গত বছর নভেম্বর মাসে পথ চলা শুরু। অল্প সময়ের মধ্যেই ধ্রুব এবং জোনাকির গল্প দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। চলতি সপ্তাহে টিআরপি তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেছে জ়ি বাংলার এই ধারাবাহিক। তবে ধারাবাহিকের নির্মাতারা বিশ্বাস করেন, এই সাফল্য কারও একার প্রচেষ্টার ফল নয়। তাঁরা বিষয়টিকে ‘টিম গেম’ হিসেবেই দেখতে চাইছেন।
আরও পড়ুন:
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা থেকে এই ধারাবাহিক তৈরি হয়েছে। প্রসেনজিৎ মনে করেন, অতিমারির পর থেকে টিভির দর্শকের চাহিদার ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বললেন, ‘‘দর্শক এখন আর ধারাবাহিকে কান্না বা শাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া দেখতে চান না। সকলেই এখন একটু হালকা কিছু মুহূর্ত দেখতে চান। ‘মিত্তির বাড়ি’তে আমরা সেটাই করতে চাইছি।’’ প্রসেনজিৎ জানালেন, এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে পুরনো দিনের বাংলা ছবির স্বাদ দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আদৃত এবং পারিজাত নতুন জুটি। ওদের খুব ছোট থেকে চিনি আমি।’’
এক সময়ে ‘গানের ওপারে’, ‘অদ্বিতীয়া’র মতো সফল ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছিলেন প্রসেনজিৎ। সেখান থেকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিও পেয়েছিল নতুন তারকাদের। আদৃত এবং পারিজাতকে নিয়েও কি তাঁর সে রকম কোনও ভাবনা রয়েছে? প্রসেনজিৎ বললেন, ‘‘‘গানের ওপারে’ টিম নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমি ছবি করেছিলাম। আদৃত-পারিজাতকে নিয়েও তেমন কিছু হতে পারে।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানের বহুমুখী কাজের উদাহরণ দিলেন। বললেন, ‘‘ছোট পর্দা এবং বড় পর্দার মধ্যে এখন আর কোনও বিভাজন নেই। এক জন অভিনেতার সব মাধ্যমেই কাজ করা উচিত।’’
প্রসেনজিৎ ব্যস্ত অভিনেতা। তিনি কি তাঁর ধারাবাহিকের খোঁজখবর নেন? হেসে বললেন, ‘‘ফোন এখন জীবনটা সহজ করে দিয়েছে। সে দিনও চ্যানেলের সঙ্গে দু’ঘণ্টা মিটিং করেছি। কবে কী হচ্ছে, আমার টিম আমাকে হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠাতে থাকে।’’ প্রয়োজনে গল্প নিয়েও টিমকে পরামর্শ দেন প্রসেনজিৎ। উদাহরণ হিসেব বললেন, ‘‘মেগা মানে দীর্ঘ সফর। সেখানে দু’-তিন মাস পর থেকে গল্পের ট্র্যাকগুলো গতি পেতে শুরু করে, যেমন এ বার থেকে গল্পে বাচ্চাদের অংশগুলোকে একটু গুরুত্ব দিতে বলেছি।’’

‘মিত্তির বাড়ি’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিক থেকে) শঙ্কর চক্রবর্তী, পারিজাত চৌধুরী, আদৃত রায়। ছবি: সংগৃহীত।
ধারাবাহিকের সাফল্যে খুশি ধ্রুব এবং জোনাকি। অর্থাৎ, অভিনেতা আদৃত রায় এবং পারিজাত চৌধুরী। শটের ফাঁকে পাওয়া গেল ধারাবাহিকের জুটিকে। আদৃত বললেন, ‘‘একটা ধারাবাহিকের সাফল্যের নেপথ্যে পুরো টিমের অবদান থাকে। অভিনেতা হিসেবে আমি শুধু নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস আগামী দিনেও আমরা আরও দর্শকের ভালবাসা পাব।’’ দু’মাসের মাথায় টিআরপি নম্বর বেড়েছে বলে বিশেষ চিন্তিত নন পারিজাত। বললেন, ‘‘আমার কাছে টিআরপি বিষয়টা বয়সেরই মতো! দর্শকের যে আমাদের গল্প পছন্দ হচ্ছে, সেটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়ো প্রাপ্তি।’’
যে কোনও ধারাবাহিকের সাফল্যের নেপথ্যে থাকে চিত্রনাট্যের অবদান। ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকার শাশ্বতী ঘোষ (রাখি) অবশ্য মনে করছেন, তাঁদের এখনও অনেকটাই পথ চলা বাকি। শাশ্বতী বললেন, ‘‘এখনও তো অনেকটাই পথ চলা বাকি। দর্শকের গল্পটা পছন্দ হচ্ছে, আমরা খুবই কৃতজ্ঞ।’’ সম্প্রতি বিরোধী চ্যানেলে বড় তারকাদের নিয়ে একটি ধারাবাহিক শুরু হয়েছে। কিন্তু টিআরপির নিরিখে তাদের অতিক্রম করেছে ‘মিত্তির বাড়ি’। ধারাবাহিকের সৃজনশীল পরিচালক দ্বৈপায়ন মজুমদার ইউনিটের পাশাপাশি শাশ্বতীর কলমকেই ধারাবাহিকের সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একটা টিমের মতো কাজ করি। সেখানে রাখিদির দৃষ্টিকোণ বুঝে প্রত্যেকে কাজ করছে। তাই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছে।’’
সম্প্রতি গল্পে ধ্রুব এবং জোনাকির বিয়ে হয়েছে। বাবার সঙ্গে বিবাদকে কেন্দ্র করে ধ্রুব পারিজাতকে নিয়ে মিত্তির বাড়িতেই ফিরে এসেছে। আগামী দিনে দর্শকের জন্য কী কী চমক থাকতে চলেছে? শাশ্বতীর কথায়, ‘‘এখনই সেটা বলে দিতে চাই না। তা হলে দর্শকের কৌতূহল নষ্ট হতে পারে। এটুকু বলতে পারি আগামী দিনে গল্পে ধ্রুবর অতীত উল্লেখযোগ্য মোচড় নিয়ে আসতে চলেছে।’’