Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘পিঙ্ক’-এর ফলক, এ বার মধুরের নায়িকা

বদলে গিয়েছে ‘পিঙ্ক’য়ের ফলক আলির জীবন। আসলে কীর্তি কুলহারি-র। এ বার তিনি মধুর ভাণ্ডারকরের নায়িকা। কথা বললেন সায়ন আচার্য-র সঙ্গেবদলে গিয়েছে ‘পিঙ্ক’য়ের ফলক আলির জীবন। আসলে কীর্তি কুলহারি-র। এ বার তিনি মধুর ভাণ্ডারকরের নায়িকা। কথা বললেন সায়ন আচার্য-র সঙ্গে

কীর্তি কুলহারি।

কীর্তি কুলহারি।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৬
Share: Save:

রাস্তায় বেরোলে আজকাল সবাই আড়চোখে তাকাচ্ছে তাঁর দিকে।

ফেসবুকে অচেনা পুরুষদের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে তিনি নাজেহাল।

ফলক আলি এখন হন্যে হয়ে একটু ‘ফ্রি স্পেস’ খুঁজছেন।

ভুল পড়লেন। খুঁজছেন না।

‘পিঙ্ক’ রিলিজ করেছে মাসখানেক আগে, এবং ইতিমধ্যেই দেশের মুখ হয়ে উঠেছেন দিল্লির তিন যুবতী—মিনাল অরোরা, আন্দ্রেয়া তারিয়াং, এবং... ফলক আলি!

গোটা দেশ যখন তাঁদের দেখছে অন্য চোখে, বাস্তবের ফলক, কীর্তি কুলহারি-র মুখে এক যুদ্ধজয়ের হাসি।

‘পিঙ্ক’য়ের পর তিনি যে এ বার তৈরি হচ্ছেন আরেকটা বড় ম্যাচের জন্য। মধুর ভাণ্ডারকর-য়ের পরের ছবি ‘ইন্দু সরকার’য়ে তিনি নামভূমিকায়। ছবির পটভূমিকায় দেশের জরুরি অবস্থা আর সত্তর দশকের অশান্ত সময়। কথা বলার আড়ষ্টতা নিয়েও এক গৃহবধূর কবিতা লেখা, জীবনযুদ্ধের লড়াই নিয়েই ইন্দু। পর্দায় কীর্তি কুলহারি।

চরিত্রের গভীরে যাওয়ার জন্য বাংলা শিখছেন। যাচ্ছেন স্পিচ থেরাপিস্ট ও মনোবিদের কাছে। আর পরিচালকের নাম যেহেতু মধুর ভাণ্ডারকর, কীর্তিও মানছেন চাপটা অনেক বেশি। একটু এদিক ওদিক হলেই যে মুশকিল।

মাস দু’য়েক আগেও কীর্তিকে ভাল করে চিনতেন না মধুর। কয়েক বার এদিক ওদিক দেখা হলেও কাজ নিয়ে কথা হয়নি কোনও দিন।

সেই মধুরই ‘পিঙ্ক’ দেখে সারারাত ঘুমোতে পারেননি। পর দিন সাতসকালে কীর্তির ফোনে ঢোকে ছোট্ট একটি মেসেজ — ‘তোমার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। আমার পরের ছবির হিরোইন হবে?’

প্রেরকের নাম দেখে কীর্তি প্রথমে ভেবেছিলেন এটা কোনও প্র্যাকটিকাল জোক। ঘোর কাটে মিনিট দশেক পরে। যখন ফোন করেন মধুর স্বয়ং। বলেন তাঁর নতুন ছবি ‘ইন্দু সরকার’য়ে তাঁকেই ইন্দুর ভূমিকায় চান।

“গত আট মাস ধরে ‘ইন্দু সরকার’য়ে রিসার্চ করতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল এমন কাউকে চাই যিনি হবেন অবিকল ইন্দুর মতো। এবং ‘পিঙ্ক’য়ে কীর্তিকে দেখে মনে হয়, আরে এই তো সেই মেয়ে,’’ মু্ম্বই থেকে আনন্দplus-কে বলছিলেন মধুর। ফলক আলি যদি হয়ে থাকেন প্রতিবাদের মুখ, ইন্দুর লড়াইটা আরও কঠিন। এক দিকে জরুরি অবস্থা, অন্য দিকে রক্ষণশীল পরিবারের কঠিন বেড়াজাল। তার মধ্যেও নিজের স্বপ্নে বুঁদ এক সৃজনশীল কবি। আসলে গৃহবধূ। ‘‘ইন্দুর চরিত্রে আমি এমন কাউকে খুঁজছিলাম যে একটু আধো আধো করে কথা বলবে। কিন্তু একই সঙ্গে প্রতিটা মুহূর্তে নিজের ব্যক্তিত্বের প্রকাশও ঘটাবে। সে জন্যই কীর্তিকে নেওয়া,’’ বলছিলেন ‘পেজ থ্রি’, ‘ফ্যাশন’য়ের পরিচালক।

সপ্তাহখানেক পর পুণে, দিল্লি ও মুম্বইতে শ্যুটিং, এবং কীর্তি নিজেও মানছেন ফলক ও ইন্দু দুই মেরুর বাসিন্দা। ‘‘আসলে ফলক-য়ের চরিত্রটা ছিল অনেকটা আমার মতোই। যে কোনও কিছুতেই ভয় পায় না। কিন্তু আমি জরুরি অবস্থা দেখিনি, ওই সময়টা সম্পর্কে ধারণাটাও খুব একটা স্পষ্ট নয়। তাই এই রোলটাও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং,’’ বলছিলেন কীর্তি।

হঠাৎ একটু থামলেন। তার পর শান্ত গলায় বললেন, ‘‘আমার তো আর ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বাবা-কাকা নেই, তাই স্ট্রাগলটাও বেশি। যখন লোকজন মুখের ওপর অপমান
করত, ভাবতাম এখন যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তাঁরাই একদিন আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইবেন। আই উইল ওয়েট ফর দ্যাট ডে। আর আজ তো...’’

‘পিঙ্ক’য়ে কীর্তি কুলহারি, তাপসী পান্নু ও আন্দ্রেয়া তারিয়াং

মা-দিদি চায়নি অ্যাক্টিং করি

এই ক’দিন আগেও পৃথ্বী থিয়েটারে যখন নাটক করতে যেতেন, আশেপাশের লোকজন বিশেষ পাত্তা দিতেন না। তাঁকে দেখা যেত না কোনও ফিল্মি পার্টি কিংবা প্রিমিয়ারেও। ‘‘কেন ডাকবে বলুন তো? তখন তো আমি জবলেস,’’ বলছিলেন কীর্তি।

বাবা নৌ-বাহিনীর প্রাক্তন অফিসার। বড় দিদিও চাকরি করেন সেনাবাহিনীতে। সুতরাং সেই পরিবারের ছোট মেয়ে যখন বলিউডে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রায় কয়েক মাস কথা বলেননি মা-দিদিরা।

‘‘একমাত্র বাবা-ই যা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দাদা-দিদিরাও আমার এগেনস্টে চলে গিয়েছিল। কিন্তু একমাত্র বাবা জানতেন যে আমি পারব,’’ বলছিলেন ফলক। বাড়ির ছবিটা অবশ্য পাল্টায় প্রথম সিনেমা
‘খিচড়ি’ রিলিজ হওয়ার পর। দিদি বা মা, যাঁরা কয়েক দিন আগেও ভেবেছিলেন যে এই মেয়েটাই বাড়ির নাম ডোবাল, তাঁরাই হঠাৎ করে
পাশে দাঁড়ালেন।

কিন্তু বলিউডে তখনও তিনি ব্রাত্য। ‘শয়তান’-য়ের সাফল্যের পরে ভেবেছিলেন চাকাটা ঘুরবে। কিন্তু হল কই। “তার পর যে ক’টা ছবিতে হাত দিলাম সব ক’টা ফ্লপ,’’ বলছিলেন কীর্তি।

হাতে তখন একটাও ফিল্ম নেই। কয়েকটা নাটক শুধু। বলিউডের ঘনিষ্ঠরাও মুখ ফিরিয়েছেন। এমন সময় কয়েক জন উপদেশ দিলেন, একটু লো-বাজেটের ছবি করতে। ‘‘একবার ভাবলাম রাজি হয়ে যাই। কাস্টিং কাউচের অনেক গল্প শুনতাম। আমি ওই সব কোনও দিন পারব না,’’ গম্ভীর গলায় বলছিলেন কীর্তি।

নাটক করতে করতেই কয়েক জন বন্ধুর পরামর্শে নিজের পিআর করার চেষ্টা করেছিলেন। দিন কয়েক পর বুঝলেন, ওটাও তাঁর দ্বারা হবে না। ‘‘আমি প্রাইভেট একজন মানুষ। কোথায় যাচ্ছি, কী পরছি—এ সব বলতে পারব না,’’ বলছিলেন কীর্তি।

ওই স্টেজটাই আমার ঘর

হাতে টাকা কম। কয়েকজন বন্ধু ছাড়া বিশেষ কেউ খোঁজখবর নেয় না। এ রকম পরিস্থিতিতে কীর্তির একটা ‘দ্বিতীয়’ ঘর ছিল।

‘‘যখন মঞ্চে উঠতাম, মনে হতো এটাই আমার ঘরবাড়ি। মনে হতো, এই একটা জায়গার জন্য আমি সব কিছু দিতে পারি। এখন মনে হয়, ভাগ্যিস ওই স্টেজটা ছিল,’’ একটু থেমে বললেন কীর্তি। ‘পিঙ্ক’য়ের অডিশনের আগে, যখন হাত প্রায় খালি, তখন পাশে ছিলেন এমন একজন, যাঁকে মাসকয়েক আগে বিয়ে করেছেন। পুরোনো বন্ধু সাহিল সেহগল।

রণবীর কপূরের ফ্যান। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সাবধানী কীর্তি। ‘‘আপাতত ‘ইন্দু সরকার’ নিয়েই ব্যস্ত। এর পর কী করব আমি নিজেই জানি না।’’

আসলে, শুধু দিল্লির তিন তরুণী নয়, প্রায় স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়া এক অভিনেত্রীকেও যে আবার নতুন করে পথ চলতে শিখিয়েছে একটা রং। পিঙ্ক!

অন্য বিষয়গুলি:

Kirti Kulhari Madhur Bhandarkar Pink
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy