Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ঠাসা সভাঘর, মেদিনীপুরের কবিতা প্রেমে মুগ্ধ কবিও

মেদিনীপুরে আসার আগে বুধবার কবি সুবোধ সরকার ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস মেদিনীপুর হল সেই জেলা যেখান থেকে সবচেয়ে গরিব, সবচেয়ে মেধাবীরা উঠে এসেছেন।

মেদিনীপুর কলেজে কবিতা কর্নার। নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুর কলেজে কবিতা কর্নার। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

গোটা দিনটাই যেন ছিল কবিতার জন্য। মেদিনীপুরের মতো জেলা শহরে কবিতার প্রতি ভালবাসা দেখে মুগ্ধ সুবোধ সরকারের মতো কবিও।

মেদিনীপুরে আসার আগে বুধবার কবি সুবোধ সরকার ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস মেদিনীপুর হল সেই জেলা যেখান থেকে সবচেয়ে গরিব, সবচেয়ে মেধাবীরা উঠে এসেছেন। প্রেসিডেন্সি যখন কলেজ ছিল, তখন মুখচোরা, তুলসীর মালা পরা, পাজামার উপর জামা পরা কৃতী ছেলেগুলো আসত মেদিনীপুর থেকে। আমি তাদের অসংখ্যকে দেখেছি আমেরিকায়, ইওরোপে, এমনকী তাইওয়ানে।’ তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘মেদিনীপুর আরও একটা বিষয়ে এগিয়ে— কবিতা। কবিতা নিয়ে তোলপাড় করা লিট্‌ল ম্যাগাজিন সব থেকে বেশি বেরিয়েছে অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকে।’

বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজের (স্বশাসিত) বিবেকানন্দ হলে ঠাসা ভিড় দেখে সেই সুবোধবাবুই বললেন, “কলকাতার কোনও কলেজে দুপুর একটার সময় কবিতার জন্য পনেরোটা ছেলেমেয়েও পাওয়া যাবে না। মেদিনীপুরেই এটা সম্ভব। এটা আমাদের মাথা নত করে শিখতে হবে।’’

তাঁর কথায়, “আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর ধরে কবিতা পড়ছি। কোনও দিন কানায় কানায় পরিপূর্ণ হল পাইনি।”

পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে এই প্রথম ‘কবিতা কর্নার’ হল মেদিনীপুরে। সহায়তায় মেদিনীপুর কলেজ। ছিল কবিতা পাঠ, কবিতা নিয়ে আলোচনা। কলকাতা থেকে এসেছিলেন একঝাঁক কবি, গল্পকার, বাচিক শিল্পীরা। ছিলেন কমল চক্রবর্তী, শ্যামলকান্তি দাশ, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, উর্মিমালা বসু, প্রণতি ঠাকুর, অলোক রায় ঘটক, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলছিলেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আজ একসঙ্গে এত গুণিজনকে পেয়েছে, এটা আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সৌভাগ্য। কবিতা আকাদেমির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

বিশিষ্টজনেদের কাছে কলেজের ঐতিহ্যও তুলে ধরেন অধ্যক্ষ। তিনি বলছিলেন, “১৪৫ বছরের কলেজ। এর অনেক ঐতিহ্য। সারা পৃথিবীর এমন কোনও বিজ্ঞান গবেষণা পাওয়া খুব মুশকিল যেখানে মেদিনীপুর কলেজের কোনও ছাত্রছাত্রী ছিল না বা নেই। এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে এই কলেজের কোনও ছাত্রছাত্রীর কোনও স্পর্শ পড়েনি।’’ অধ্যক্ষ জানান, ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতা উদ্ভাসিত করতে গত বছর থেকে সাংস্কৃতিক কর্মশালা শুরু হয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা আসছেন।

মেদিনীপুর কলেজের কৃতী পড়ুয়াদের প্রসঙ্গ উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি, কবি সুবোধ সরকারের কথাতেও। তিনি বলেন, “মাত্র দু’মাস আগে ক্যালিফোর্নিয়াতে বঙ্গ সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে আড্ডা মারার সময় বাঁ দিক, ডান দিকে দু’জন করে বসে। বিস্ময়কর ভাবে তার মধ্যে একজন প্রেসিডেন্সির আর তিনজন মেদিনীপুর কলেজের। এই হচ্ছে মেদিনীপুর কলেজ।’’

কলকাতার বাইরে ‘কবিতা কর্নার’ আয়োজন নিয়ে সুবোধবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমার খুব ভাল লাগছে ঘোষণা করতে, পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি এই প্রথম কলকাতার বাইরে পা রাখল। এবং সেটা মেদিনীপুর কলেজে। কবিতা আকাদেমির বয়স এক বছরও হয়নি। প্রতি মাসে নন্দন চত্বরে পুকুরপাড়ে খোলা জায়গায় খোলা মঞ্চে এই আয়োজন হয়। এ বার আমরা জেলায় জেলায় যাব এবং সেটা শুরু হল।’’

মেদিনীপুর কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এ দিন কবিতা পাঠ করেছেন। এমন মঞ্চে সেই সুযোগ পেয়ে খুশি তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recitation festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE