Advertisement
০৭ মে ২০২৪

চিরজীবী স্ট্রাগলার

আগামী কাল পয়লা মে। মান্না দে-র ৯৬ তম জন্মদিন! ক’জন জানেন শ্রমিকদিবসে পৃথিবীতে আবির্ভূত মানুষটিকে কী পরিমাণ যন্ত্রণা, অত্যাচার আর শ্রমের অমর্যাদা সইতে হয়েছিল! সে সবই লিখছেন মিউজিক অ্যারেঞ্জার এবং প্রয়াত শিল্পীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শান্তনু বসু।গত বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতাম এই বিশেষ দিনটার জন্য। সকাল হতে না হতেই ভাবতাম কখন ফোনটা করব। জন্মদিনের অভিনন্দন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসত সেই চেনা আওয়াজ‘‘থ্যাঙ্কস, থ্যাঙ্কস আ লট। তোমরা কেমন আছ? আজ প্রচুর ফোন আসছে।” তবে আরও মজা হত যখন উনি এই বিশেষ দিনটায় কলকাতায় থাকতেন।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

গত বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতাম এই বিশেষ দিনটার জন্য। সকাল হতে না হতেই ভাবতাম কখন ফোনটা করব। জন্মদিনের অভিনন্দন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসত সেই চেনা আওয়াজ‘‘থ্যাঙ্কস, থ্যাঙ্কস আ লট। তোমরা কেমন আছ? আজ প্রচুর ফোন আসছে।” তবে আরও মজা হত যখন উনি এই বিশেষ দিনটায় কলকাতায় থাকতেন। সকালে বা বিকেলে যখনই ওঁর কলকাতার বাড়িতে যেতাম দুটো ঘর জুড়ে থাকত ফুলের বাহার।

তার মধ্যে মান্নাদা বসে থাকতেন রাজার মতো। কলকাতার মাটিতে জীবনের শেষ অনুষ্ঠানও করেছিলেন সেই পয়লা মে। ২০১০ সাল। সেই অনুষ্ঠানে ওঁর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে পারার অনুভূতি আজও আমাকে রোমাঞ্চিত করে।

(১)

বৃষ্টিমুখর বাদলা বিকেলে গানের সিটিংয়ে গিয়েছি মান্নাদা-র ৯ মদন ঘোষ লেনের বাড়িতে। গানের ফাঁকে বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধে হয়-হয়, তখন ভাইপো (তপন দে)-র স্ত্রী ঝুমার এনে দেওয়া ঘরে বানানো পেঁয়াজি আর চায়ের যৌথ আপ্যায়নে বর্ষার আমেজ যেন আরও জমে উঠেছিল। গান থামিয়ে সেগুলোর সত্‌কারকালে কথাপ্রসঙ্গে উঠেছিল ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতে ছাতা নিয়ে দৃশ্যায়িত ‘প্যয়ার হুয়া ইকরার হুয়া’ গানের কথা। শঙ্কর জয়কিষনের সুরারোপিত কোনও গানের প্রসঙ্গে এলেই দেখতাম মান্নাদা যেন একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতেন। আসলে মান্নাদা মনে করতেন এই সুরকার জুটিই তাঁর বর্ণময় সঙ্গীত জীবনের মূল রূপকার। পাশাপাশি রাজ কপূরের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মান্নাদা বললেন, “তখন শঙ্কর জয়কিষণের সুরে রাজজির বেশ কয়েকটা ছবিতে আমার গান গাওয়া হয়ে গিয়েছে। ওঁদের ডাকে আর একটা গানের রেকর্ডিংয়ে গিয়েছি।”

বাইরে তখন বৃষ্টির অব্যাহত। পেঁয়াজিতে একটা কামড় বসিয়ে মান্নাদা বলতে থাকেন, “সেই গানে আমার সহগায়িকা ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। রাজ কপূরের উপস্থিতিতে শঙ্কর জয়কিষণের পরিচালনায় আমি আর লতা তখন গানের মহড়ায় ব্যস্ত। স্টুডিয়ো ভর্তি মিউজিশিয়ন, তারাও মহড়ায় মগ্ন। এমন সময় মাদ্রাজ থেকে স্টুডিয়োতে এসে উপস্থিত সেই ‘চোরি চোরি’ ছবির প্রযোজক এ ভি মায়াপ্পান চেট্টিয়ার। সে তো এসেই মুকেশের খোঁজ করল।” মান্নাদা একটু থামতেই, পুরো পরিবেশটা কল্পনা করতে থাকি।

এগিয়ে চলে কথা, “কোথায় মুকেশ! পুরুষকণ্ঠের গান তো আমি গাইছি। সেই গানের জন্য শঙ্কর জয়কিষণ আমাকে নির্বাচন করেছে শুনে, খেপে আগুন চেট্টিয়ার তাচ্ছিল্যের সুরে তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজ কপূরের লিপে মুকেশ ছাড়া কারও গান মানায়? এখনই মুকেশকে ডাকা হোক, না হলে এ গানের রেকর্ডিং বন্ধ হোক’”।

ঘরে সে সময় একমাত্র নির্বাক শ্রোতা আমি। বাইরে পড়তে থাকা বৃষ্টির আওয়াজের মধ্যে বলে চলেন প্রবাদপ্রতিম, “সমগ্র চিত্রটা আমি, লতা সহ সমস্ত মিউজিশিয়ন ফ্লোর থেকে দেখছি আর হেডফোনের মাধ্যমে ওঁদের কথা শুনতে পাচ্ছি। লতার পাশে দাঁড়িয়ে তখন আমার মনে হচ্ছিল ধরণী দ্বিধা হও। অসম্মানে, অপমানে আমার সারা শরীর তখন কাঁপছে। চোখ ভর্তি জল। মুখ লুকোবার জায়গা নেই। স্টুডিয়োতে সবার সামনে একজন প্রযোজকের কাছে এ ভাবে অপমানিত হতে হবে, তা কল্পনাতেও কোনও দিন ভাবিনি।”

ঠান্ডা চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে অভিমানী কন্ঠে এর পর শিল্পী বললেন, “বেশ কিছুক্ষণ এ সব নাটক চলার পরে রাজজি গিয়ে উত্তেজিত প্রযোজককে ঠান্ডা করে বলেন, ‘এখন মান্না দে-কে দিয়ে গানটা গাওয়ানো হোক। ভাল না লাগলে পরে মুকেশকে দিয়ে গাওয়ানো যাবে’।”

একটু চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন মান্না দে। ঘরের পিন-পতন নীরবতাকে ভেঙে জানতে চাইলাম, এর পর আপনি গাইলেন? বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, “আরে গাইব কি! আমার তখন মনের যা অবস্থা, তাতে কি গান গাওয়া যায়? আর ওই রোম্যান্টিক গান! তখন আমার সমস্ত রোম্যান্স ভেসে গিয়েছে চোখের জলে। এমন সময় লতা এসে আমায় বলে, ‘মান্নাদা আপনি এমন গান করুন যাতে আর কারও কিছু বলার না থাকে।’ তারপর নিজেকে একটু সামলে গাইলাম সেই গান ‘ইয়ে রাত ভিগি ভিগি’। গানের শেষে লতা, শঙ্কর-জয়কিষণ, রাজজি আমাকে এত অভিনন্দন জানিয়েছিল, সে কথা আজও ভুলতে পারি না।” গান কেমন হয়েছিল, তা আর আজকের দিনে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বৃষ্টির রাতে বাড়ি ফেরার সময় ভাবছিলাম আমরা গান শুনে কত সমালোচনা করি। কিন্তু সেই সব সৃষ্টির আড়ালে কত অজানা কাহিনির জাল বিস্তৃত থাকে!

(২)

মান্না দে-র যুগান্তকারী গানের মধ্যে একটা হল ‘উপকার’ ছবির ‘কসমে ওয়াদে প্যার ওয়াফা’। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম মান্নাদার কাছে শুনে যে, এই গানটা নাকি ওঁর জন্য তৈরিই হয়নি। ছবিতে এই গানে লিপ দেওয়ার কথা ছিল এ ছবির নায়ক ও পরিচালক মনোজকুমারের। সুরকার কল্যাণজি আনন্দজি সেইমতো কিশোরকুমারকে ভেবে গানের সুর করেন। পরে পরিচালক চিত্রনাট্যে কিছু পরিবর্তন করে গানটা ভিলেনের লিপে দিয়ে দেন। এ কথা শুনে তো মাথায় হাত সুরকার জুটির। তাঁরা নানা ভাবে পরিচালককে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সেই গান ভিলেনের লিপে একদম মানাবে না। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় পরিচালক। অগত্যা ভিলেনের লিপের সেই গান নিয়ে কিশোরকুমারের কাছে পৌঁছন সুরকারদ্বয়। কিন্তু ভিলেনের লিপের গান শুনে কিশোরকুমার সেই গান গাইতে অসম্মত হন। কাকে দিয়ে গাওয়ানো হবে সেই গান, ভাবতে ভাবতে সুরকারজুটি ও পরিচালক স্বয়ং গিয়ে উপস্থিত হন মান্না দে-র দরজায়। মান্নাদা গাইলেন। সৃষ্টি হল এক কালোত্তীর্ণ গান। মান্নাদা যখন এই কথাগুলো বলতেন তখন ওঁর মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ দেখা যেত। জানি না, হয়তো সেই পরিতৃপ্তি, অবমাননার মুখে চপেটাঘাতের।

বেশ কয়েক বছর আগে সারেগামা-র দমদমের স্টুডিয়োতে আমি আর মান্নাদা ওঁর গানের কিছু সূক্ষ্ম মেরামতির কাজ করছিলাম। সে দিন মান্নাদা বেশ জমাটি মেজাজে। নানা কথার মধ্যে এসেছিল পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের কথা। স্বনামধন্য সেই পরিচালকের ‘আশীর্বাদ’ ছবির ‘জীবন সে লম্বে হ্যায় বন্ধু’ গানটা আমার খুব প্রিয় শুনে মান্নাদা খুলে ফেললেন ওঁর স্মৃতির পাতা।

মান্নাদা বললেন, “হৃষীর ওই ছবিতে সুর করেছিলেন বসন্ত দেশাই। আমার গান রেডি হয়ে যাওয়ার পরে স্টুডিয়োতে তখন গানের মিউজিক রিহার্সাল চলছে। এমন সময় এসে উপস্থিত হলেন ছবির প্রযোজক এন সি সিপ্পি। উনি আমার সামনেই বসন্ত দেশাইকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এ গানের জন্য কিশোরকুমারকে কেন ডাকা হয়নি?’ আমি তো খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। কিন্তু দেখেছিলাম বসন্ত দেশাইয়ের দাপট। উনি প্রোডিউসরের মুখের উপর বলে দিলেন, ‘এ গান আমি মান্না দে-কে ভেবে বানিয়েছি। তাই ওকেই ডেকেছি এই গান গাওয়ার জন্য। যদি আপনি অন্য কাউকে দিয়ে এই গান গাওয়ানোর কথা ভাবেন, তা হলে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে অন্য কাউকে বেছে নিতে পারেন।’ যাই হোক, সেই থমথমে পরিবেশেই গানের রেকর্ডিং হল। গান শোনার পর আর কারও মুখে কোনও কথা নেই।”

মনে মনে বললাম, কথা থাকবেই বা কী করে? সে গান তো মান্না দের জীবনের অন্যতম সেরা গান। মান্নাদাকে বলেছিলাম, এও কি সম্ভব? সেই মুহূর্তের হালকা মেজাজে হাসতে হাসতে বললেন, “সম্ভব মানে! এ রকম ঘটনা আমার জীবনে বহু বার, বহু রকম ভাবে ঘটেছে। পুরো জীবনটাই আমার স্ট্রাগল।” আমিও হেসে বলেছিলাম, আপনার জন্মদিনটাই তো সংগ্রামের দিন হিসেবে পরিচিত। একটু অভিমানের সুরে মান্নাদা বলেছিলেন, “সাম হাউ সারা জীবন আমাকে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়েছে। আজও শেষ হয়নি মনে হয়!”

বিশ্বজয়ী শিল্পী একদিন বললেন, “শচীনদা ‘বাত এক রাত কি’ ছবির জন্য একটা মজার গান তৈরি করে আমায় বললেন, ‘মানা তোকে এই গানটা গাইতে হবে।’ গান শিখে গেলাম স্টুডিয়োতে। গানে লিপ দেবে জনি ওয়াকার। তখন তাঁর বেশ নামডাক। ওঁর লিপে রফির হিট গান। স্টুডিয়োতে এসে, ওঁর লিপে আমি গাইছি শুনে বেঁকে বসল জনি ওয়াকার। ওঁর ইচ্ছে গানটা যেন রফি গায়। এ দিকে শচীনদা পরিষ্কার বললেন, ‘মানা (এ নামেই মান্না দে-কে ডাকতেন) গাইলে এ গান হবে, না হলে আমি চললাম।’ শচীনদার চললাম মানে চললাম...। গাইলাম শেষ পর্যন্ত। উফ্! এখন ভাবলে অবাক লাগে। কত যে লড়াই!” চশমা ঠিক করার ফাঁকে চোখ মোছেন মান্না দে।

সেই ‘কিসনে চিলমন সে মারা’ গানটা যাঁরা শুনেছেন বা দৃশ্যায়ন দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই অনুভব করেছেন যে, শচীনকর্তার সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁর শৈল্পিক চিন্তার কতটা প্রভাব ছিল।

শচীনদেবের সুরে ‘তলাশ’ ছবির ‘তেরে ন্যায়না তলাশ’ গানের সময়ও নাকি একই ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও প্রতিযোগী সেই মহম্মদ রফি। কিন্তু অতি রফিপ্রিয় শচীনদেবও জেদ ধরে মান্না দে-কে দিয়েই সেই গান গাইয়েছিলেন। সে গান আজ ইতিহাস।

কর্মজগতের এই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার কারণে দুই মহান শিল্পীর (মহম্মদ রফি ও মান্না দে) বন্ধুত্বে কখনও বিভাজন হয়নি। এ সব শোনার সময় একদিন মান্নাদার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনার সঙ্গে যে এত কিছু হত, আপনার কি কোনও প্রতিক্রিয়াই হত না? উত্তরে বলেছিলেন, “এই সব ঘটনায় আমি এত কষ্ট পেতাম যে কী বলব। কিন্তু প্রকাশ করিনি কখনও। আমি যে বাঙালি স্ট্রাগলার! কার কাছে গিয়ে প্রকাশ করব? আমার যা প্রকাশ তা ওই গানের মধ্যে দিয়েই করার চেষ্টা করেছি।”

(৩)

মান্না দে তখন একজন আইকন।

১৯৭৩ সালে এইচএমভি কোম্পানি প্রখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চন-এর লেখা ‘মধুশালা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে সুরারোপ করে রেকর্ড করবে ঠিক করে। সুরের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুরকার জয়দেবকে। গায়ক হিসেবে তালিকার প্রথম দু’টো নাম ছিল মহম্মদ রফি আর মুকেশ। জনপ্রিয়তা আর অধিক রেকর্ড বিক্রির ব্যবসায়িক দিকগুলোকেই মূলত সেখানে তাঁরা প্রাধান্য দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সমস্ত যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে কবি বচ্চনসাহেবের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব কোম্পানির কাছে গায়ক হিসেবে মান্না দে-র নাম প্রস্তাব করলে কোম্পানির আর কিছুই করার থাকে না। ১৯৩১ সালে হরিবংশ রাই বচ্চনের লেখা সেই কবিতা মান্নাদার কণ্ঠজাদুতে পেল এক অনন্য রূপ।

মান্না দে একদিন বলেছিলেন, “একটা সময় গানের ব্যাপারে আমি বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গান গাইছিলাম ঠিকই। কিন্তু হয় সে গান বুড়ো লোকের লিপে, নয়তো ভিখারি গাইছে, বা হনুমানের লিপে। সে এক অসহ্য পরিস্থিতি। কাউকে বলতেই পারতাম না যে, কোন গান গাইছি। তখন ’৫৩-’৫৪ সাল হবে। হঠাত্‌ই এইচএমভি থেকে লতার পুজোর দু’টো গানের সুর করার জন্য আমাকে বলা হয়। ভীষণ আনন্দ পেলাম। লতা তখন এক নম্বর গায়িকা। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় দু’টো গানের সুর তৈরি হলে, লতার ডেট নিয়ে স্টুডিয়ো বুক করা হল। কিন্তু লতা রেকর্ডিংয়ের দিন এলই না। কোনও খবরও দিল না। হতাশ হয়ে চলে গিয়েছিলাম বাড়ি। পরে শুনেছিলাম গলা খারাপ ছিল। পরে একদিন ডেট নেওয়া হলে, সে দিনও এসে পৌঁছল না লতা। অপমানিত আমি কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। এ দিকে পুজো এগিয়ে আসায় কোম্পানি থেকে আমাকেই ওই দু’টো গান গাইতে বলে। লতার না গাওয়া সেই ‘কত দূরে আর নিয়ে যাবে বলো’ আর ‘হায় হায় গো রাত যায় গো’ গান দু’টো অবশেষে আমার কণ্ঠেই প্রকাশিত হল। বলতে দ্বিধা নেই শ্রোতাদের অনুরোধে আজও সে গান আমায় মঞ্চে উঠে গাইতে হয়।” মান্নাদা আরও বলেছিলেন, ওই ঘটনার পরে অজস্রবার লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে নানা ব্যাপারে সাক্ষাত্‌ হলেও কোনও দিন ওই প্রসঙ্গে কেউ কোনও কথা বলেননি। মান্নাদাও না। লতাও না।

পুনশ্চ: ছ’মাস হল মান্না দে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আর জন্মদিন বলে তাঁর জীবনে কিছু নেই। আর সকালে উঠে ফোন করারও সুযোগ নেই বেঙ্গালুরুর নম্বরে। আজ শুধু বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে ভাবার দিন সঙ্গীত ও পুঁথিগত শিক্ষায় এমন উচ্চশিক্ষিত হয়েও একজন মানুষকে জীবনভর কতই না যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল। বলতেন, “ছাড়ান দাও, ছাড়ান দাও। দুঃখ অনেক পেয়েছি। প্রচুর মানুষকে তো আনন্দ দিতে পেরেছি। এ কথা ভেবেই আজ সুখ পাই। একজন গাইয়ে হয়ে আমি আর কী-ই বা করতে পারি! আর ক’দিন! কাকা বা শচীনদার কথামতো যত গান গেয়েছি, সবই গেয়েছি অন্তর থেকে, ভালবাসা দিয়ে। আজ আমার আর কিছুই পাওয়ার নেই। যা পেয়েছি ততখানি না পেলেও আমার কিছু বলার ছিল না।”

কথাগুলো আজও কেমন উদাস করে দেয়। মনে হয় তাঁর সেই বিখ্যাত গানের লাইনটাই কি মান্নাদা কাল জন্মদিনের সকালে বসে ভাববেন কী চেয়েছি আর কী যে পেলাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE