‘ওথেলো’র সেই দৃশ্য।
এখনও চার মাসের বেশি বাকি প্রযোজনা নামাতে। প্রীতম আর মেরি-র দাবি, তত দিনে তাঁরা স্বচ্ছন্দ হয়ে যাবেন সেই দৃশ্যে অভিনয় করতে। “মানসিকভাবে আমরা তৈরি। ‘লেডি ম্যাকবেথ’ করার সময় আমার অনেক ক’টা চুম্বন দৃশ্য ছিল,” বলছেন মেরি। তবে লাভমেকিং দৃশ্যে অভিনয় করতে গেলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হবে। তার জন্য সময় আর রিহার্সালের প্রয়োজন। মেরি, প্রীতম, রাজুরা অবশ্য জানাচ্ছেন, “সেপ্টেম্বরে আশা করছি আমরা ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে সাবলীলভাবে অভিনয় করতে পারব।”
ঘন চুম্বন বা মঞ্চে নগ্ন হয়ে অভিনয় করা এক জিনিস, আর অন স্টেজ লাভমেকিং একদম আলাদা বিষয়। বিদেশের রঙ্গমঞ্চে শারীরিক মিলনের দৃশ্য দেখানোটা নতুন নয়। সেই ১৯৬৯ সালে ব্রিটিশ নাট্যসমালোচক কেনেথ টাইনান রচনা করেছিলেন ‘ওহ! ক্যালকাটা’ বলে যৌনতা নিয়ে একটা বিতর্কিত রেঁভ্যু (একাধিক অঙ্কের জনপ্রিয় থিয়েটার যাতে গান, নাচ ও স্কেচ থাকে)। সেই প্রযোজনা যতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, ততটাই নিন্দার মুখেও পড়েছিল। নাটকটির ‘রিভাইভ্যাল শো’ যত বাড়তে থাকে, ততটাই সরব হন সমালোচকরা। কেউ প্রযোজনাকে বলেন ‘আ মোস্ট ইনোসেন্ট ডার্টি শো’, কেউবা বলেন যে, ওটা তৈরি হয়েছে ‘টু গিভ পর্নোগ্রাফি আ ডার্টি নেম’!
বাংলায় ‘ওথেলো’র সময় কম ঝামেলা হয়নি। আরও সাহসী হতে ভয় হচ্ছে না? “সারা বিশ্বের নাটক অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আজকে বাস্তব আর সত্যের মাঝের দেওয়ালটা ভেঙে গিয়েছে। আমার মনে হয়, শরীরী প্রেম যখন দেখানো হয়, তখন শরীরকেই ব্যবহার করতে হবে। তবে তার দৃশ্যায়নের মধ্যে কাব্য থাকবে। ঘন চুম্বনের দৃশ্যে চুম্বন তো প্রয়োজন হবেই। তখন কালোচুলের আড়ালে বনলতা সেন আওড়ালে হবে না। শরীরী প্রেম তো প্রেমের অংশ। সেটা বাদ দিয়ে প্রেমের সেলিব্রেশন পূর্ণ হয় না। তবে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সোশাল এসথেটিক্স মাথায় রেখেই সেই সেলিব্রেশন করব,” বলছেন মণীশ।
বিদেশি মঞ্চে
• ক্যাচ ২২
• জিওমেট্রি অব ফায়ার
• ব্লাস্টেড
• স্প্রিং অ্যাওয়েকেনিং
নগ্ন ‘ওথেলো’য়ে অভিনয় করার সময় তো তাপসের কাছে ফোন এসেছিল তাঁর ‘রেট’ জানতে চেয়ে। সে সময় বিজ্ঞাপন দিয়ে মণীশ জানিয়েছিলেন, শো বন্ধ করছেন।
আর তা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল যে, এই ঘোষণার মধ্যে হয়তো লুকিয়ে ছিল প্রচারের খিদে। নগ্নতা নিয়ে প্রযোজনা করতে গেলে এরকম বাধা বা মন্তব্য আসাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। সেখানে অভিমান করে বিজ্ঞাপন দিয়ে শো বন্ধ করার পদক্ষেপ অনেকের কাছেই গিমিক মনে হয়েছিল। এর উত্তরে মণীশ বলছেন, “হয়তো আমরা ও ভাবে রই্যাক্ট নাও করতে পারতাম। তবে শো বন্ধ করিনি। থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। আর এই থমকে দাঁড়ানোর পরে পাল্টা একটা মত তৈরি হয়েছিল। সারা দেশে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রমাণ হয়েছিল ওই দৃশ্যায়নে কোনও রুচির ওপর আক্রমণ ঘটাচ্ছে না।”
এ বার যদি রাজু, মেরি, তাপস, প্রীতমেরা আরও কঠোর সমালোচনার মধ্যে পড়েন? তখন কী করবেন? অভিমান করে আবার বন্ধ করবেন প্রযোজনা? নাকি আত্মবিশ্বাসে অটল থেকে স্লেজিং সহ্য করে ব্যাটিং করে যাবেন? “আমি ‘ওথেলো’ করেছি। এই নাটকেও আছি।
আমার কোনও সমস্যা হবে না,” জোর দিয়ে বলছেন তাপস। আর তাঁর কথার রেশ ধরেই প্রীতম জানাচ্ছেন, “তাপসের কাজটা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমার বাড়ির সব্বাই নাটকটা দেখতে এসেছিলেন। এক সময় মনে হয়েছিল কেন তাপসের ওই রোলে আমি অভিনয় করিনি! মেরি আমার বোনের মতো। ওর সঙ্গে এই দৃশ্যে অভিনয় করতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। বাড়ির কোনও আপত্তি নেই। কেউ যদি কিছু বলে তাতে আমার কিছু এসে যাবে না।”
এখন প্রতীক্ষা চার মাসের এই টানা মহড়ার পরে প্রেম পর্ব কোন মাত্রায় পৌঁছায় তা দেখার।
ছবি: কৌশিক সরকার।