কথা: নিজের বাড়িতে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
আট বছরের ব্যবধানে দু’বার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রাসবিহারী কিংবা আলিপুরে বিপ্লব হয়নি। দলীয়কর্মীদের চক্রান্তেই না কি বিপ্লব দানা বাঁধতে পারেনি। তাই বিধানসভার ভিতরেও আর বিপ্লবের দর্শন পাননি কেউ।
২০১৯, লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। প্রতিটি নির্বাচনের মতোই রাজনীতির ময়দানে নেমে ফাগ ওড়াচ্ছেন টলিউডের তারকারা। কেউ কেউ আবার নতুন প্রার্থীও। কিন্তু এমন সময়ে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে মোটামুটি সাধারণ একটি ফ্ল্যাটের মধ্যেই আটকে রয়েছে ‘বিপ্লবের কথা’। যার খানিকটা বর্তমান রাজনীতির ধরন-ধারণ নিয়ে। খানিকটা আবার তাঁর দলের বিরুদ্ধেও। তিনি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। রূপোলি পর্দার ‘দুষ্টু লোক’। আবার ১৯৯৮ সালে রাসবিহারী বিধানসভায় উপনির্বাচনে সিপিএম সমর্থিত প্রার্থী এবং ২০০৬ সালে আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিপ্লব। দু’বারই পরাজিত।
নির্বাচনের বাজারে এমনই এক দুপুরে দেশপ্রিয় পার্কের সেই ফ্ল্যাটেই দেখা মিলল বিকাশ সিংহের। ফ্ল্যাটের বসার ঘরের অন্দর সজ্জাতে খানিকটা যেন জয়বাবা ফেলুনাথের সেই ঐতিহাসিক ভিলেন চরিত্র মগনলাল মেঘরাজের বাড়ির ছোঁয়া। সিনেমায় বিকাশ সিংহের ভূমিকায় ছিলেন বিপ্লব। ফ্ল্যাটের মাঝে সোফা। সেটির বাঁ দিকে বালিশ সহযোগে গদি। গদির সোজাসুজি উল্টোদিকের দেওয়ালে মেঝে থেকে এক ফুট উচ্চতার মার্বেলে বাঁধানো ‘স্টেজ’! ‘ব্যাকড্রপে’ মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স! তবে মগনলালের সামনে যে ভাবে বিকাশ ওরফে বিপ্লব বসেছিলেন সে ভাবে নয়। কোমরের ব্যাথায় কাতর বিপ্লব স্টেজের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কথা বললেন।
যে দিকে তিনি বসলেন তার ঠিক পিছনের দেওয়ালেই লম্বা ফটোফ্রেমে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে জ্যোতিবাবু। তাঁর পাশে লাল ফাইল হাতে বিপ্লব। এর পরেই যেন বিপ্লব শুরু হল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুর ছবির দিকে দেখিয়ে বিপ্লব বললেন, ‘‘ওই লোকটাই ডেকেছিলেন। ওঁর জন্যই ভোটে লড়েছি। এখন আর কোনও নেতা নেই। এখনকার কোনও বোস-টোস’কেও আমি ভয় পাই না। ওঁরা দলের ভবিষ্যৎ ভূতের ভবিষ্যৎ করে দিয়েছেন।’’
নায়ক দেব শাসক দলের হয়ে আগেই সাংসদ হয়েছেন। বিপ্লবেরই সময়কার নায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীও বিধায়ক হয়েছেন। এ বারে আবার রূপোলি পর্দা থেকে মিমি, নুসরতও এ বার লোকসভা ভোটে লড়ছেন! কথা শেষ না করতে দিয়েই বললেন, ‘‘ভোটে তো যে কেউ লড়তে পারেন। তবে একটু পড়াশোনা করে লড়াই ভাল। লোকসভায় মোট ক’টা আসন রয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেন তো!’’ তার পরে অবশ্য স্মিত হেসে বলেন, ‘‘এখন মনে হয় দিদিমণির বকা খেয়ে সব শিখে গিয়েছেন।’’
বর্তমান ভোট-রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র বিপ্লবের কথায়, ‘‘বুথে ঢুকে লোককে ধরে চড় মারছেন নেতা। এক জন আজ আমায় গালাগাল দিয়ে কাল আমার দলেই এসে নাম লেখাচ্ছেন! একটা টিকিটের জন্য এঁরা নিজের বাবা-মা’কেও বেচে দেবেন। পুরো নোংরামি চলছে।’’
পুরনো রাজনৈতিক অতীতের প্রসঙ্গ তুলতেই আক্রমণাত্মক বিপ্লব বললেন, ‘‘আমার দলের লোকেরাই আমায় হারিয়ে দিয়েছিল। জ্যোতিবাবু, বুদ্ধদেবদের জানিয়েছিলাম। আমি আমার মতো করে ভোটে লড়তে পারিনি। এখনও পার্টির সদস্য। পার্টি উঠে গেলেও আমার মনের মধ্যে থেকে যাবে। আমি আমি দলবদলু নই। তবে কেউ আমায় আর ডাকে না।’’
কিন্তু দল যদি আবার ভোট লড়তে ডাকে, যাবেন? কয়েক মিনিট ভেবে বললেন, ‘‘লড়লে আমার নিজের শর্তে লড়ব।’’
কিন্তু দলবদলুরাই তো টলিউডে বড়সড় মাথা এখন?
রাজনীতির মতোই অভিনয় জগতে ‘নোংরামি’র দাবি তুলে বিপ্লবের আক্ষেপ, ‘‘শীতের মধ্যে খালি গায়ে অভিনয় করে পাওয়া পারিশ্রমিকের চেক ‘বাউন্স’ও করেছে। আজও টাকা পাইনি।’’ সাম্প্রতিক একটি বাংলা সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রসঙ্গ উঠতেই বিপ্লব বলেন, ‘‘যাঁরা বন্ধ করেছেন তাঁরা মূর্খ। সেন্সর বোর্ডে পাশ করা সিনেমা কেউ আটকায়! অবশ্য যিনি আটকাতে শেখাচ্ছেন তিনি এমনটাই করে থাকেন। মানুষ খেপিয়ে লাভ হয় না! এ সব বললেই দোষ?’’ তিনি যে দলের হয়ে ভোটে লড়েছিলেন আবার ফিরে গেলেন তাদের কথায়। বললেন, ‘‘সর্বক্ষণ তাত্ত্বিক কথা বলে লাভ হবে না। এটা ওরা বোঝে না। কিন্তু, কী করব এখনও রক্তের রং লাল। ওই যে বললাম আমি দলবদলু নই।’’
সম্বিৎ ফিরিয়ে মিষ্টি হাতে হাজির হন বিপ্লব-গৃহিণী। জানা গেল বিপ্লবের জন্মদিন। সে কি, গুগল যে বলে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন ৮ জুলাই! হেসে অভিনেতা বললেন, ‘‘ওটা আমারই কীর্তি। কেউ একটা জন্মদিন কবে জানতে চেয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলাম, ৮ জুলাই। ওই দিন জ্যোতিবাবুর জন্মদিন, মানে আমারও জন্মদিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy