Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: যৌন ঈর্ষা আর একাকী বারান্দার আখ্যান

কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেই দর্শকের মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে আসবে, “এত স্বগতোক্তি কেন?” মানে কেন? একটা লোক বারান্দায় বসে বউকে সন্দেহ করবে আর চারপাশের পুরুষদের ঈর্ষা করবে আর আবহে বেজে উঠবে করুণ সুর! বাপরে!

ঋকদেব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৭:০২
ছবির একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

ছবির একটি দৃশ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

বারান্দা

পরিচালক- রেশমি মিত্র

অভিনয়- ব্রাত্য বসু, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মানালি দে

গিরিজাপতি বিশ্বাস ইউনিভার্সাল মোটরস-এর বাতিল ফোরম্যান। দুর্ঘটনায় পা বাদ গিয়েছে। দু্’কামরার ঘর আর এক চিলতে বারান্দায় দিনাতিপাত হয় তার। অলস মস্তিষ্কে যৌন ঈর্ষার নয়া কারখানা চালু হয়।

স্ত্রী রুনু (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) চাকরি করে। গিরিজাদের সংসার চলে। তারা পয়সা বুঝলে গেস্ট-ও রাখেন— গিরিজার দুঃসম্পর্কের ভাই অম্বর (সাহেব ভট্টাচার্য)। তার সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে গিরিজার ঈর্ষা। ঈর্ষা বন্ধু মোহনকে ঘিরেও। পরিচালক রেশমি মিত্র প্রথমার্ধে সন্দেহের মোড়ক ছাড়িয়ে নাগরিক মানুষের যৌন ঈর্ষাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যতটা বোর করেছেন দর্শককে, তা কহতব্য নয়।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেই দর্শকের মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে আসবে, “এত স্বগতোক্তি কেন?” মানে কেন? একটা লোক বারান্দায় বসে বউকে সন্দেহ করবে আর চারপাশের পুরুষদের ঈর্ষা করবে আর আবহে বেজে উঠবে করুণ সুর! বাপরে!

এহ বাহ্য। ইন্টারভাল।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: ‘চিত্রকর’ দেখতে বসে বই পড়ছি বা বক্তৃতা শুনছি মনে হল

আর ইন্টারভালের পরে সত্যি গল্পটা মোড় নেয়। সেটা দেখা দরকার। রিভিউয়ে বলে দিলে অর্ধেক মাটি হয়ে যাবে। দেখুন। মোদ্দা কথায়, এক জন নাগরিক মানুষ, প্রথম যৌবনে গণিকাগৃহে যার যৌনতার পরিচয় ঘটে গিয়েছে, নারীসঙ্গে সমস্ত জীবন শুধু সে বিস্মিত হতে পারে না। বিস্ময় নয়, তার নিজের পরিচয়ের সমস্ত সঙ্কট দলা পাকিয়ে যৌনতার ভাষায় প্রকাশ পায়। কী ভাবে, তা অনেকটাই দেখিয়েছেন রেশমি।

বোর করেছেন বিস্তর, কিন্তু তার মধ্যে দিয়েও অনেক কিছু বলেছেন। যে সমস্ত সঙ্কট হালফিলের বাংলা ছবির রসদ, তাতে পয়সা দিয়ে শুধু ইন্টারভালের পরের বেশ কিছুক্ষণের জন্যই বারান্দা দেখতে পারেন।


ছবির একটি দৃশ্যে মানালী ও ব্রাত্য।

চিত্রনাট্যে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। ক্যামেরাতেও। ছবিতে যে বারান্দা দেখবেন, সেটা অদ্ভূত একটা জায়গা থেকে। উত্তর কলকাতার বাড়ি তো, গায়ে গায়ে লাগা সব। তার মধ্যেই একটা লম্বা বারান্দা। তার ঠিক বাইরে ক্যামেরা, মানে দর্শকের চোখ। মনে হবে জিরাফের গলায় চড়ে অদৃশ্য আপনি যুগলকে বারান্দায় বিশ্রম্ভালাপ করতে দেখছেন। অথবা রেলিং-এর জাফরির ওপারে বসে, দাঁড়িয়ে আত্মগত ঈশ্বরের কাছে স্বীকারোক্তি করছে গিরিজা।

বারান্দা আদপে একটা বহুমাত্রিক ব্যাপার। জীবনে ব্যথাট্যাথা পেয়ে হে দর্শক, আপনি যদি বারান্দায় একেবারে একা একা দিনপাত করে থাকেন, তা হলে নিশ্চই জানেন, বারান্দার কোণায় কোণায় গল্প থাকে। সেখানে বাইরে থেকে ক্যামেরা দেখায় বারান্দার ভিতরের কয়েক বর্গফুট জায়গা। আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচ দিয়ে চেনা স্কুটার, চেনা যুবতীদের রাস্তায় দেখায়। ওই ব্যাপারটাই আরও দেখালে ভাল হত। অনেক কম বোরিং হত। সত্যি। নাম ‘বারান্দা’ রাখার পরেও পরিচালক যে কী করে এমনটা করলেন, কে জানে!

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: এ বার থেকে ফিল্মেও আপনাকে দেখার অপেক্ষায় থাকব কপিল

দৃশ্য ধরতে না পারলেও শব্দ ধরা পড়েছে সুন্দর। উত্তর কলকাতা এক দুর্দান্ত সাউন্ডস্কেপ। সেখানে ফিরিওয়ালা, ভেসে আসা হিন্দি গান, সন্ধ্যায় পড়শি বাড়িতে কিশোরীর রেওয়াজ, যথাসময়ে কোকিল— সব যুতসই ভাবে আছে এই ছবিতে। শুধু এই ধ্বনি-আবহটাই নিখুঁত।

অভিনয় নিয়ে বিশেষ বলার নেই। ব্রাত্য ভাল করেছেন। মানালি দে-ও।

শেষকালে যেটা বলার, দু’টো হাফ মানুষ জুড়ে একটা আস্ত মানুষ হয় না। একটা আস্ত সংসার হয় না। আস্ত সম্পর্ক হয় না। আস্ত সিনেমাও হয় না।

শুধু গিরিজার গল্পে থেকে গেলেই আরও স্মার্ট হত ছবিটা। আধাখ্যাঁচড়া ভাবে রুনুর নিজের গল্পটাও শেষে জোড়ার কোনও দরকার ছিল না।

Bratya Basu Rituparna Sengupta Movie Review মুভি রিভিউ Film Actor Film Actress Celebrities Film Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy