Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব ‘রাগদেশ’ নয়

নেতাজিকে নিয়ে গল্পের প্রেক্ষাপট। কলকাতা সফরে ছবির টিমরাজ্যসভা টিভি-র সিইও গুরদীপ সিংহ সিপ্পাল পরিচালক তিগমাংশুকে স্বাধীনতার দু’টি বিষয় থেকে একটি নিয়ে ছবি বানাতে বলেছিলেন। তিগমাংশু নির্দ্বিধায় বেছে নেন নেতাজির বাহিনীকে।

মোহিত মারওয়া আর কুনাল কপূর।

মোহিত মারওয়া আর কুনাল কপূর।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

গাঁধীর সহিষ্ণুতা নয়, নেতাজির আইএনএ-ই (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) ব্রিটিশদের বাধ্য করেছিল ভারত ছাড়তে। জিডি বক্সী ‘বোস: অ্যান্ড ইন্ডিয়ান সামুরাই’তে লিখেছেন, তৎকালীন বাংলার রাজ্যপাল পিবি চক্রবর্তী ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে আইএনএ-র ভূমিকা নিয়ে জি়জ্ঞেস করলে, নিরুত্তর অ্যাটলি শুধু হেসেছিলেন। গাঁধীর অহিংসা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘নেগলিজিব্‌ল’’। কলকাতায় নতুন ছবি ‘রাগদেশ’-এর প্রচারে এসে গল্পটা বললেন তিগমাংশু ধুলিয়া।

নেতাজির নেতৃত্বে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছিলেন শাহনওয়াজ খান, গুরুবক্স সিংহ ধীলোঁ, প্রেম সেহগাল। পরে তাঁদের কোর্ট রুম ট্রায়াল হয়। তা নিয়েই তৈরি ‘রাগদেশ’। শাহনওয়াজ, গুরুবক্স ও প্রেমের চরিত্রে অভিনয় করছেন যথাক্রমে কুনাল কপূর, অমিত সাদ ও মোহিত মারওয়া।

নতুন দেশের গান

রাজ্যসভা টিভি-র সিইও গুরদীপ সিংহ সিপ্পাল পরিচালক তিগমাংশুকে স্বাধীনতার দু’টি বিষয় থেকে একটি নিয়ে ছবি বানাতে বলেছিলেন। তিগমাংশু নির্দ্বিধায় বেছে নেন নেতাজির বাহিনীকে। ‘‘ভগৎ সিংহ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, গাঁধী— সকলকে নিয়ে ছবি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর আইএনএ নিয়ে আলাদা করে ছবি বানানো হয়নি। অথচ আইএনএ কোর্ট ট্রায়ালের কয়েক মাসের মধ্যেই একে একে সারা ভারতে সকলে ডাক দিয়েছিল লড়াইয়ের। আইএনএ-র অত অল্প সেনা মিলে আসলে নাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশের ভিত।’’ কুনাল জানালেন, ‘‘নেতাজির অবদান নিয়ে গোটা দেশে কতগুলোই বা আর স্তম্ভ, মিউজিয়াম রয়েছে? যে ভাবে লোকে গাঁধী বা ভগৎ সিংহের কথা জানে, ক’জনই বা আইএনএ নিয়ে মাথা ঘামায়? স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে চেয়েছিল আইএনএ। তা থেকেই আমাদের মাথায় আসে স্বাধীন দেশের নতুন গানের কথা। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয় দেশের রাগ— রাগদেশ।’’

ছকভাঙার গল্প

‘‘স্বাধীনতার ঘটনা নিয়ে ছবি মানে কোনও বিশেষ চরিত্রকে দিয়ে গান গাওয়ানো নয়। সেই স্টিরিওটাইপটাই ভাঙার চেষ্টা হয়েছে ‘রাগদেশ’-এ।’’ বললেন কুনাল। ছবির প্রতিটি ঘটনা কোনও বই অথবা গবেষণা থেকে নেওয়া। ফলে কোথাও জল মেশানো হয়নি, দাবি পরিচালকের। একটি ছবিতেই মিলবে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কোর্ট রুম ড্রামা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। সব মিলিয়ে ‘রাগদেশ’-এর বিস্তার অনন্য। মোহিতের কথায়, ‘‘বাস্তবের ঘটনাকে নিয়ে এমন ছবি বানানোর চেষ্টা হয়েছে যার সঙ্গে মানুষ নিজেকে মেলাতে পারবে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ছবিটা ট্রেন্ড সেটারও বটে।’’

নতুন প্রজন্মের জন্য

তিগমাংশু বলছেন, ‘‘এমন একটা সময় ছিল যখন ভারতের মানুষ অন্য কোনও কথা না ভেবে লড়ে গিয়েছে। এখন তো স্বাধীনতাকে অনেকে খুচরো পয়সার মতো বিকোচ্ছে। কিন্তু কোথা থেকে এল এই স্বাধীনতা? কী তার শিকড়? সেটা নতুন প্রজন্মকে জানানো খুব জরুরি। আর এই ধরনের ছবি বানানোর সুযোগ পাওয়াটাও চ্যালেঞ্জিং।’’ আর কুনালের মতে, ‘‘আগে তবু লোকে পয়সা দিয়ে সুইৎজারল্যান্ডে নাচ-গান, অতিরঞ্জন দেখত। কিন্তু এখন লোকে নিজেদের অতীত আরও বেশি করে জানতে চায়। যখন ‘রং দে বসন্তী’ করেছিলাম, তখন স্বাধীনতার মানে আমার কাছে যা ছিল, ১০ বছর বাদে সেটা বদলে গিয়েছে। শাহনওয়াজের চরিত্র আমার কেরিয়ারের সব চরিত্রের মধ্যে আলাদা। দেশের প্রতি ত্যাগ আর নিষ্ঠার কাহিনি এটা।’’


নেতাজি ভবনে পরিচালকের সঙ্গে অভিনেতারা।

বিপ্লব সোশ্যাল মিডিয়ায়

‘‘এখন তো বিপ্লব সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়। কোনও একটা ছবি পোস্ট করে দু’-চার কথা লিখে দিলেই বিপ্লবী হওয়া যায়। উল্টো দিকে ব্রিটিশদের দলে শাওনওয়াজ খানের ভাই ছিল। যে কোনও দিন নিজের ভাইকেই গুলি চালাতে হবে জেনেও দেশের কথা ভেবে এঁরা এগিয়ে এসেছিলেন। সেই গল্পই নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে বলে মনে হয়’’, সাফ বক্তব্য কুনালের।

‘মুঘল-এ-আজম’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’ যেমন আমাদের গল্প, তেমনই ‘দিল চাহতা হ্যায়’ও কোথাও আমাদের মূল্যবোধের গল্প বলে। আর সেই পথ ধরেই ‘রাগদেশ’ও সমস্ত দর্শককে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নিজের শিকড়ের কাছাকাছি, আশা রাখছেন তিগমাংশু।

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE