তখন বর্মা (মায়ানমার) থেকে ভারতীয়দের তাড়ানো শুরু হয়েছে। দলে দলে পায়ে হেঁটে ভারতীয়রা চলে আসছে এ দেশে। সে দলে আমার বড় মাসি-মেসোর সঙ্গে আলাপ হয় গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সঙ্গে তাঁর ছোট মেয়ে সুপ্রিয়া। মাসি-মেসোদের বলতে শুনতাম, ‘গোপাল বাড়ুজ্জ্যের মেয়ে কোনও দিন সিনেমা করবে ভাবতেই পারিনি!’ কারণ তিনি খুব কড়া মানুষ ছিলেন। এই বন্দ্যোপাধ্যায়-পরিবার ছিল শিক্ষিত, মার্জিত।
যার প্রতিফলন আমি সুপ্রিয়াদেবীর মধ্যে দেখেছি।
তখন আমার সাত-আট বছর বয়স হবে, প্রণব রায় পরিচালিত ‘প্রার্থনা’য় প্রথম দেখি সুপ্রিয়াদেবীকে। তখন অবশ্য তিনি ‘দেবী’ হননি, সুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। কবে কোথায় ওঁর সঙ্গে মুখোমুখি আলাপ হয়েছিল, এত বছর পর তা আর মনে নেই। উনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালবাসতেন। ওঁর সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। একাধিক বার আউটডোরে গিয়েছি একসঙ্গে। বলতেন, ‘বাইরে এসে একদম আজেবাজে খাবার খাবি না। আমি যা বলে দেব, তাই খাবি।’ খাওয়ার ব্যাপারে এক কথায় ডমিনেট করতেন উনি। আবার এক-এক সময় এত খাইয়ে দিতেন যে, অসুস্থ হয়ে গিয়েছি। উত্তমবাবু অসুস্থ ছিলেন বলে ওঁর জন্য কম মশলা দিয়ে সুস্বাদু রান্না করতেন। ছবিতে উনি থাকুন বা না-থাকুন, লাঞ্চ ব্রেকে খাবার নিয়ে ঠিক হাজির সুপ্রিয়াদেবী। আমাকে ডেকে নিয়ে বলতেন, ‘আয়, একসঙ্গে খাই।’ এই অভ্যেসটা বরাবর ছিল। ‘শান্তিনিকেতন’ সিরিয়াল করার সময় লাঞ্চ ব্রেকে আমাকে আর সাবুকে (সাবিত্রী) ডেকে নিয়ে বলতেন, ‘খাবি আয়।’ ‘না’ বললে বলতেন, ‘খাবি না? সোমা রান্না করে দিয়েছে যে।’
আজ অনেক কথাই মনে পড়ছে। ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে উত্তমবাবুর জন্মদিনে কত লোকের নিমন্ত্রণ থাকত। প্রত্যেককে আলাদা করে সুপ্রিয়াদেবী আপ্যায়ন করতেন। বলতে পারেন, উনি আমার দেখা সেরা হোস্ট। শুধু আতিথেয়তা নয়, সব ব্যাপারে ওঁর সৌন্দর্যবোধ তারিফ করার মতো।