Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মহানায়কের বাড়ির পুজোয় আজও লক্ষ্মীর মুখে গৌরীদেবীর আদল

শুধু সময়টাই টাইম মেশিনে চেপে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। মহানায়ক উত্তমকুমারের বাড়ির লক্ষ্মীপুজো তাই আজও কিংবদন্তি।

দেবী প্রতিমায় আজও গৌরীদেবীর আদল।

দেবী প্রতিমায় আজও গৌরীদেবীর আদল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৪৩
Share: Save:

মেজাজটা আছে। পরিবেশটাও। আভিজাত্য, বনেদিয়ানায় একটুও জরার ছাপ নেই। দেবী প্রতিমায় আজও গৌরীদেবীর আদল। শুধু সময়টাই টাইম মেশিনে চেপে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। মহানায়ক উত্তমকুমারের বাড়ির লক্ষ্মীপুজো তাই আজও কিংবদন্তি।

একটুও কি বদল ঘটেনি ম্যাটিনি আইডলের প্রতিষ্ঠিত পুজোয়? বাড়ির বড় মেয়ে নবমিতা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নিষ্ঠায়, আয়োজনে কোনও ঘাটতি হয়নি কোনও বছর। দাদুর আমলে যেভাবে পুজো হত, সেভাবেই হয়। হয়তো আয়তনে হেরফের ঘটেছে। শুনেছি, দাদুর আমলে ভিয়েন বসত। সে সব আর হয় না। এ বছর যেমন আত্মীয় থেকে বন্ধু, কাউকেই আমরা আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি। কারণ, করোনা।’’

পুজোর ঘরে সংকল্পের আসনে জোড় পরে ‘মথুরবাবু’ গৌরব চট্টোপাধ্যায়।

তবে প্রতি বছরের মতো একই মাপের লক্ষ্মী প্রতিমা হয়েছে ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। মায়ের মুখ আর বাড়ির বড় বউ গৌরীদেবীর মুখ মিলেমিশে একাকার। পুজোর ঘরের দেওয়াল ভরে মহানায়কের ছবি। কোনওটায় জুঁইয়ের মালা, কোনওটায় মোটা রজনীগন্ধা। ছবিতে পাশাপাশি দুই ভাই বরুণ, তরুণ। তাঁদের ছবিও মালা-চন্দনে সাজানো। প্রতিমার মাথার উপরে লাল রঙের শালুর চাঁদোয়া। পিছনে রজনীগন্ধা-গোলাপ দিয়ে বোনা ফুলের চাদর। এই সজ্জা উত্তমকুমারের আমল থেকেই।

কেমন ছিল মহানায়কের আমলের পুজো? মহানায়ক পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের খুব কাছের বন্ধু গোরা দত্ত পরে বরুণ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই। আগের এবং এখনকার-- দুই প্রজন্মের পুজোই দেখেছেন। সেই আমলের কথা উঠতেই তিনি স্মৃতিমেদুর, তাঁর সৌভাগ্য, তিনি দুই প্রজন্মের পুজোর সাক্ষী। সেই সময় পুজোর সংকল্প হত মহানায়কের নামে। তিনি পুজোর ঘরে এসে বসতেন জোড় পরে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ লাইন দিতেন বাড়ির গেটের দু’পাশে। বাড়ির পিছনের গ্যারেজের গেট দিয়ে ২০ জন পুরুষ এবং তাঁরা বের হলে ২০ জন মহিলা দর্শনার্থীকে ভিতরে ঢোকানো হত।

মায়ের মুখ আর বাড়ির বড় বউ গৌরীদেবীর মুখ মিলেমিশে একাকার।

সবার মুখে তখন একটাই রব, ‘‘গুরু গুরু! আমরা জ্যান্ত ঠাকুর দেখতে চাই।’’ জনতার ডাকে সাড়া দিতেন উত্তমও। মিনিট দু’য়েকের জন্য হয়তো বারান্দায় আসতেন। তাতেই আনন্দে দুলে উঠত জনজোয়ার। তাঁর সময়ে আগের দিন বউবাজার থেকে ছানা আসত বাড়িতে। মিষ্টি তৈরি হত। পুজোর ভোরে সবাই যেতেন আদিগঙ্গায়। স্নান সেরে, ঘট মেজে, তাতে জল ভরে নিয়ে এসে স্থাপন করা হত প্রতিমার সামনে।

মহানায়ক নেই। নেই তাঁর ‘জ্যান্ত লক্ষ্মী’ গৌরী দেবী। পুজোর ঘরে এখন সংকল্পের আসনে জোড় পরে ‘মথুরবাবু’ গৌরব চট্টোপাধ্যায়। পরম নিষ্ঠায় পালন করে চলেছেন প্রতিটি নিয়ম, আচার-অনুষ্ঠান। তাঁকে ঘিরে এই প্রজন্মের ভিড়। দুই বোন নবমিতা, মৌমিতা, ভাই জুপিটার চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE