Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’: ভুয়ো শিক্ষার আড়ালে সমাজের কালো ছবি

পরিচালক সৌমিক সেন আসলে ধরে ফেলেছেন সময়ের শিরা। তাঁর ছবির ফ্রেমে তাই শুরুতেই ধরা পড়ে সীমাবদ্ধের পোস্টার।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৬
আপাত এই সরল গল্প দেখতে কেন ভাল লাগে?

আপাত এই সরল গল্প দেখতে কেন ভাল লাগে?

‘পড়ালেখা করে যে/গাড়িঘোড়া চড়ে সে।’ এই আপ্তবাক্যের নীচে কত ছেলেমেয়ের স্বপ্ন মারা যায় রোজ? শুধু বাবা-মা-সমাজকে একটু খুশি করতে রোজ তিলে তিলে মারা যান কত ছাত্রছাত্রী? আর তাদের বলি করতে রোজ গজিয়ে ওঠে, কত ভুঁইফোড় কলেজ কোচিং চারপাশে? এ সব প্রশ্নই ঘুরেফিরে এসেছে ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’ ছবিতে। দুর্নীতি যখন একটা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, যখন সাদা-কালো গুলিয়ে অন্ধকার, এ ছবির শেষে তখন ভেসে ওঠে একাধিক খবরের কাগজের কাটআউট। তাতে লেখা, গত ৩-৪ বছরে অনেক ছাত্রের নাম। যারা স্বপ্ন দেখেছিল এক দিন বড় কেউকেটা হবে, তাই নাম লিখিয়েছিল ভুয়ো কলেজে। পরিণতি যদিও এসেছে মারা যাওয়ায়।

পরিচালক সৌমিক সেন আসলে ধরে ফেলেছেন সময়ের শিরা। তাঁর ছবির ফ্রেমে তাই শুরুতেই ধরা পড়ে সীমাবদ্ধের পোস্টার। ক্লোজ শটে ইমরান হাশমি-র চক্রান্তর হাসির নেপথ্যে হাসেন মোটা ফ্রেমের উৎপল দত্ত। মনে পড়ে, সেই ছবির ডালহৌসি পাড়া। পড়ালেখা জানা ছেলেদের ধরে মাথা খাওয়া। ব্যবসা বোঝানো। ইমরান হাশমি যেন-বা এ যুগের সেই চক্রান্তকারী। যিনি জানেন, গোটা ব্যবস্থাটাই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই সিস্টেমে ঢুকে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চেষ্টা করেন। পরিণতি যদিও করুণ হয়। তবু ছবির শেষে তার চুপ করে বসে থাকা দেখে, জোর আসে। মনে হয়, তার রাস্তা ভুল ছিল না।

বেসরকারি মিডিয়া কলেজ বা এমবিএ টিউটোরিয়াল ব্যাঙের ছাতার মতোই গজাচ্ছে চারপাশে। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এ ছবিতে ইমরান হাশমি। ছাত্রদের মনে জোর দেন। বলেন, আশার কথা। কিন্তু তাতে তাঁর লাভ হলেও ছাত্রদের তেমন লাভ হয় না। তাঁর জীবনে প্রেম আসে, তাঁর শাগরেদরাও এমনকি বিয়ে করে। সবই ভুয়ো ব্যবসার কল্যাণে। কিন্তু কর্মফল আছেই। তাই, গোটা কাজের দামও দিতে হয়। ভেঙে পড়ে তাসের ঘর। হতাশায় মারা যায় ছাত্রেরা। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয়ে ওঠে। ধরা পড়ে যায় চক্রান্তকারী।


পরিচালক সৌমিক সেন আসলে ধরে ফেলেছেন সময়ের শিরা।

আপাত এই সরল গল্প দেখতে কেন ভাল লাগে? কারণ, খবরের কাগজের কল্যাণে ভুয়ো লগ্নি সংস্থা শব্দটা ভাত-ডালের মতোই রোজকার শব্দ। নকল গ্লোরি আর মিথ্যা প্রলোভনে জেরবার আমরা। মানুষের হাসি, প্রেম, ঘুম সবই কিনে নেওয়া গিয়েছে। ভুল রাজনীতি ও হিংসাই দুনিয়ার নিয়তি যখন তখন এ ছবি বলে, অন্ধকার সময়ে অন্ধকারের গান হোক। কারণ ঈশ্বর মারা গিয়েছেন। আমরা বাস্তুচ্যুত। জার্মান দেওয়াল ভেঙে গিয়েও জুড়েছে। ভারত কি জোড়া লাগবে?

আরও পড়ুন, পাঁচ বছর কঠিন লড়াইয়ের পর ক্যানসার মুক্ত ইমরান হাশমির পুত্র আয়ান

জানা নেই। তবে সাম্প্রতিক বলিউডের অন্য ধারার কিছু ছবির মতোই এ ছবি বেশ স্মার্ট। খবরের কাগজের সাম্প্রতিক জরুরি ঘটনাকে বিষয় করে তুলতে কাব্য করেননি পরিচালক। অতিরিক্ত কিছুই করেননি। সম্পাদনা, চিত্রনাট, আবহে টানটান পরিণতি। দ্রুত কাটে আমরা দেখি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, মুম্বইতে ছেয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। হাসছেন ইমরান হাশমি। শয়তানি হাসি। যেন পতন অনিবার্য জেনেও শেষ খেলা খেলছেন। সব নিয়ে শেষে ভেসেও যাচ্ছেন। আর সে পরাজয়ও আনন্দের। গর্বের। কারণ দেশটাই ইতরের দেশ।

আরও পড়ুন, ‘শ্রীদেবী বাংলো’র টিজার দেখে পরিচালককে আইনি নোটিস বনি কপূরের

গোটা আখ্যান দেখে বেরিয়ে আসতে আসতে এটাও ভাবছিলাম, কেন এত বিশ্বাসযোগ্য লাগে এ ব্ল্যাক হিউমার? হয়তো, অভিনেতা ইমরান হাশমি নামটার সঙ্গেই জড়িয়ে অপরাধময়তা। পাপ। আমাদের বড় হওয়ায় বার বার তিনি আমাদের কালো পথের ইশারাই দিয়েছেন ছবির পর ছবিতে। অথচ সেই পাপকে হাতিয়ার করেও যে পাল্টা ধাক্কা মারা যায় তা কখনও বলেননি। এ বার বললেন। এ ছবি যদি বিরাট কিছু না-ও হয়, এটুকুর জন্য স্মরণ করা যাবে যে, ইমরানের আস্তিনের এতকালের লুকনো তাস বের করে দেখালেন তিনি। একটা সাবোটাজের গল্প বললেন। যা বলে, ভাঙো। বার বার ভাঙো। নয়তো গড়া যাবে না। এবং ভয় পেও না। কারণ সামনে বসন্ত। ফুল ছড়ানোর পালা।

(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)

Movie Review Film Review মুভি রিভিউ Bollywood Celebrities Hindi Film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy