‘তুমি সুস্থ থাক / এই মানচিত্রে আজও তুমিই তো সুন্দরের সাঁকো’! রোগশয্যায় আচ্ছন্ন সত্যজিৎ রায়ের উদ্দেশে লেখা তাঁর কবিতার শেষে একদিন এটাই বলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘সুন্দরের সাঁকো’ শব্দবন্ধটুকু যে তাঁর প্রসঙ্গেও অত্যুক্তি নয়, মৃত্যু পরবর্তী টাটকা আবেগ ছাপিয়েও এটুকু মানেন বহু অনুরাগী। তাঁদের সবার ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সৌমিত্র-স্মৃতিভাঁড়ার বা আর্কাইভ সাজিয়ে তুলতে চান, কন্যা পৌলমী বসু। সৌমিত্রের দীর্ঘ রোগভোগ পর্বেই এই সঙ্কল্পে স্থিত হয়েছিলেন তিনি।
৪০ দিন নাগাড়ে বাবার জন্য ছোটাছুটির পরে রবিবার সৌমিত্রের প্রয়াণ দিবসটির শেষে শরীর যেন ছেড়ে দিয়েছে। ‘কিংবদন্তি বাঙালি’র দেহ নিয়ে যেখানেই যাওয়া হয়েছে, বাবার পাশটিতে অবিচল ছিলেন মেয়ে। শেষকৃত্য সেরে বাবুঘাটে অস্থি ভাসিয়ে ফেরার পর থেকে চেপে বসেছে পৃথিবীর ক্লান্তি। তবু পৌলমীর একটাই শান্তি: ‘‘শেষ সময়ে বাবাকে যাঁরা দেখছিলেন, তাঁরা ভালবেসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৪০ দিনেও বাবার বেডসোর হয়নি। ডাক্তার, নার্সদের কাছে আমি চিরঋণী।’’
সদ্য পিতৃহারাকে নানা দায়িত্ব নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। ‘‘আমি বা বাবা কেউই মৃত্যুর পরের কোনও অস্তিত্ব তেমন মানি না, পারলৌকিক আচারের আনুষ্ঠানিকতাতেও ভক্তি নেই। তবু আমাকেও কিছু কাজ করতে হবে। কারণ মা এ সব মানেন।’’ সোমবার বলছিলেন পৌলমী। আজ, মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতার একটি মন্দিরে পিতৃবিয়োগে কন্যার পালনীয় আচার সারবেন তিনি। পৌলমীর দাদা সৌগতও সময়মতো যা করার করবেন। ‘‘কিন্তু আমার মনের মতো পিতৃতর্পণ, তাঁর জীবনের উদ্যাপন— সেটা আমি পরে, আমার মতো করে করব,’’ বলছেন সৌমিত্রকন্যা।