Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Soumitra Chatterjee

সৌমিত্রের আর্কাইভ গড়ার ভাবনা কন্যার

সৌমিত্রের স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা ছাড়া দুই ছোট ভাই, বোনও রয়েছেন। বোন অনুরাধা সিংহ অসুস্থ। তবু দাদাকে দেখতে গল্ফগ্রিনে এসেছিলেন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

‘তুমি সুস্থ থাক / এই মানচিত্রে আজও তুমিই তো সুন্দরের সাঁকো’! রোগশয্যায় আচ্ছন্ন সত্যজিৎ রায়ের উদ্দেশে লেখা তাঁর কবিতার শেষে একদিন এটাই বলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘সুন্দরের সাঁকো’ শব্দবন্ধটুকু যে তাঁর প্রসঙ্গেও অত্যুক্তি নয়, মৃত্যু পরবর্তী টাটকা আবেগ ছাপিয়েও এটুকু মানেন বহু অনুরাগী। তাঁদের সবার ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সৌমিত্র-স্মৃতিভাঁড়ার বা আর্কাইভ সাজিয়ে তুলতে চান, কন্যা পৌলমী বসু। সৌমিত্রের দীর্ঘ রোগভোগ পর্বেই এই সঙ্কল্পে স্থিত হয়েছিলেন তিনি।

৪০ দিন নাগাড়ে বাবার জন্য ছোটাছুটির পরে রবিবার সৌমিত্রের প্রয়াণ দিবসটির শেষে শরীর যেন ছেড়ে দিয়েছে। ‘কিংবদন্তি বাঙালি’র দেহ নিয়ে যেখানেই যাওয়া হয়েছে, বাবার পাশটিতে অবিচল ছিলেন মেয়ে। শেষকৃত্য সেরে বাবুঘাটে অস্থি ভাসিয়ে ফেরার পর থেকে চেপে বসেছে পৃথিবীর ক্লান্তি। তবু পৌলমীর একটাই শান্তি: ‘‘শেষ সময়ে বাবাকে যাঁরা দেখছিলেন, তাঁরা ভালবেসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৪০ দিনেও বাবার বেডসোর হয়নি। ডাক্তার, নার্সদের কাছে আমি চিরঋণী।’’

সদ্য পিতৃহারাকে নানা দায়িত্ব নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। ‘‘আমি বা বাবা কেউই মৃত্যুর পরের কোনও অস্তিত্ব তেমন মানি না, পারলৌকিক আচারের আনুষ্ঠানিকতাতেও ভক্তি নেই। তবু আমাকেও কিছু কাজ করতে হবে। কারণ মা এ সব মানেন।’’ সোমবার বলছিলেন পৌলমী। আজ, মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতার একটি মন্দিরে পিতৃবিয়োগে কন্যার পালনীয় আচার সারবেন তিনি। পৌলমীর দাদা সৌগতও সময়মতো যা করার করবেন। ‘‘কিন্তু আমার মনের মতো পিতৃতর্পণ, তাঁর জীবনের উদ্‌যাপন— সেটা আমি পরে, আমার মতো করে করব,’’ বলছেন সৌমিত্রকন্যা।

টালিগঞ্জের আর্টিস্টস ফোরাম থেকে এবং পৌলমীদের ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলের তরফেও অনুষ্ঠান ঘোষণা করা হবে। এই দল তৈরির পরে সৌমিত্রের মঞ্চের কাজ কিছুটা গোছানো গিয়েছে। চেনা ছবিগুলির বাইরে তাঁর অজস্র সিনেমা নিয়েও কার্যত উদাসীনই ছিলেন সৌমিত্র। তাঁর বাচিক সৃষ্টির সম্ভারও এলোমেলো ছড়িয়ে। এই সব কিছু ছাড়াও সৌমিত্রের লেখা, আঁকা, নানা সময়ের ডায়েরি, সিনেমার চিত্রনাট্যের কপিতে নিজের জন্য নেওয়া ‘নোট’— সব কিছুতেই থাকতে পারে ইতিহাসের উপাদান। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে মূর্তিমান ইতিহাসের একটি অধ্যায়— সেটা বুঝেই সুবিন্যস্ত আর্কাইভের দরকার বলে পৌলমীর অভিমত। তিনি বলেন, ‘‘বাবার সব কাজ যেখানে সহজে পাওয়া যাবে, এমন আর্কাইভের বিষয়টা বেশ কিছু দিন ধরেই মাথায় ঘুরছে। খুব শীঘ্রই পরিকল্পনাটা গুছিয়ে ফেলব।’’

সৌমিত্রের স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা ছাড়া দুই ছোট ভাই, বোনও রয়েছেন। বোন অনুরাধা সিংহ অসুস্থ। তবু দাদাকে দেখতে গল্ফগ্রিনে এসেছিলেন। ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও হাসপাতালে যান। তাঁরও আর একটি পরিচয় ‘অপুর সংসার’-এ অপর্ণার ভাই মুরারির ভূমিকায় অভিনয়। স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অপুর সেই সবেগে চড় মারার দৃশ্যে তিনি অন্যতম কুশীলব। বললেন, ‘‘সে কবেকার কথা! দাদা এবং সত্যজিৎবাবু সব বুঝিয়েছিলেন। তবে দাদা এক শটে সিনটা ওকে করার পরে আগে পুরোটা বুঝিনি, কী ঘটতে চলেছে।’’ ‘দাদা কম, বন্ধু বেশি’ মেজদার অজস্র ছবির বেশ কিছু সেনাবাহিনীর চাকরির দরুণ দেখা হয়নি অভিজিৎবাবুর।

এখন দিনভর যেখানে পারছেন দাদাকে দেখে চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE