হরিন্দর শনিবার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘পাকিস্তান থেকে ফিরে সেহমত গভীর অবসাদে ভুগছিলেন। মানুষ খুনের পাপবোধ তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই তিনি আশ্রয় নেন পঞ্জাবের মালে-র কোটলায়।’’ এখানেই ছিল সেহমতের শ্বশুরবাড়ির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত পরিচারক আব্দুলের (নাম পরিবর্তিত) আদি বাড়ি, যাঁকে পাকিস্তানে খুন করেছিলেন সেহমত। দেশভাগের সময়ে নিজের পরিবারকে হারিয়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া আব্দুলই সবার আগে সেহমতের চরবৃত্তি ধরে ফেলেন। তখন গাড়িতে পিষে তাঁকে মেরে ফেলেছিলেন সেহমত।
হরিন্দর বলেন, ‘‘আব্দুলের আর্তনাদ তাড়া করে বেড়াত সেহমতকে। চোখ বন্ধ করলেই তিনি দেখতে পেতেন ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা। সেই অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই তাঁকে আব্দুলের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেহমতের নিজেরও তাতে সায় ছিল।’’ গত মাসেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। হরিন্দর চান, সেহমতের আসল পরিচয় এ বার সবার সামনে আসুক। আগামী জুন মাসে মুম্বইয়ে সেহমতের জীবন নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।
‘কলিং সেহমত’ উপন্যাসের লেখক হরিন্দর সিক্কা।
কোথায় পেলেন সেহমতকে? প্রাক্তন নৌসেনা-কর্তা হরিন্দর জানাচ্ছেন, সূত্রটা মিলেছিল কার্গিল যুদ্ধের সময়ে। কী করে এত বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ঘটে গেল, তাই নিয়ে কার্গিলে দাঁড়িয়ে একদিন সেনা-জওয়ানদের খুব বকাবকি করছিলেন হরিন্দর। ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে গালিও দিয়েছিলেন। তখনই এক জওয়ান বলে ওঠেন, ‘‘সবাই বিশ্বাসঘাতক হয় না। আমার মা বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না।’’ সেহমতকে খোঁজার সেই শুরু।
প্রথমে সেহমত মুখ খুলতে চাননি। বারবার বলতেন, তিনি চান তাঁর পরিচয় যেন কেউ না জানে! কাশ্মীরের মেয়েটির বাবা নিজে ভারতের চর হয়ে কাজ করতেন। তিনিই রীতিমতো ছক কষে এক পাক সেনাকর্তার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। সেহমত সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে শ্বশুরবাড়ি চলে যান, যেখানে বধূবেশে তথ্য পাচার করাই তাঁর কাজ।
হরিন্দর নিজে যে সেহমতকে দেখেছেন, তিনি এক শিখ সন্তের সংস্পর্শে পুরোপুরি আধ্যাত্মিক জীবন কাটাতেন। তাঁর অনুরোধেই হরিন্দর নিজে ‘নানক শাহ ফকির’ নামে একটি ছবিও করেছিলেন। এখন সময় এসেছে প্রয়াত সেহমতের আসল পরিচয় সামনে আনার, হরিন্দর চান গোটা দেশ এই আত্মত্যাগীকে চিনুক!