Advertisement
E-Paper

দৃষ্টিসুখের উল্লাস পেতে দেখে ফেলাই যায় ‘আমাজন অভিযান’

পকেটের রেস্ত যদি বিদেশ ভ্রমণে অপারগ হয়, তবে দেখে দেখে ফেলাই যায় আড়াই ঘণ্টার এই বিশুদ্ধ ‘একস্ট্রাভেগেঞ্জা’। স্রেফ দৃষ্টিসুখের জন্য।

সম্রাট মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:১৪
‘আমাজন অভিযান’-এ দেব।

‘আমাজন অভিযান’-এ দেব।

চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে বিভূতিভূষণের শঙ্কর হাত ধরেছিল দেবের। আর আমাজনের জঙ্গলে কমলেশ্বরের শঙ্কর যার হাত ধরে অভিযানে বেরিয়ে পড়লেন, তিনি দেব নন, মহা দেব। সোনার শহর ‘এল ডোরাডো’ খুঁজতে গিয়ে পরাক্রমের যে ‘মিক্সড চাট’ পরিচালক সাজিয়ে দিয়েছেন, তাতে হেন কিছু নেই যা ঘাটালের সাংসদকে করতে হয়নি। সে বন্দুক ছোড়াই হোক বা চিতাবাঘের সঙ্গে কুস্তি। তাতেই শেষ নয়। সঙ্গী অভিযাত্রীর মৃত্যুর বদলা নিতে প্রমাণ সাইজের এক অ্যানাকোন্ডাকে নায়ক যে ভাবে গাছে বেঁধে তার ভবলীলা সাঙ্গ করলেন, সে দৃশ্য দেখলে এই শীতের শহরে হাড়ে কাঁপুনি ধরতে বাধ্য। একটাই রক্ষে। এ ছবির জাগুয়ার, কালো বাঘ থেকে অ্যানাকোন্ডা— কেউই আসল নয়। প্রত্যেকেই নিকষ্যি ভার্চুয়াল। নয়তো, এমন হেনস্থার সংবাদে তারা নির্ঘাত পার্লামেন্ট বা নবান্ন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে ছুটে আসত।

অতএব, সম্ভাব্যতার পাটিগণিতকে আপাতত কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা যাক। পকেটের রেস্ত যদি বিদেশ ভ্রমণে অপারগ হয়, তবে দেখে দেখে ফেলাই যায় আড়াই ঘণ্টার এই বিশুদ্ধ ‘একস্ট্রাভেগেঞ্জা’। স্রেফ দৃষ্টিসুখের জন্য।

১৯১৫ সাল। ধুতি-পাঞ্জাবিতে শোভিত শঙ্কর গ্রামের পাঠশালার গুরুমশাই। হঠাৎ তাঁর কাছে টেলিগ্রাম আসে অ্যানা নামের এক ইতালীয় তরুণীর। শঙ্করের সাক্ষাৎপ্রার্থী তিনি। ক’দিন পরেই শঙ্করের গ্রামে অ্যানার আবির্ভাব। শঙ্করকে তিনি জানান, ইতালিতে জন্মালেও তিনি বড় হয়েছেন ব্রাজিলে। তাঁর বাবা মার্কো এক অভিযাত্রী। সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ‘এল ডোরাডো’ খুঁজতে। কিন্তু সফল হননি। মাঝপথে ডুবে যায় তাঁর জাহাজটিও। অবসাদগ্রস্ত সেই মার্কো এখন মদে ডুবে আছেন। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। অতএব, শঙ্করের সাহায্য দরকার অ্যানার।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: যৌন ঈর্ষা আর একাকী বারান্দার আখ্যান

কী রকম?

অ্যানা শঙ্করের আফ্রিকা অভিযানের কাহিনি পড়েছেন। তিনি চান, মার্কো আবার ‘এল ডোরাডো’ খুঁজতে বেরোন। আর সেই অভিযানে সঙ্গে থাকুন শঙ্কর। কারণ, তাঁর মতো অভিযাত্রী নাকি কমই আছে। এই অ্যানা আবার গড়গড় করে তৎসম শব্দ সহযোগে বাংলা বলতে পারেন। কোথায়, কী ভাবে, কার কাছে শিখলেন— বাহুল্য ধরে নিয়েই বোধহয় চিত্রনাট্যকার সে প্রসঙ্গে যাননি।

যা-ই হোক, সুন্দরী তরুণীর অভিযানের প্রস্তাবে শঙ্কর এককথায় রাজি। কিন্তু মা রাজি নন। শঙ্করও নাছোড়বান্দা। এমন সুযোগ সারা জীবনে হয়তো আর আসবেই না। অতএব, বিধবা মাকে কান্নায় ভাসিয়ে মেমসাহেবের হাত ধরে গ্রাম ছাড়েন শঙ্কর। গন্তব্য, ব্রাজিল।


‘আমাজন অভিযান’-এর একটি দৃশ্যে দেব।

সেখানে গিয়ে মার্কো আর তাঁর মেয়ের সঙ্গে শঙ্কর বেরিয়ে পড়েন ‘এল ডোরাডো’ খুঁজতে। ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা সেই অভিযানে এক-এক সময়ে এক-এক রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। এবং বলাই বাহুল্য, প্রতিটি চ্যালেঞ্জই দুরমুশ করে দিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন নায়কই। এ ছবির অধিকাংশ সংলাপই ইংরেজিতে, যেমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তবু শঙ্কর, কেন কে জানে, বিশুদ্ধ ব্রাজিলীয়দের সঙ্গেও মাঝেমধ্যেই বাংলায় ভাব বিনিময়ের চেষ্টা করে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন, আমাজনের শুটিংয়ে ভগবানের দেখা পেয়েছিলেন দেব!

অভিযানের গল্পের শেষটুকু বলে দিতে নেই। সেই অংশটা উহ্যই থাক। বরং বলা যাক দু’জনের কথা, যাঁদের কাজ ঢেকে দেয় এ ছবির যাবতীয় দুর্বলতা। প্রথম জন সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার। গোটা ছবিতে আমাজন আর সেখানকার নিসর্গকে যে ভাবে তিনি তুলে ধরেছেন, তা এককথায় অসাধারণ। ওই একটি ক্ষেত্রে এ ছবি যথার্থই আন্তর্জাতিক মানের। দ্বিতীয় জন দেবজ্যোতি মিশ্র। কোনও গান না থাকায় এ গল্পে তাঁর কাজ অবশ্য সীমিত থেকেছে শুধু আবহসঙ্গীতে।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘ডুব’ দেখুন আর ডুব দিন প্রেমের সমুদ্রে

অ্যানার চরিত্রে ভেটলানা গুলাকোভাকে ভাল লাগে। নতুন মুখ তিনি। এবং তার চেয়েও বড় কথা যথার্থই বিদেশি। মেক-আপ দিয়ে মেমসাহেব সাজতে হয়নি তাঁকে। তাঁর বাবার চরিত্রে ডেভিড জেমস ভাল করেছেন, তবে তাঁর অভিনয় কোথাও কোথাও বড্ড চড়া দাগের। এ ছাড়া, দেবের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনি চেষ্টা করছেন অন্য ধরনের চরিত্র করার। করছেনও। কিন্তু পরিচিত ও চেনা অভিব্যক্তির ‘কমফর্ট জোন’ ছেড়ে বেরোতে পারছেন না। নিজেকে ভাঙচুর করার ক্ষেত্রে কুণ্ঠাই বোধহয় নায়ক থেকে অভিনেতা হওয়ার ক্ষেত্রে দেবের প্রধান বাধা।

কমলেশ্বরকে একটি কারণে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এ গল্পে অ্যানা আর শঙ্করের মধ্যে প্রেমটা তিনি শেষ পর্যন্ত হতে দেননি। গল্পের স্বার্থেই বোধহয় এইটুকু নির্মোহ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। শঙ্কর ফেরার জাহাজে ওঠার পরে কান্নায় ভেজা চোখ মোছেন অ্যানা। ব্যস, ওইটুকুই। তার বেশি কিছু নয়। আমাজনের জঙ্গলে ‘পাগলু ড্যান্স’ আমাদের দেখতে হয়নি।

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিঘা আর দার্জিলিঙের বাইরে বেরোতে না পেরে যে বাংলা ছবি এককালে ভৌগোলিক প্রতিবন্ধী হয়েই থেকে যেত, সেই টলিউড এখন ব্যাঙ্কক, ইউরোপ, আমেরিকা হয়ে আমাজনের বৃষ্টি-অরণ্যে ঢুকে পড়েছে। মাথায় কাউবয় হ্যাট আর হাতে বন্দুক নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ‘এল ডোরাডো’! এই উত্তরণটাই বোধহয় এ ছবির সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি।

Amazon Obhijaan Dev দেব Celebrities Tollywood Bengali movie আমাজন অভিযান Movie Review Film Actor মুভি রিভিউ Film Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy