Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লর্ডসে এ বার দিদিগিরি

বাঙালি মেয়ে, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার। খেতে ভালবাসেন ইলিশ। আর এই মুহূর্তে লর্ডসে সৌরভ-দ্রাবিড়ের পাশে বসে দাপিয়ে কমেন্ট্রি করছেন। বিশ্বক্রিকেটে আলোড়ন তোলা ইশা গুহ-র সঙ্গে লন্ডনে কথা বললেন ইন্দ্রনীল রায়বাঙালি মেয়ে, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার। খেতে ভালবাসেন ইলিশ। আর এই মুহূর্তে লর্ডসে সৌরভ-দ্রাবিড়ের পাশে বসে দাপিয়ে কমেন্ট্রি করছেন। বিশ্বক্রিকেটে আলোড়ন তোলা ইশা গুহ-র সঙ্গে লন্ডনে কথা বললেন ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:১৪
Share: Save:

ইন্টারভিউটা বাংলায় করব না ইংরেজিতে?

বাংলা আমি বুঝতে পারি। অ্যাটলিস্ট পাঁচ মিনিট গড়গড় করে বাংলায় কথাও বলতে পারব। কিন্তু তার পর, আই হ্যাভ টু শিফ্ট ইন ইংলিশ (হাসি)। তাই ইংলিশ হলেই ভাল।

ওকে, ডান।

থ্যাঙ্ক ইউ।

আচ্ছা, আপনার বাবা-মা তো কলকাতায় থাকতেন এক সময়?

হ্যাঁ, মা-বাবা কলকাতায় থাকতেন। কিন্তু আমার জন্ম ইংল্যান্ডেই।

কলকাতায় কোথায় থাকতেন আপনার বাবা-মা?

বাবা থাকতেন ফুলবাগানে। মা বালিগঞ্জ। তার পর বাবা-মা ইংল্যান্ডে চলে আসেন। তখন থেকেই আমরা এখানেই।
কিন্তু আজও আমাদের সঙ্গে কলকাতার একটা হৃদয়ের যোগ আছে। আই ফিল আই অ্যাম রিটার্নিং হোম। কলকাতায় গেলেই মনে হয় ঘরে ফিরলাম। আজও বাঙালি কুইজিন আমার সবচেয়ে পছন্দের। ইলিশ, চিংড়ি, রুই, মাংস-ভাত কিছুই বাদ দিই না। অসম্ভব ভাল লাগে বাঙালি সংস্কৃতি। ইন দ্যাট সেন্স আই অ্যাম ভেরি রুটেড।

তা ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাটা কি ছোটবেলা থেকেই?

ইংল্যান্ডে ভারতীয়দের বাড়ি গেলেই বুঝতে পারবেন সারা দিন ক্রিকেট দেখা হয় টিভিতে। আমাদের বাড়িতেও তাই হত। তখন ইংল্যান্ডের হাই ওয়াইকোম্বে থাকতাম আমরা। আমি, মা, বাবা এবং আমার দাদা, যে আমার থেকে সাত বছরের বড়। দাদা সারাক্ষণ ক্রিকেট খেলত এবং সেই বয়সে যেমন সব বোনেরাই দাদাদের অনুসরণ করে, আমিও অন্ধের মতো দাদাকে ফলো করতাম। শুধু ক্রিকেট না, ব্যাডমিন্টন, হকি, টেনিস সব খেলতাম দু’জনে মিলে। সারা দিন বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে এত খেলা চলত যে, একদিন বাবা আমাকে স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি করে দেয়। তখন আমার আট বছর বয়স। তার পর তো ধীরে ধীরে ক্রিকেট বিকেম মাই ওয়ার্ল্ড।

কিন্তু পড়াশোনা তো ছাড়েননি। বিএসসি (অনার্স) করেছেন বায়োকেমিস্ট্রিতে। নিউরোসায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পিএইচ ডি-র জন্য তৈরি করছেন নিজেকে?

হ্যাঁ, ক্রিকেট আর পড়াশোনায় ব্যালান্সটা ভাল করে করতে পেরেছি জীবনে। ইন দ্যাট সেন্স আই অ্যাম লাকি।

এই পড়াশোনার প্রতি টানটা কি বাঙ্গালি জিনের জন্য?

হাহাহাহা, হতে পারে জানেন। বাঙালিদের অ্যাকাডেমিকসের প্রতি একটা টান তো থাকেই ছোটবেলা থেকে। হয়তো আমার ক্ষেত্রেও ছিল। পড়াশোনার মাঝেই উল্ফসন ইনস্টিটিউট, কিংস কলেজে ওয়ার্ক এক্সপিরিয়েন্সের জন্য কিছু দিন কাজ করেছিলাম। তার পর সিডনি ইউনিভার্সিটিতেও কিছু দিন পড়াশোনা করি।

এই ব্যালান্সটা করলেন কী করে? এই খেলা আর পড়াশোনা ব্যালান্স করা তো সব উঠতি খেলোয়াড়ের অন্যতম বড় মাথাব্যথা...

আমার মনে হয় পুরোটাই হচ্ছে অ্যাবাউট প্রায়োরিটিজ। আমি যখন ইংল্যান্ড টিমে চান্স পাই, তখন উইমেনস ক্রিকেট কিন্তু সেমি-প্রফেশনাল ছিল। তাই আমি জানতাম ব্যাক-আপের জন্য পড়াশোনাটা আমাকে করতেই হবে। এবং পড়াশোনার জন্য স্যাক্রিফাইসও করেছি প্রচুর। একবার অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে যেতে পারিনি কারণ এ-লেভেলের জন্য তখন পড়াশোনা করতে হত। ওই যে বললাম প্রায়োরিটাইজিং। এবং তাই আমার কোনও রিগ্রেটসও নেই।

এ বার একটু কমেন্টেটর ইশা গুহ নিয়ে কথা বলি?

সিওর।

আজ যখন লর্ডসে বসে স্টার স্পোর্টসে সৌরভ-দ্রাবিড়ের সঙ্গে কমেন্ট্রি করছেন, হাউ ডাজ ইট ফিল?

ইট ফিলস গ্রেট। সৌরভ-দ্রাবিড়রা লেজেন্ড। ওঁদের সঙ্গে এক কমেন্ট্রি বক্সে বসে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতে পারাটা ইজ আ থ্রিলিং এক্সপিরিয়েন্স। দে আর ভেরি সাপোর্টিভ অ্যাজ ওয়েল। ইটস আ চ্যালেঞ্জ।

মানে, ডিআরএস নিয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পেরে আপনি খুশি হবেন?

হ্যাঁ, ডিআরএস ইজ আ ভেরি ভেরি সেনসিটিভ ইস্যু। আলোচনা যদি ওঠে, তা হলে নিশ্চয়ই সেটা নিয়ে কথা বলব। আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত আছেও ডিআরএস সম্বন্ধে। সেটা দর্শকদের বলতে পারলে আমারও ভাল লাগবে নিশ্চয়ই।

কমেন্ট্রি বক্সে আপনারা দুই বাঙালি। সৌরভের সঙ্গে তো বাংলাতেও কথা বলতে পারবেন আপনি...

হাহাহাহা, হ্যাঁ, জানি। নিশ্চয়ই বাংলায় কথা বলব সৌরভের সঙ্গে।

আচ্ছা, আপনার ফেভারিট কমেন্টেটর কারা? সেরা পাঁচ?

এই রে, মুশকিলে ফেললেন। দাঁড়ান, ভেবে বলি...

সৌরভ বা দ্রাবিড় না বললেও চলবে। ইয়ান চ্যাপেল বা রিচি বেনো বলে সেফ থাকতে পারেন।

(হাসি) না, এই বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে বুঝলেন। ব্যাট ঘোরালে আউট হওয়ার চান্স ১০০ শতাংশ। আই উইল স্কিপ দিস ওয়ান।

আচ্ছা, অনেকেই জানে না বাউরালের ডন ব্র্যাডম্যান ওভাল আপনার জীবনে খুব সিগনিফিকেন্ট একটা ক্রিকেট মাঠ। একটু বলবেন সেই ম্যাচটার কথা?

ইয়েস, ২০০৮-এ ওই মাঠেই অ্যাশেজ রিটেন করেছিলাম আমরা। আর ডন ব্র্যাডম্যান ওভালের ওই ম্যাচটায় ন’টা উইকেট পেয়ে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলাম। ইট ইজ আ ভেরি ভেরি স্পেশাল অ্যাচিভমেন্ট ইন মাই লাইফ...

আরও ভাল লাগে কারণ ডন ব্র্যাডম্যানের ওভালে একটা হেরিটেজ আছে। একটা হিস্ট্রি আছে।

সে রকম একটা সেটিংয়ে ন’টা উইকেট পাওয়া ওয়াজ স্পেশাল। ওই ম্যাচে আমি একটা জোনে ছিলাম। প্রত্যেকটা বলে উইকেট পেতে পারি, এমন একটা ফিলিং ছিল।

ওটাই কি আপনার ক্রিকেট জীবনের হাইলাইট?

না। হাই পয়েন্ট বলতে গেলে সেটা হবে ২০০৯-এর ওয়ার্ল্ড কাপ জেতাটা। দ্যাট ওয়াজ সুপার স্পেশাল। ওটা জেতার পর আইসিসি ওয়ার্ল্ড টোয়েন্টি টোয়েন্টিও জিতেছিলাম আমরা।

এত অ্যাচিভমেন্ট, এক সময়ের ওয়ার্ল্ডের নাম্বার ওয়ান র্যাঙ্কড্ বোলার। তা হঠাৎ করে ২০১২-তে ২৭ বছর বয়সে রিটায়ার করলেন কেন? অনায়াসে খেলতে পারতেন তো আরও তিন-চার বছর...
হ্যাঁ, পারতাম। আজও মাঝেমধ্যে খারাপ যে লাগে না তা নয়। কিন্তু আমি পিছনে ফিরে তাকানোর মেয়ে নই। আজ আমার কাছে সামনের চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি এক্সাইটিং। আর খুব অল্প সময়ে অনেক কিছু অ্যাচিভ-ও তো করলাম। আর সেই যে আগে বললাম, আমার প্রায়োরিটিজগুলো চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছিল। তা ছাড়া পিঠের ব্যথাটাও বেশ ভোগাচ্ছিল। সব মিলিয়ে আই থিঙ্ক আই মেড দ্য রাইট ডিসিশন।

রিটায়ার করেই সোজা আইপিএল-এ কমেন্ট্রি?

হ্যাঁ, আইটিভি আমাকে অ্যাপ্রোচ করে ইউকে-তে ওদের শো-টা প্রেজেন্ট করার জন্য। সেই সময় আই হ্যাড নো ক্লু অ্যাবাউট টিভি। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছিলাম। তিন বছর হয়ে গেল আইটিভিতে আইপিএল হোস্ট করছি আমি। এবং ফিডব্যাকটা দুর্দান্ত।

ভারতে ‘এক্সট্রা ইনিংস’-য়েও তো আপনি কাজ করেছেন?

হ্যাঁ, করেছি। সেই সময় কমেন্ট্রি করার সুবাদেই ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম খেলা দেখি। ইডেনে খেলা দেখাটা আমার জীবনে অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা।

আর শাহরুখের সঙ্গেও তো ওখানেই আলাপ...

হাহাহাহা, হ্যাঁ। ওখানেই আলাপ।

কী কথা হয়েছিল শাহরুখের সঙ্গে?

অ্যাকচুয়ালি, শাহরুখের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এক আইপিএল পার্টিতে। আমাকে হাতে কিস-ও করেছিল শাহরুখ। মাই ডে ওয়াজ মেড (হাসি)।

আচ্ছা, আপনি তো আজ ফেস অব উইমেন কমেন্টেটর্স। কোনও ফিল্মের অফার কেউ দেয়নি আপনাকে?

না, এখনও অবধি তো পাইনি কিছুই। তবে হিন্দি ছবি রেগুলারলি দেখি এবং অফার এলে ছবি করব না এটাও বলতে চাই না। অবশ্যই কোনও অফার পেলে ভেবে দেখব। এবং যদি মনে হয় এটা করলে আমার ভাল লাগবে, তা হলে নিশ্চয়ই করব।

আচ্ছা, ইন্ডিয়াতেও মন্দিরা বেদী কী অর্চনা বিজয়া ক্রিকেট শো প্রেজেন্ট করেন। ইশা গুহ-কি ওঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?

না, সত্যি আমার মনে হয় না অর্চনা কী মন্দিরা আমার কম্পিটিটর।

সেটা কি এ জন্য যে আপনি ক্রিকেটটা নিজে খেলেছেন বলে সেটা নিয়ে কথা বলতে আপনার আত্মবিশ্বাস ওঁদের থেকে সব সময়ই বেশি থাকবে?

দেখুন, এ ভাবে আমি সত্যিই ভাবিনি। তবে এটুকু জানি আজ টেলিভিশনে মেয়েদের কমেন্ট্রির একটা বড় জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মহিলা নিয়মিত ক্রিকেট ফলো করে। স্ট্যাটিস্টিক্স থেকে টেকনিক মেয়েরাও কিন্তু সব কিছু জানে। শুধু গ্ল্যামার কোশেন্টের সুবাদে মেয়েদের ক্রিকেটে আসার দিন বোধহয় শেষ। ভবিষ্যতে দেখবেন আরও মেয়ে স্পোর্টস কমেন্ট্রিতে আসছেন।

শেষ প্রশ্ন। বাঙালি মেয়ে, প্রচুর ফ্যান ফলোয়িং, সুন্দরী, আজ লন্ডন তো কাল মেলবোর্ন। বিয়ে করছেন কবে?

আই হ্যাভ আ পার্টনার। ‘ব্রাদার অ্যান্ড বোনস’ বলে ওদের একটা ব্যান্ড আছে। ওরা ফোক রক বাজায়। ওদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আমিও গানবাজনা করি। একটা খুব হ্যাপি স্পেসে রয়েছি আমরা। বিয়ে নিয়ে তাই এখনও ভাবিনি (হাসি)।

থ্যাঙ্ক ইউ ইশা।

থ্যাঙ্ক ইউ টু...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE