Advertisement
E-Paper

চিঠঠি আয়ি হ্যয়

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসটাইমের পৃথিবীতে হাতে লেখা চিঠির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তিনি। সঙ্গীত জীবনের পঁয়ত্রিশ বছরে পড়ে তাঁর পছন্দের সেরা পাঁচ গানের গল্প বললেন পঙ্কজ উধাস। শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসটাইমের পৃথিবীতে হাতে লেখা চিঠির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তিনি। আনন্দplus এক্সক্লুসিভ-এ সঙ্গীত জীবনের পঁয়ত্রিশ বছরে পড়ে তাঁর পছন্দের সেরা পাঁচ গানের গল্প বললেন পঙ্কজ উধাস।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০০:০১

চিঠি নয় ফোন এসেছিল সেদিন আমার কাছে। আজ মনে হয় ওই ফোনটাই বদলে দিল আমার জীবন।

ফোনের ওপার থেকে বলা হল ‘‘আমি রাজেন্দ্রকুমার বলছি। আমি চাই ‘নাম’ ছবিতে তুমি অভিনয় করো।’’

তত দিনে ‘মুকারার’, ‘তরন্নাম’য়ের মতো আমার গজলের অ্যালবাম দেশ বিদেশে সাড়া ফেলেছে। বিদেশেও গজলের কয়েকটা অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। এই রকম অবস্থায় হঠাৎ অভিনয় করতে যাব কেন আমি? ওটা তো আমার জায়গা নয়!

কিন্তু মুখের ওপর রাজেন্দ্রকুমারের মতো মানুষকে ‘না’ বলার সাহস পাইনি। অবস্থা সামাল দিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আর তাতেই চটে গেলেন রাজেন্দ্রকুমার। আমার ভাই মনহর উধাসের কাছে ফোন গেল—‘‘তুমহারা ভাই তো বহত বদ তমিজ হ্যায়!’’

ভুল বোঝাবুঝির অবসান হল। অনেক সাহস সঞ্চয় করে রাজেন্দ্রকুমারকে অভিনয় না করার কারণটা বুঝিয়ে বলতে পেরেছিলাম। বুঝলাম রাজেন্দ্রকুমার ছবিতে আমাকে দিয়ে লাইভ গাওয়াতে চান।

পাঁচটা সিটিংয়ে লেখা হল সাত মিনিটের গান। মনে আছে আনন্দ বক্সীজি খুব সুন্দর বলেছিলেন, ‘‘আমাকে গান নয়, লিখতে হবে চিঠি। যাতে থাকবে ঘরে ফেরার সুর।’’

লেখা হল ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়। বতনসে চিঠঠি আয়ি হ্যায়। বড়ে দিনো কে বাদ হম বেওয়াতনকো ইয়াদ। ওয়াতন কি মিট্টি আয়ি হ্যায়।’

তখন ফেসবুক বা স্কাইপ কিছুই ছিল না। প্রবাসের সঙ্গে দেশের সংযোগের মাধ্যম ছিল এই গান। দেশের জন্য মনখারাপ হলে এই গানের সুরই প্রবাসের সেই মানুষগুলোর সঙ্গে তাঁদের প্রিয়জনদের বেঁধে দিত।

এই ভাবেই পঁয়ত্রিশটা বছর পেরিয়ে গেল। আজ খুব মনে পড়ছে চিঠি শুরুর সেই সময়।

এত বছর পর ফিরে তাকালে মনে হয় ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’-এর হাত ধরে নামী-অনামী কত মানুষের কাছে আমি পৌঁছতে পেরেছি। এই গান থেকে এ জন্মে যেন পঙ্কজ উধাসের মুক্তি নেই। সেই ‘চিঠি’র বয়স এখন তিরিশ। কিন্তু তার রেকর্ডিং সহজ ছিল না। ‘নাম’ ছবির সেই দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল মুম্বইতে। লাইভ কনসার্টের পরিবেশ তৈরি করে ষাট জন মিউজিশিয়ানের সঙ্গে এক টেকেই ওকে হয়েছিল ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’। তখন লাইভ গাইতে হত। গানটা যতটা চড়া পর্দায় খেলে, ততটাই নীচের দিকেও যায়।

সে কী টেনশন আমার! আমি তো রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর ভেবেছিলাম আবার গাইতে হবে। হঠাৎ দেখি লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রী গানটা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আর লক্ষ্মীকান্ত বললেন, ‘এ গান অনেক দূর যাবে।’ এই তো সে দিন দিল্লির এক কনসার্টে একটি ছেলে আমার হাত ধরে কেঁদে ফেলল। একটু আগেই নাকি স্কাইপে মায়ের সঙ্গে ভোপালে কথা বলেছে সে। বলল, ‘‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ শুনে মনে হল আমার মা বাবার কথা সামনে শুনছি...।’’

এমন অনুষ্ঠান আমার মনে পড়ে না, যেখানে ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গাইতে হয় না। মঞ্চ থেকে দেখি চিঠির সুরে অজস্র মানুষের চোখে জল। কোনও মা বিদেশে পড়তে যাওয়া ছেলের জন্য কেঁদে ফেলছেন, কেউ বা সুরের মধ্যে নিজের ভালবাসার মানুষকে দেখতে পাচ্ছেন।

জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে বিন আপকে

‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’য়ের প্রবল জনপ্রিয়তার পর ইন্ডাস্ট্রিতে রটে যায় যে-ছবিতে পঙ্কজ উধাসের গানের লাইভ দৃশ্য থাকবে সেই ছবি সুপারহিট।

ভেতর থেকে কোনও গান ভাবিয়ে না তুললে সেটা কখনওই কিন্তু রেকর্ড করতাম না। হঠাৎই এক দিন সমীরের লেখা একটি গান নজরে এল। ‘সাজন’ ছবিতে ‘জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে বিন আপকে’ গানটির কথার জন্য গেয়ে ফেললাম।
শ্যুট হল, সঙ্গে মাধুরী দীক্ষিত, সঞ্জয় দত্ত, সলমন খান। আমার গান শুনে দেখি মাধুরীও গেয়ে উঠছে। অনেকেই জানে না, ও অসম্ভব ভাল গায়। শ্যুট চলাকালীন একটা মজার ঘটনা। গানটা শ্যুট হওয়ার পর সলমন হঠাৎই বলে উঠল, ‘‘বাঃ পঙ্কজ ভাই বাঃ!’’ ক্যামেরা তখনও অন। চিত্রনাট্যে কোথাও এই সংলাপ ছিল না। কিন্তু সলমন এত স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছিল যে, সংলাপটি রেখে দেওয়া হল।

আজও অনুষ্ঠানে গিয়ে এই গানটা আমাকে গাইতেই হয়। আর দর্শকের মাঝখান থেকে কেউ না কেউ বলবেই, ‘‘বাঃ পঙ্কজ ভাই বাঃ!’’

চাঁদি জ্যায়সা রং

প্রেমের গান গাইতে গাইতে অনেকের কাছেই গায়কেরা অদৃশ্য প্রেমিক হয়ে যায়। আজ আনন্দplus-কে বলতে দ্বিধা নেই, ভালবাসার রঙিন খামে আজও প্রচুর চিঠি এসে পৌঁছায় আমার কাছে। আসে হোয়াটসঅ্যাপ ইমেলে প্রেমের বার্তা।

জানি এই ভালবাসা আমার গানের জন্য। আমার জন্য নয়। আমিও এক সময় প্রেমে পড়েছি, গেয়ে উঠেছি ‘চাঁদি জ্যায়সা রং’। কত লোকে বলেছে আমায়, এই গান শুনিয়ে বা গেয়ে তাঁরা প্রথম প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এ গান তো অনুষ্ঠানে আমাকে গাইতেই হয়। আর গাওয়ার আগে বলে নিই, প্রেমিকা যদি রেগে থাকেন এই গান শোনার পর আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি অন্তত সাত দিনের জন্য তিনি রাগবেন না। আমার তো মনে হয় এই গান প্রেমের চিরকালীন ন্যাশনাল অ্যানথেম।

অউর আহিস্তা কি জে বাতে

আমার তো মনে হয় ভালবাসার কোনও সীমানা নেই, নেই কোনও ভাষাও। সেই কারণে ‘অউর আহিস্তা কি জে বাতে’র ভিডিয়ো শ্যুটে একজন অস্ট্রেলিয়ান ছেলের সঙ্গে ভারতীয় মহিলার প্রেমকাহিনি বলা হয়েছিল।

আমার রোম্যান্স বৃষ্টির সঙ্গে। কেবলই খুঁজি বৃষ্টিকে। বৃষ্টি আমাকে দিয়ে গান গাইয়ে নেয়। সময় পেলে ‘আরজু’ দেখতে বসে যাই। অভিনেত্রী সাধনা আমার খুব প্রিয়।

দিওয়ারো সে মিলকর রোনা আচ্ছা লগতা হ্যায়

এক বার গজল ফেস্টিভ্যালে গাইছি, ‘‘দুনিয়া ভর কি ইয়াদেঁ হমসে মিলনে আতি হ্যায়। শাম ঢলে ইস সুনে ঘরমে মেলা লগতা হ্যায়। হম ভি পাগল হো জায়েঙ্গে অ্যায়সা লগতা হ্যায়। দিওয়ারো সে মিলকর রোনা আচ্ছা লগতা হ্যায়।’

খবর এল আমার বাবা আর কিছুক্ষণ! সে দিনও গান বন্ধ করতে পারিনি। গান শেষ করেই ছুটে যাই হাসপাতালে। শেষ বার দেখেছিলাম বাবাকে... এখনও এই গান গাইতে গাইতেই বাবাকে দেখি...

প্রেমের গান কখন যেন মৃত্যুতে এসে দাঁড়ায়। আবার ফিরিয়েও নিয়ে যায় প্রেমে।

পুনশ্চ

আজ যখন শুনি অমিতজি (অমিতাভ বচ্চন) বলেন ‘জলসা’য় আমার গান বাজে, বুঝতে পারি না কী বলব। যখন ওই বিখ্যাত গলায় বলেন আমার গানের বিষয়ে তিনি খবর রাখেন, তখন মনে হয় এই মন্তব্যগুলোর জন্যই তো জীবনে বেঁচে থাকা।

যেমন বন্ধু সুনীল গাওস্কর। সঙ্গীত জীবনের শুরু থেকে ও আমার সঙ্গে। বাইরে গেলে আজও ওর ট্র্যাভেল ব্যাগে থাকে আমার গজল।

ভাগ্যবান না হলে সচিন ওঁর আত্মজীবনীতে আমার গানের কথা লেখে? যে দিন পড়লাম, সে দিন বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। সচিন লিখছে ‘‘আমি, আমার পরিবার বিশেষ করে আমার বাবা পঙ্কজ উধাসের গানের ভক্ত। ওর গান শুনতে শুনতে এক সময় রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যেত।’’

শাহরুখ টুইটে লিখেছে পঙ্কজ উধাসকে সে কোনও দিন ভুলতে পারবে না। কারণ জীবনের গোড়ায় দিল্লিতে আমার একটি অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের আসনে বসিয়ে প্রথম টাকা রোজগার করেছিল সে। আজীবন শাহরুখ আমার গানের ভক্ত।

এঁরা সকলেই আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন।

fab five gajals fab five songs five gajals pankaj udhas pankaj udhas journey pankaj udhas songs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy