Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গি ফতোয়া থেকে কি ছাড় পাবেন মেরি কম

মণিপুরকে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মেরি কম। বলিউডের উপর জঙ্গি-আরোপিত ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে এতদিন বিশেষ হেলদোল ছিল না মণিপুরবাসীর। কোরিয় ও চিনা সিনেমা নিয়েই তাঁরা বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু এ বার মেরি কমের বলিউডি জীবচিত্র বা ‘বায়োপিক’-এর সৌজন্যে মণিপুরে কট্টরপন্থী ও উদারপন্থীরা আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

মণিপুরকে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মেরি কম। বলিউডের উপর জঙ্গি-আরোপিত ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে এতদিন বিশেষ হেলদোল ছিল না মণিপুরবাসীর। কোরিয় ও চিনা সিনেমা নিয়েই তাঁরা বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু এ বার মেরি কমের বলিউডি জীবচিত্র বা ‘বায়োপিক’-এর সৌজন্যে মণিপুরে কট্টরপন্থী ও উদারপন্থীরা আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

এক দল বলছেন, ইন্টারনেটের যুগে এই নিষেধাজ্ঞার কোনও অর্থই হয় না। তাঁদের আবেদন, অন্তত মেরি কমের কথা ভেবে এই নিষেধাজ্ঞা আপাতত তুলে নেওয়া হোক। কট্টরপন্থীদের বক্তব্য, মণিপুরি সংস্কৃতিকে বলিউডয়ের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে এই নিষেধাজ্ঞা ছাড়া উপায় নেই। তবে ‘মেরি কম’ ছাড় পাবে কিনা তা নিয়ে এঁরা এখনও নীরব। এই প্রথম চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ‘মেরি কম’ ছাড় পাবে না, এটাও তাঁরা বলছেন না। উল্লেখ্য, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর মণিপুর ছাড়া সারা দেশেই প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘মেরি কম’ মুক্তি পাচ্ছে। আর মণিপুরবাসী অপেক্ষা করছেন!

২০০০ সালে জঙ্গি সংগঠন ‘রেভেলিউশনারি পিপল্স ফ্রন্ট’ মণিপুরের হলে বা কেব্লে হিন্দি ছবির প্রদর্শন, জোরে হিন্দি গান শোনা, এমনকী ‘জয় হিন্দ’ বলার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সিডি প্রদর্শনীও বন্ধ হয়। এতদিন মণিপুরিরা আমির-শাহরুখ-সলমন-হৃতিক-ক্যাটরিনা-করিনাদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদও ওঠেনি। কিন্তু এ বার ঘরের মেয়ে মেরিকে নিয়ে ছবি। আর তা মণিপুরেই মুক্তি পাবে না! নীরব হতাশা ক্রমশ সরব হচ্ছে। যদিও ইন্টারনেটের হাত ধরে ‘মেরি কম’ ট্রেলর ইম্ফল, চূড়াচাঁদপুর, বিষ্ণুপুরে ছড়িয়ে পড়েছে।

মেরি প্রিয়ঙ্কাকে বক্সিং প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। লড়াকু মেরি এ বারেও লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়েছেন, “আমার জয় রাজ্যের নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করেছে। এই ছবি তাদের বাড়তি প্রেরণা দিত।” মেরির স্বামী ওনলার কম জঙ্গি হামলায় তাঁর পিতাকে হারানোয় বোধহয় সাবধানী। তাঁর কথায়, “মেরির ছবি তাঁর জন্মভূমিতেই মুক্তি না পেলে আমাদের খুব খারাপ লাগবে।” মেরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীরাও হতাশ। এ সিংহ, ডব্লিউ চানুর মতো উঠতি বক্সারদের কথায়, “আমাদের দরিদ্র রাজ্যে এত প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে মেরি চ্যাম্পিয়ন। সেই অবিশ্বাস্য কাহিনী পর্দায় দেখলে সকলে আরও উৎসাহ পেত। সামগ্রিকভাবে নিষেধাজ্ঞা না তুললেও অন্তত এই ছবিটি মণিপুরে মুক্তি দেওয়া হোক।”

মণিপুর ফিল্ম ফোরামের কর্তারা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। ফেরামের প্রধান সূর্যকান্তের মতে, শুধু হিন্দি নয়, দেশের সব ভাষার ছবিই মানুষ দেখতে চান। সরকারের এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ছবির বিপণনকারী সংস্থা ‘ভায়াকম ১৮’ ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে। যে সংস্থা মেরির যাবতীয় বিষয় তদারক করে সেই আইওএস স্পোর্টস-এর এমডি নীরজ তোমর বলেন, “রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। আমরা মণিপুরে ছবিটির স্ক্রিনিং করাতে চাই।”

তবে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সওয়ালে নেমেছেন কিছু মানবাধিকার কর্মী ও জঙ্গি নেতা। সমাজকর্মী উর্মিলা চানম নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সওয়াল করে বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা কেন চাপানো হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট না জেনে শুধু নিন্দা করলে চলবে না। ঠিক সময় বলিউডের আগ্রাসন রোখা গিয়েছিল বলেই মণিপুরের সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। না হলে আমাদের সংস্কৃতি এতদিনে লুপ্ত হয়ে যেত।”

কিন্তু বলিউডের আগ্রাসন রুখলেও কোরিয়া বা চিনের ছবি তো মণিপুর ছেয়ে ফেলেছে! একে আগ্রাসন বলে মানতে নারাজ ঊর্মিলারা। তাঁর কথায়, “আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে চিন-কোরিয়ার সংস্কৃতির অনেক মিল। সেই সংস্কৃতি বহিরাগত নয়। অনেক আপন।”

যে জঙ্গি সংগঠনের নিষেধাজ্ঞার জেরে এই কাণ্ড, তাদের এক নেতার কথায়, “ইন্টারনেটের যুগে হিন্দি ভাষা বা বিনোদনকে রোখা সম্ভব নয়। আমরা তা জানি। আসলে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এটা ছিল আত্মরক্ষার লড়াই।” আরপিএফ নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা অনেকটাই সফল। রাজ্য এখন সংস্কৃতির দিক থেকে স্বনির্ভর। ওই নেতার কথায়, “আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি আরও কিছু দিন বাঁচার জীবনীশক্তি জোগাড় করে নিয়েছে। সৃজনশীলতাকে রুখতে চাই না। মেরি আমাদের ‘হিরো’।”

ছাড় পাবে মেরি? এখনও নীরব জঙ্গি নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE