নতুন ওয়েব সিরিজ় ‘সাবাশ ফেলুদা’তে ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করবেন পরমব্রত। ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: টিজ়ার বেরোনোর পর থেকেই সমাজমাধ্যম তোলপাড়। ‘পরমকে ফেলুদা হিসাবে মানাচ্ছে না’ জাতীয় মন্তব্য পেয়ে নার্ভাস লাগছে?
পরমব্রত: এটার জন্য আমরা কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম। বাঙালির কাছে সেন্টিমেন্টাল বিষয় খুব বেশি নেই। যা আছে, তার মধ্যে একটা অবশ্যই সত্যজিৎ রায় এবং ফেলুদা। যাঁদের কাছে থেকে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে, তাঁদের মধ্যে তিন ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে। এক নম্বর, যাঁরা সত্যিই জেনুইন। তাঁরা শুধু সমাজমাধ্যমেই নয়, সর্বত্র রয়েছেন। যাঁদের খারাপ লাগা যেমন আছে, তেমনই ভাল লাগাও আছে। নতুন একটা কাজ নিয়ে কৌতূহল, উৎসাহ রয়েছে। এঁদের পাশাপাশি রয়েছে দ্বিতীয় গোষ্ঠী। যাঁরা হয়তো কোনও এক অভিনেতাকেই তাঁদের স্মৃতির মণিকোঠায় বসিয়ে রেখেছেন। কিংবা বইয়ের পাতা থেকে পড়ে কল্পনায় এক বিশেষ ছবি এঁকে রেখেছেন। ফলে সেই ছবির সঙ্গে আমায় মেলাতে পারছেন না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই একটা রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। এঁদের দিকটাও আমি সত্যিই বুঝি। হয়তো সিরিজ়টা দেখার পর এঁদের ধারণা বদলেও যেতে পারে। তবে তৃতীয় একটা গোষ্ঠীও রয়েছে। যাঁরা শুধুই নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য সব ব্যাপারেই কোনও না কোনও মতামত দেন। এত নেতিবাচক মন্তব্য সত্যিই ভাল লাগতে পারে না। তবে এমন একটা কাজ করতে গেলে এগুলো যে হবে, সেটা জেনেই এগোতে হয়।
প্রশ্ন: বাঙালি ফেলুদা নিয়ে বেশিই আবেগপ্রবণ। তাই সিরিজ়টা যেমন ভাল লাগতে পারে, খারাপও লাগতে পারে। দুই ধরনের পরিণতির জন্যেই আপনি প্রস্তুত তো?
পরমব্রত: এত দিন ধরে অভিনয়, পরিচালনা বা প্রযোজনা করার পর সব রকম পরিস্থিতির জন্যই একটা নার্ভ তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই বলে কি দুশ্চিন্তা হয় না? নিশ্চয়ই হয়। তবে যে হেতু আমি অনেক ধরনের কাজ একসঙ্গে করি, তাই নিজেকে এই সবের চেয়ে একটু দূরে রেখে পুরো বিষয়টা দেখার অভ্যাস করে ফেলতে পেরেছি।
প্রশ্ন: আপনি নিজে এর আগে এক বার ফেলুদার পরিচালনা এবং অভিনয় একসঙ্গে করেছিলেন। এ বার আর সেই দায়িত্ব নিলেন না কেন?
পরমব্রত: এর আগে যখন আমরা কাজটা করেছিলাম, তখন ওটিটি সে ভাবে শুরুই হয়নি। একদমই জ়িরো বাজেটে করি। এখন আবার যখন আমরা প্রযোজনার দায়িত্ব নিলাম এবং জ়ি ফাইভের মতো একটা প্ল্যাটফর্ম এগিয়ে এল, তখন আমাদের মনে হয়েছিল এমন কাউকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত যিনি থ্রিলারে সিদ্ধহস্ত। সেই কারণেই অরিন্দমদার (অরিন্দম শীল) কথা আমরা ভাবি। এই মুহূর্তে আমি ফেলুদার মতো একটা কাজে অভিনয় আর পরিচালনা একসঙ্গে করতে চাইনি। ভবিষ্যতেও আর করব না। তাই স্ক্রিপ্ট লেখার সময়ও আমি একদমই ছিলাম না। আমার ভূমিকা এখানে শুধুই এক জন অভিনেতার।
প্রশ্ন: সম্প্রতি হিন্দিতে আপনার সব কাজই প্রশংসিত। তবে এ বছর ‘মানবজমিন’, ‘ডক্টর বক্সী’ বা ‘ঘরে ফেরার গান’— আপনার কোনও বাংলা ছবিই চলেনি। হিন্দি-বাংলা দু’টোই সামলাতে গিয়ে কি কোথাও তাল কাটছে?
পরমব্রত: সত্যি কথা বলতে কী, ‘মানবজমিন’ বা ‘ডক্টর বক্সী’ যে রকম ছবি হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। ‘মানবজমিন’ আমি একদমই শ্রীজাতদার জন্য করেছিলাম। অতিমারির পর আমরা সকলেই একটু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। সে সয়ম দাঁড়িয়ে অনেক ছবি করতে রাজি হয়েছিলাম, যা হয়তো এখন আর করব না। ‘ডক্টর বক্সী’ তেমনই একটা ছবি। ‘ঘরে ফেরার গান’ বাণিজ্যসফল নয়। কিন্তু ছবিটা অনেকের পছন্দ হয়েছিল। নন্দনে বেশ কিছু দিন চলেছিল। ছবিটা নিয়ে আলোচনাও তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছে। তবে ২০২৩ সালে এখনও পর্যন্ত বহু ছবি মুক্তি পেয়েছে। কোনটা সে ভাবে চলেছে বলুন তো? অনেক বেশি বাজেটের ছবিও তো চলেনি। কোন ছবিটা চলতে পারে, সে ভাবনাচিন্তা করেই এ বার থেকে ছবি করব। নতুন পরিচালক, নতুন প্রযোজকদের ছবি আর করব না ঠিক করেছি। পরিচালক অবশ্য নতুন হতেই পারেন। কিন্তু তার সঙ্গে যদি প্রযোজকও নতুন হন, তা হলে আমি হয়তো আর রাজি হব না। এ বছর আমি নতুন পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে একটাও ছবি করছি না।
প্রশ্ন: নতুন প্রযোজকদের সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত কি শুধুই ছবির মানের কথা ভেবে? নাকি টলিউ়ডের সঙ্গে এত ঘন ঘন দুর্নীতি জড়িয়ে যাচ্ছে, সেই ভয়েও?
পরমব্রত: না, আমার দুর্নীতি নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। আমি শুধুই ছবির মানের কথা ভাবছি। খুব ভাল ভাবনাও ভাল আয়োজন, ভাল ভাবে বানানো বা ভাল ডিস্ট্রিবিউশনের অভাবে মাঠে মারা যাচ্ছে। তখন অভিনেতা হিসাবে নিজের হাত-পা বাঁধা মনে হয়। আমি যে হেতু শুধু অভিনয় করি না, আমার পরিস্থিতি যেন আরও বদ্ধ হয়ে ওঠে। কারণ আমি তো বুঝতে পারি, কী করলে ছবিটা আরও ভাল হবে। বুঝেও ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি না। তাই এ বছর আর শুধু কারও অনুরোধ রাখার জন্য ছবি করছি না। কেউ যদি নতুন কোনও ভাবনা নিয়ে আসেন, আমার প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে হাত মেলাতে চাইলে ভেবে দেখতে পারি। কারণে সেখানে একটু হলেও আমাদের ক্রিয়েটিভ কন্ট্রোল থাকবে।
প্রশ্ন: কোন ছবি চলবে ভাবতে গিয়ে অনেক সময় একই ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছে। পরিচালক হিসাবে আপনিও কি সেই পথেই হাঁটবেন?
পরমব্রত: না, আমি ঠিক সেই অর্থে বলিনি। সে ভাবে তো কখনও ছবি বানাইনি। একটা বিশ্বাস থেকে বানিয়েছি। কোন গল্পটা বলা প্রয়োজন, সেই বিশ্বাস থেকে। তবে, সেই গল্পটাই কী ভাবে বললে দর্শক বেশি দেখবেন সেটাও ভাবতে হবে। বিশ্বাস আর বাণিজ্যকে মেলানোর একটা রাস্তা তৈরি করতে হবে। আমি শুধু আমার ছবির কথা বলছি না। মে মাস পড়ে গেল, একটা বাংলা ছবিও চলল না। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই একটু ছবির বাণিজ্য নিয়েও চিন্তা করা উচিত।
প্রশ্ন: ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর বক্স অফিস দেখার পর কি আপনি ছবিমুক্তির সময় বা প্রচার নিয়ে একটু বেশি চিন্তাভাবনা করবেন?
পরমব্রত: মুক্তির সময় নিয়ে একশো বার ভাবনাচিন্তা করব। ‘বৌদি ক্যান্টিন’ ওটিটি-তে কী পরিমাণ সফল তা আমি দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝতে পারি। এখন মনে হয়, পুজোর সময় ছবিটা রিলিজ় করা ঠিক হয়নি। অতিমারির পর ২০২২ সালটাই প্রথম বড় পুজো ছিল। তার আগে অবধি জানতাম যে পুজোয় যা-ই মুক্তি পাক, কিছু না কিছু ব্যবসা করবে। কিন্তু আমরা যেটা বুঝতে পারিনি, তা হল এর মাঝে একটা বড় বদল চলে এসেছে। দর্শক ঠিক করে ফেলেছেন, কোন ছবি তাঁরা বড় পর্দায় কখন দেখতে চান। এর পেছনে অবশ্যই ওটিটি-র একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে সকলেই চায়, তার ছবি বড় পর্দায় ভাল চলুক। তাই আগের পুজো থেকে একটা শিক্ষা হল।
প্রশ্ন: কলকাতা-মুম্বই মিলিয়ে আপনার ব্যস্ততা তুঙ্গে। এই মুহূর্তে কী কী কাজ করছেন?
পরমব্রত: বাংলায় মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে দু’টো ছবি। আমার পরিচালনায় ‘হাওয়া বদল টু’-এর কাজ শুরু করব। একটি রিয়্যালিটি শোয়ে সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়েছি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আগামী ছবিতে অভিনয়ও করছি। হিন্দিতে নিখিল আডবাণীর ‘মুম্বই ডায়েরিজ় ২’ আর ‘পিআই মীনা’ মুক্তি পাবে অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়োজ়ে। ‘ওয়াকার হাউজ়’ এবং আমার প্রথম সোলো লিডের হিন্দি ছবি ‘অবস্থি ভার্সেস অবস্থি’ও রয়েছে। সঙ্গে আমার আগের করা দুটো ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নের পরিকল্পনাও চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy