Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

ফ্যাশন উইক ব্যাপারটা ক্লান্তিকর

বলছেন ডিজাইনার ওয়েন্ডেল রডরিক্স। সামনে নাসরিন খানতিনি ভারতের সেরা ডিজাইনারদের মধ্যে এক জন। তাঁর ডিজাইন নকল হয় সারা ভারতে। এতে তিনি রেগে যান। কিন্তু তার পরেই অন্য ডিজাইনারদের সৃষ্টিশীলতার অভাব দেখে হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘গত সাতাশ বছর তো এমনটাই হয়ে আসছে, এটাই জীবন।’’

র‌্যাম্পে ওয়েন্ডেল রডরিক্স। সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোন।

র‌্যাম্পে ওয়েন্ডেল রডরিক্স। সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোন।

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

তিনি ভারতের সেরা ডিজাইনারদের মধ্যে এক জন। তাঁর ডিজাইন নকল হয় সারা ভারতে। এতে তিনি রেগে যান। কিন্তু তার পরেই অন্য ডিজাইনারদের সৃষ্টিশীলতার অভাব দেখে হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘গত সাতাশ বছর তো এমনটাই হয়ে আসছে, এটাই জীবন।’’

গত বছর ওয়েন্ডেল পদ্মশ্রী পান। এপ্রিল মাসে সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে তিনি পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সেরা পুরস্কার। এই দুই সম্মান পেয়ে ওয়েন্ডেল যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত হলেও জীবনের লড়াই ছাড়তে নারাজ। পুরস্কার তাঁর কাছে ভাল কাজের স্বীকৃতি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

ওয়েন্ডেল মনে করেন ফ্যাশন মানেই নিত্যনতুন পরিবর্তন। প্রত্যেক মরসুমেই লুক বদল হয়। তবে যেটা কখনও পরিবর্তন হয় না তা হল নিজেকে ভাল দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণ করাই একজন ডিজাইনারের কাজ। ‘‘জামাকাপড় সবাই ভালবাসে। এটা মানুষের স্বভাব। ডিজাইনারদের কাজ হল সেই চাহিদা পূরণ করা,’’ বলেন তিনি। তাঁর মতে নরেন্দ্র মোদী এ দেশের সব চেয়ে ফ্যাশনেবল সেলিব্রিটি। ‘‘কিন্তু নিজের নাম বোনা যে স্যুট তিনি পরেছিলেন সেটা মোটেও আমার পছন্দ নয়,’’ বলছেন ওয়েন্ডেল। মতপ্রকাশে তাঁর কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু ওয়েন্ডেল ট্রেন্ড বা ফ্যাশন নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। বললেন, ‘‘স্টাইলটাই আসল। ফ্যাশন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের একটা স্টাইল তৈরি করুন।’’

ওয়েন্ডেলের সহজ সরল প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটে তাঁর নকশায়। হাই এন্ড ফ্যাশন শুধু নয়, সাধ্যের মধ্যে থাকা রিটেল চেনের পোশাকের ডিজাইনেই হোক বা একটা সাধারণ সাদা শাড়িকে ভিড়ের মধ্যে চিনিয়ে দেওয়াই হোক বা পুরুষদের দৈনন্দিনের লুঙ্গি, ধুতি, কুর্তা পায়জামাকে গ্ল্যামারাস করে তোলাই হোক—সবই যেন ওয়েন্ডেলের বাঁয়ে হাত কা খেল।

ওয়েন্ডেলের সাম্প্রতিক কালেকশন ‘ইয়োগা কাম’ সেজেছে রোজকার পরনের আরামদায়ক পোশাকে। কে-ই বা ভাবতে পেরেছিল তুমুল ফ্যাশন সচেতন এক জন লোক হঠাৎ করে ডিজাইনার লুঙ্গি কিনতে চাইবেন। ওয়েন্ডেল হেসে বললেন, ‘‘এই লুঙ্গিগুলো দোকান থেকে মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আর সব চেয়ে আশ্চর্যের কথা মহিলারাও এই পোশাকগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ দিকে পুরুষেরা মহিলাদের কুর্তা কিনতে চাইছেন। সব দিক থেকেই বোনাস।’’

ওয়েন্ডেল নিজের যৌনতা নিয়েও স্পষ্টবাক। পার্টনার জেরম ম্যারলকে বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৮ সালে। যে দেশে যৌনতা নিয়ে এত রাখঢাক সেখানে নিজের যৌনতার স্বীকৃতি কি খুব সহজে পেয়েছিলেন তিনি? ‘‘আমরা কি এখনও সেক্স নিয়ে খোলাখুলি কথা বলি? ভালবাসা নিয়ে কথা বলাই ভাল। আর সেক্স, সে তো বন্ধ ঘরের ব্যাপার। তিন দশক ধরে আমি একজনকে ভালবাসি। এই বছর আমাদের ভালবাসা বত্রিশে পা দিল। এই ধরনের ভালবাসাকে কি অপরাধ বলা যায়?’’ জিজ্ঞাসা করেন ওয়েন্ডেল।

ভারতের ফ্যাশনের হালহকিকৎ নিয়ে অসন্তুষ্ট তিনি। ‘‘ভারতবর্ষে উচ্চদরের ফ্যাশন বলে কিছু নেই। ভাল কিছু দর্জি আছেন,’’ জিদের সুরে বলেন তিনি। এক দিন অন্তর অন্তর নতুন সব ফ্যাশন উইক হয় দেখে হাসি পায় ওয়েন্ডেলের। ‘‘ফ্যাশন উইকের পুরো ব্যাপারটাই খুব ক্লান্তিকর হয়ে উঠছে,’’ বলেন তিনি।

দেশের তাবড় মডেলদের সঙ্গে কাজ করেছেন ওয়েন্ডেল। বলিউডের নায়িকারাও বাদ নন তাঁর তালিকায়। তা সত্ত্বেও নতুন নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করতে ওয়েন্ডেলের কোনও ক্লান্তি নেই। নতুন ডিজাইনারদের জন্য তাঁর পরামর্শ— ‘‘আমার ধারণা সাত বছর কাজ করার পরই একজন প্রকৃত ডিজাইনার হয়ে ওঠেন। প্রত্যেক ডিজাইনারের উচিত কোনও এক জন বিশিষ্ট ডিজাইনারের অধীনে অন্তত চার বছর কাজ করা।’’

ইতিহাস এবং স্থাপত্যের আনাচে কানাচে ভ্রমণ করা ওয়েন্ডেলের প্রিয় শখ হলেও কোনও ভ্রমণের বই লেখার কথা ভাবছেন না। তবে গোয়া শহরের পটভূমিতে একটা গল্পের বই লিখে ফেলেছেন। সম্পাদনার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে।

এক মরসুমের কালেকশনে তিনি দু’ধরনের পোশাক বানান। বলছেন, ‘‘পোশাকের ডিজাইনে আমি বৈচিত্র আর বৈপরীত্য ভালবাসি। এক দিকে সাদা রঙের অন্য দিকে উজ্বল রঙিন পোশাক বানাই আমি।’’ কোনও বিশেষ সাইজের পোশাক না বানিয়ে সব ধরনের নারী-পুরুষের পোশাক বানান তিনি। বললেন, ‘‘গড়পড়তা ভারতীয় মহিলাদের জন্য পোশাক বানাই। ৩২-৩৮-৪০ বডি স্ট্যাটিসটিক্সের কথা মাথায় রেখে পোশাক ডিজাইন করি।’’

ওয়েন্ডেলের মানসিকতার মধ্যে যে উদারতা আছে, তা দেখে মনে হয়, তিনি ডিজাইনার না হলে জেসুইট পুরোহিত হতেন। ‘‘সত্যি আমি ওঁদের সেবামূলক কাজের একান্ত অনুরাগী। আদিবাসীদের সঙ্গে ওঁদের সম্পর্কটা দেখার মতো,’’ বলেন ওয়েন্ডেল। শুধু যে ফ্যাশন ডিজাইন করেন তাই নয়, ভালবাসেন সুস্বাদু নানা খাবার তৈরি করতে। ডিজাইনার হওয়ার আগে ছিলেন কেটারিংয়ে।

ফ্যাশন দুনিয়ায় তাঁর সব চেয়ে বড় অবদান কী? ‘‘আমি ফ্যাশনে প্রথম মিনিমালিজম ব্যাপারটা নিয়ে এসেছি। তা সে রিসর্টওয়্যার হোক বা ইকোফ্রেন্ডলি জামাকাপড়। ভারতের প্রথম ফ্যাশনউইকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলাম আমি। মনে হয় আমার রাজ্য, আমার দেশ এই দুয়েরই আমি গর্ব… ওহ গড! নিজেকে নিয়ে কী গর্বটাই না করছি! এ বার আমার থেমে যাওয়া উচিত,’’ জোরে হেসে ওঠেন ওয়েন্ডেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE