গল্পের শুরু হয়েছিল রূপকথার মতো। আন্দাজ করা হয়েছিল শেষটাও অনিবার্যভাবে তেমন হবে।
আমার কথাটি ফুরোল, নটে গাছটি মুড়োল। অথবা দেন দে লিভড হ্যাপিলি দেয়ারআফটার। বইয়ের শেষ পাতায় যেমন লেখা থাকে— তাহার পর তারা সুখেই কালাতিপাত করিতে লাগিল।
‘তারা’ মানে বিদ্যা বালন ও তাঁর ঘনিষ্ঠতম পরিচালক-বন্ধু সুজয় ঘোষ।
মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কেউ বলতেন, নিজের বিয়েতে ক্রিশ্চান সমাজের মতো বেস্ট ম্যান রাখার লোকাচার থাকলে বিদ্যার বিয়েতে তাঁর স্বামীর দিক থেকেও অবধারিতভাবে সুজয়ই হতেন বেস্ট ম্যান। এমন নিবিড় সম্পর্ক দু’জনের।
অধুনা এখানেই মাঝখানে বাড়তি শব্দ যোগ করতে হচ্ছে— ছিল।
‘কহানি’ নামক ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম মাইলফলক সিনেমার পরিচালক এবং নায়িকার মধ্যে আজকের দিনে নাকি বাক্যালাপই নেই। সুজয়ের ছবি ‘দুর্গা’তে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করবেন বলেও বছরখানেক আগে পিছিয়ে আসেন বিদ্যা। সুজয় এটা ভাবতেই পারেননি যেহেতু বিদ্যাকে জানিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেই ‘দুর্গা’র কাজে এগিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে বিদ্যা সেই স্বপ্নের প্রকল্প থেকে পিছিয়ে যাবেন, তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।
কাছাকাছি সময়ে সুজয় স্ক্রিপ্ট রেডি করছিলেন ‘কহানি টু’র জন্য। দক্ষিণ কলকাতার লেক রোডের পাশে সেই গেস্টহাউজটাতে বসেই, যেখানে তিনি ‘কহানি’ লিখেছিলেন। ফিল্মেও যা দেখা গিয়েছে, সেই মোনালিসা গেস্টহাউজ। কিন্তু বিদ্যার আচমকা ‘দুর্গা’ না করা এবং মধ্যবর্তী সময়ে নানান সঙ্কেতদান থেকে সুজয় বুঝে যান ‘কহানি টু’র বেলাতেও এখন তাঁকে হয়তো দীর্ঘসময় নিয়ে এককালের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে রাজি করাতে হবে বা রাজি করাতে পারবেন না।
ফিল্ম মহলের খবর, তীব্র অভিমানে আচ্ছন্ন সুজয় আর সে রাস্তা মাড়াননি।
ফল দাঁড়িয়েছে এই ২০১১র ‘কহানি’র মতো জাতীয় পর্যায়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া ফিল্ম বানিয়েও গত চার বছর পরিচালক সুজয়ের কাজ কেউ দেখেনি। সুজয় নিজেও আনন্দplus-কে বলছিলেন, ‘‘একেবারে কম বয়সে ধীরেসুস্থে কাজ করার সময় থাকে। আমি যে বয়সে পৌঁছেছি তাতে আরও তাড়াতাড়ি কাজ করা উচিত।’’
ঘনিষ্ঠ মহলের খবর সিদ্ধার্থ রয় কপূরের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামী ও ঘর বসানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে খুব বেশি করে জড়িয়ে পড়েন বিদ্যা। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় কমতে থাকে। সেই সময় থেকেই নাকি দু’পক্ষে তীব্র মানাভিমানের শুরু। সুজয় নিজে অবশ্য মনে করেন, বিদ্যার ঋণ তিনি কোনও দিন ভুলবেন না। ‘‘‘কহানি’তে বিদ্যাই সব। বিদ্যা ছাড়া ‘কহানি’ সম্ভব ছিল না,’’ বলছিলেন সুজয়। আজও তাঁর গলা আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, যখন বলেন, ‘‘‘আলাদিন’ সুপারফ্লপ করার পর আমার চারপাশটা মরুভূমির মতো হয়ে গিয়েছিল। দুনিয়ার কাউকে ধারেকাছে দেখতে পাইনি। মরূদ্যানের মতো শুধু দু’জন পাশে ছিলেন— মিস্টার বচ্চন আর বিদ্যা।’’
ঘটনা হল এ সবই অতীত। গানের ভাষায় পুরনো সেই দিনের কথা।
কিন্তু তিনি, সুজয়ই বা বিদ্যার সঙ্গে ইদানীং দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছেন কেন? বন্ধুত্বে আবার ইগো থাকে নাকি? পরিচালক একটা অদ্ভুত উত্তর দিলেন, ‘‘বিদ্যার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মোটেই খারাপ নয়। কিন্তু মুম্বই এমন অদ্ভুত শহর যে সেখানে রাস্তার সঙ্গে দেখা বা প্রেম মানুষের চেয়ে বেশি হয়।’’ খুব সত্যি কথা।
কিন্তু আরও বড় সত্যি হল, সেই জ্যামে পড়ে লোকে আরও বেশি করে ফোনচাপাটি করে। এককালের বন্ধুর জন্য সুজয় কি মোবাইলটাও খুলতে পারেন না? তাছাড়া এই শহরেই তো তাঁদের বন্ধুত্ব দানা বেঁধেছিল। মুম্বই ট্রাফিক তাঁদের সম্পর্কে পলেস্তারা ফেলে দিচ্ছে এটা শুনলে তো গোমড়ামুখোও হেসে উঠবে!
আনন্দ প্লাসের প্রশ্ন, মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি কি এত হৃদয়হীন হয়ে পড়ল নাকি যে দুই বন্ধুকে ডেকে, মুখোমুখি বসিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার মতো কোনও লোক পাচ্ছে না? বিশাল কিছু গণ্ডগোল তো হয়নি, যা হয়েছে তা হল ভুল বোঝাবুঝি,অভিমান আর তা থেকে বেড়ে যাওয়া মানসিক দূরত্ব। কোনও সন্তোষজনক তৃতীয় পক্ষ দাঁড়িয়ে গেলে না মেটার কারণ নেই।
আপাতত অবশ্য পর্যাপ্ত তিক্ততাই ঘুরছে বায়ুমণ্ডলে। সুজয়ের নিজের পরের ছবির শ্যুটিং ২০১৬তে শুরু করছেন কলকাতায়। সেখানে সম্ভাব্য ক্রেডিট টাইটেলে এখনও বিদ্যা বালন বলে কারও নাম নেই। সম্ভাব্য দু’-তিনজন নায়িকার মধ্যেও বিদ্যা নেই। আছেন নওয়াজ আর সইফ। নায়িকা পরে বাছা হবে। যা ‘কহানি’র তুঙ্গস্পর্শী সাফল্যের পর দূরতম কল্পনাতেও কেউ ভাবেনি।
আর বিদ্যা? সুজয়ের ছবি না করুন, সংসার সামলে নতুন ফিল্মের কাজ তো দিব্যি করছেন। যার চূড়ান্ত প্রচারের কাজে জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন ছবির প্রচারের কাজে তাঁর কলকাতায় আসার কথা।
ছবির নামটা অদ্ভুতভাবে দুই বন্ধুর মানসিক দূরত্বের প্রতীকী। ‘এক অধুরি কহানি’।
বিদ্যা-সুজয়ের অসমাপ্ত কাহিনি।
সুজয় ঘোষ বললেন
ঝগড়াটগড়া কিছু নয়। বিদ্যা এখনও আমার বন্ধু। একটা ফোন করলেই দেখব সব কিছু আগের মতো আছে। এমনিতেই অনেক দিন ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। কথাও না। মুম্বই আসলে একটা বিচিত্র শহর। যেখানে কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎই হয় না। এমন জায়গা, যেখানে কোনও মানুষের চেয়ে রাস্তার সঙ্গে প্রেম করার সুযোগ বেশি। রাস্তাতেই এত সময় কাটাতে হয়। বিদ্যার সঙ্গে এখনও কোনও ছবি হচ্ছে না, এটা সত্যি কথা। ‘কহানি’র সিক্যুয়েল করব ভেবেছিলাম, কিন্তু স্ক্রিপ্টটা ঠিক জুতসই মনে হল না। আমি একটু খুঁতখুঁতে লোক। একেবারেই পছন্দ না হলে দুড়ুমদাড়ুম স্ক্রিপ্ট লিখতে পারি না। আর একটা সমস্যা, অন্য অনেকের মতো আমি লিখতে লিখতে প্যারালালভাবে আরেকটা লেখা লিখতে পারি না। ‘দুর্গা’ লিখেছিলাম বিদ্যার কথা ভেবেই। ও যখন বলল, করতে পারবে না, তখন আর অন্য কাউকে ওর জায়গায় ভাবা সম্ভব ছিল না। আমি তখন প্রচণ্ড রেগেটেগে যাইনি। বর়ঞ্চ আমার টেনশন হয়েছিল ওর শরীরস্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না তা নিয়ে। এখন আমি যে ছবিটা ভেবে রেখেছি তাতে আছে সইফ আর নওয়াজ। নায়িকা এখনও ভাবিনি। অনেকেই আছে যারা ভাল অভিনয় করে। কঙ্গনা আছে— দুর্দান্ত। ‘পিকু’তে দীপিকাকে দেখে আমি জাস্ট ‘হা’ হয়ে গেছি। ভাবতেই পারিনি এত পাওয়ারফুল অ্যাক্টিং ও করতে পারে। দেখি কাকে নিই। তবে শ্যুটিং ২০১৬তেই শুরু করব, গ্যারান্টি। কলকাতাতেই শ্যুটিং করব।
বিদ্যা বালন
তাঁকে এসএমএস করে সোমবার রাত পর্যন্ত উত্তর পাওয়া যায়নি। বিদ্যার উত্তর এলে ইন্টারনেট এডিশনে তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy