স্পাইডারম্যান মুখোশ বা টি-শার্ট। ‘স্টার ওয়ার্স’-এর অস্ত্রের আদলে খেলনা তরোয়াল। ‘ব্যাটম্যান’-ছাপ টিফিন বাক্স থেকে মোবাইলের মডেল— বাকি নেই কিছুই।
তাবড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে গাঁটছড়ায় ছবি বিপণনের এই কৌশল এখন জলভাত এ দেশেও। বলিউডি তারকাদের ছবির গায়েও এখন রকমারি ব্র্যান্ডিংয়ের গয়না। ছবির বিষয়বস্তু অনুযায়ী চুলের সুগন্ধি তেল থেকে কন্ডোম-ব্র্যান্ডেরও ফিল্মি যোগসাজশ। হালে টালিগঞ্জও ছবির বিপণনে তেড়েফুঁড়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে জোট বাঁধছে।
একদা ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ বা সন্দীপ রায়ের ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে অঞ্জলি জুয়েলার্স-এর নাম জড়িয়েছিল। সালঙ্কারা ঐশ্বর্য রাইয়ের ছবিতেই একযোগে প্রচার হয়ে যায় সিনেমা ও গয়নার। অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের রাজকাহিনি, ‘জুলফিকার’-এর গয়নাও তৈরি করেছেন তাঁরা। ‘‘আমরা থিম বুঝে ছবির সঙ্গে যুক্ত হই,’’ বলছেন সংস্থার তরফে অনর্ঘ চৌধুরী। দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা মিষ্টি বিপণি ‘বলরাম’-এর প্যাকেটে আবার শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’ থেকে ‘জুলফিকার’-এর ছবি।
কেন ব্র্যান্ডিংয়ের এই রমরমা? ‘‘নিত্য ব্যবহার্য জিনিসে ছবির নাম খোদাই করতে পারলে তো অ্যাডভান্টেজ!’’ বলছেন বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ রাম রায়। মিষ্টির বাক্সের সঙ্গে সিনেমার খবরটি বাড়ি-বাড়ি ঢুকে পড়ল, আর প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাদের দিয়ে মুফতে প্রচারও হল!
শিবপ্রসাদ-নন্দিতার নতুন ছবি ‘পোস্ত’-র সঙ্গেই ২৩টি ব্র্যান্ডের মহাজোট। কোকাকোলার সৌজন্যে হোর্ডিং থেকে পোশাক ব্র্যান্ড ‘ম্যাক্স’-এর তৈরি টি-শার্ট বা দোকানের ভেতরে ফিল্মি কর্নার— মজুত সবই।
সিনেমার মুখরোচক সংলাপ কিনে তা ডিজিটাল পরিসর, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছে ‘মুখরোচক’ চানাচুর। সিনেমার প্রচারে বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন, প্রিমিয়ার শো থেকে কাগজে বিজ্ঞাপন— নানা কসরতে ব্র্যান্ডের সঙ্গে যোগসাজশ। অনীক দত্তের পরের ছবি ‘মেঘনাদ বধ রহস্য’-র প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসানের দাবি, ‘‘টালিগঞ্জে সিনেমার বাজার খুব বড় নয়। মাপা বাজেটের কাজ। কিন্তু বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রচারের খরচের ৫০-৬০ শতাংশ কমানো সম্ভব!’’
হলিউডে অবশ্য ব্র্যান্ডিং ছবির রোজগারেরও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। ‘স্টার ওয়ার্স’ বা ‘হ্যারি পটার’— ছবির নাম ভাঙিয়ে ৪০০০ থেকে ২৫০০ কোটি ডলার আয় করেছেন প্রযোজক। ব্র্যান্ডিংয়ে অন্তত ২৫ কোটির শৃঙ্গ ছুঁতে আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছে বাহুবলী-২। মোবাইল-ল্যাপটপের খাপ থেকে কফিমাগ-টিশার্টে প্রভাস-অনুষ্কা শেট্টিদের চাহিদা দিব্যি মালুম হচ্ছে। গ্রহণযোগ্যতা বাড়লে ব্র্যান্ডের হাত ধরে বাংলা ছবির লক্ষ্মীলাভের রাস্তাও ঠিকই খুলে যাবে বলে আশা করছেন প্রযোজক-পরিচালকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy