অবধি কেউ বানায়নি। আমাদের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক। আশা করব কেউ কোনও দিন ভাই আর বোনের সম্পর্ক নিয়ে এমন একটা ছবি বানাবে যা আমাদের দু’জনের কাছেই চ্যালেঞ্জিং হবে।

সেটা তো ‘কফি উইথ কর্ণ’‌য়ে দেখা গেল। যখন করিনা আপনার পিছনে লেগে কার সঙ্গে আপনার বিয়ে (ক্যাটরিনা) সেটাও বলে দিলেন। আর সেটা বিশাল ব্রেকিং নিউজ হয়ে দাঁড়াল।

আরে, রেকর্ডিংয়ের আগের রাতে কর্ণের বাড়িতে একটা পার্টিতে আমাদের দু’জনের নেমন্তন্ন ছিল। সেখানেই ঠিক হয় যে শোতে একজন আর একজনের পিছনে লাগব। আর করিনাটা যা বিচ্ছু! (হাসি) প্রচুর মজা হয় এমনিতেও আমাদের দেখা হলেই। হাসাহাসি হয়।

ওদের বাবাকে কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম— রণধীর কপূর।

ইয়েস, ইয়েস, আমারও মনে করা উচিত ছিল। ডাব্বু আঙ্কলের দু’টো ছবি খুব মনে রাখার মতো। ‘জওয়ানি দিওয়ানি’ আর ‘কল আজ অউর কাল’। ‘জওয়ানি দিওয়ানি’তে জয়া বচ্চন ছিলেন। বেশ ভাল ছবি। ‘কসমে ওয়াদে’ও তাই। তা ছাড়া উনি ‘হেনা’ করেছেন। ডাব্বু আঙ্কল কিন্তু কিছু মনে রাখার মতো কাজ করে গিয়েছেন। বাকিদের পাশে ওঁকে যত কমই লাগুক না কেন।

আমাদের পরিবার থেকে আর একজনের কথা বলতে চাই— রাজীব কপূর। কাকাদের মধ্যে ও-ই আমার সবচেয়ে কাছের রাজীব আঙ্কল। আমায় জীবনে প্রথম নাইটক্লাবে নিয়ে যায়। ওই আমায় প্রথম হাতে বিয়ারের গ্লাস তুলে দিয়ে বলেছিল ‘‘নে, দু’ঢোক মার।’’ অ্যাক্টর-ডিরেক্টর হিসেবে ও কেন জানি না সুবিধা করতে পারেনি। ওকে লোকে শাম্মী কপূরের ছায়া ভাবতে শুরু করল। চাইলে ও সেটা কাটাবার চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু লড়াইতেই গেল না। আমার আজও মনে হয়, রাজীব কপূরের ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়ার আছে। নইলে একটা প্রতিভার মৃত্যু ঘটবে অহেতুক।

আপনি রণবীর কপূর। আধুনিক প্রজন্মের, যাকে বলে জেনারেশন ওয়াইয়ের জনপ্রিয়তম নায়ক। একই সঙ্গে আবার আপনি কপূর খানদানের সবচেয়ে উজ্জ্বল সাঁঝবাতি। যৌথ দায়িত্ব। কী করে সামলাবেন এই অনন্ত চাপ? কিছু ভেবেছেন- টেবেছেন?

টু বি অনেস্ট আমি এটাকে চাপ হিসেবে দেখি না। দায়িত্ব হিসেবে দেখি। সাকসেসের কোনও ফর্মুলা আমার জানা নেই যে আমি অমুকটা করলেই সাকসেসফুল। কিন্তু নিজের ট্যালেন্টের ব্যাপারে আমার যথেষ্ট ঔদ্ধত্য আছে। দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার হওয়াটা আমার হাতে নয়। কারণ তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত। ভাগ্য জড়িত। আরও নানা কিছু জড়িত। তবে আমার ভিতরে একটা নীরব রংবাজি কাজ করে যে, আধুনিক সময়ে দেশের সেরা অভিনেতা হওয়ার মশলা আমার ভিতর রয়েছে।

আমার সামনে তো সুযোগও রয়েছে। দেশের নামী ফিল্মমেকাররা আমার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহী। এ বার আমি যদি সৎ ভাবে পরিশ্রম করি, যদি আমার মাথা ঘুরে না যায়, তা হলে তো দু’টো জিনিসের মিশ্রণ অনিবার্য— সুযোগ আর লক্ষ্য পূরণে আন্তরিক খাটনি। তাই যদি ঘটে আমার না হওয়ার কোনও কারণ নেই। খানদানের মশালটা জ্বালিয়ে রাখতে পারব।

রণবীর, আপনার কথাগুলো ভীষণ ইন্সপায়ারিং।

থ্যাঙ্ক ইউ, সো মাচ।

Ranbir Kapoor Gautam Bhattacharya Rishi Kapoor shashi kapoor ananda plus abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy