Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Hiralal Sen

গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দলিল

দাদাসাহেব প্রথম ছবি করেন ১৯১৩ সালে। আর ১৯০৪ সালে ক্লাসিক থিয়েটারে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ দেখিয়েছিলেন হীরালাল।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২১ ০৭:১৭
Share: Save:

আত্মবিস্মৃত বাঙালির, বিস্মৃত এক নায়ক— হীরালাল সেন। পরিচালক অরুণ রায়কে ধন্যবাদ, দেশের প্রথম চলচ্চিত্রকারকে নিয়ে সিনেমা করার জন্য। দাদা সাহেব ফালকে ভারতীয় সিনেমার জনক বলে যে প্রচারটা হিন্দি বলয় করেছে, তার সিকিভাগও যদি বাঙালিরা করত, তা হলে হয়তো হীরালাল তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু পেতেন।

দাদাসাহেব প্রথম ছবি করেন ১৯১৩ সালে। আর ১৯০৪ সালে ক্লাসিক থিয়েটারে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ দেখিয়েছিলেন হীরালাল। অনেকে যুক্তি দেন, তিনি নাট্যরূপকে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন, তাই সেটাকে প্রথম সিনেমা বলা যায় না। কিন্তু তাতে হীরালালের শিল্পকীর্তি খাটো হয় না। ছবিতে পরিচালক শিল্পীকে সেরা দেখানোর লড়াইয়ে নামেননি। তিনি হীরালাল সেনের জার্নিটা দেখিয়েছেন। সিনেমা নিয়ে হীরালালের প্যাশন দেখিয়েছেন। তথ্যের দিক থেকে এ ছবি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ধরনের পিরিয়ড ছবির জন্য যে গ্র্যাঞ্জার প্রয়োজন হয়, তা এই ছবিতে অনুপস্থিত।

বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ছিলেন হীরালাল। কিন্তু ছবি দেখে তার আন্দাজ পাওয়া যায় না। কিশোরের বায়নায় ক্যামেরা কিনে দেওয়ার মতো সঙ্গতি আছে, সেটা বুঝে নিতে হয়। হীরালাল কম বয়সেই খুলে ফেলেছিলেন স্টিল ফোটোগ্রাফির কোম্পানি। শুধু প্রথম সিনেমাই নয়, বিজ্ঞাপনের জনকও বলা হয় তাঁকে। প্রথম রাজনৈতিক তথ্যচিত্রের কৃতিত্বও তাঁর। অরুণ শুধু হীরালালের কর্মকাণ্ডই তুলে ধরেননি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনটাও দেখিয়েছেন। আর হীরালালের সঙ্গে পর্দায় উঠে এসেছে ওই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্র— গিরিশ ঘোষ, অমরেন্দ্রনাথ দত্ত, কুসুমকুমারী। আর আছেন জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডান। সিনেমা যে আসলে ব্যবসা, তা তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর মুখেই রয়েছে ছবির সেরা সংলাপগুলো।

হীরালাল
পরিচালক: অরুণ রায়
অভিনয়: কিঞ্জল, শাশ্বত, অর্ণ, অনুষ্কা
৬/১০

পরিচালক অভিনয়ের ক্ষেত্রে বড় নামের দিকে না ঝোঁকার সাহস দেখিয়েছেন। শিল্পীরাও তাঁকে হতাশ করেননি। হীরালালের চরিত্রে কিঞ্জল নন্দ ছবির সম্পদ। তাঁকে মানিয়েছে ভাল। হীরালালের অসুস্থ অবস্থার অভিনয় করতে গিয়ে কিঞ্জল যে খেটেছেন, তা তাঁর চেহারা-মুখে স্পষ্ট। সহজাত অভিনয়ে ম্যাডানের চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা এনেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ভাল লাগে অনুষ্কা চক্রবর্তীকেও। তবে অর্ণ মুখোপাধ্যায় মঞ্চে যতটা সাবলীল, বড় পর্দায় ততটা নন।

অরুণ রিসার্চ-ডিটেলিংয়ে যে নজর দিয়েছেন তা বোঝা যায়। তবে কিছু কিছু খামতিও রয়ে গিয়েছে। এই ধরনের বায়োপিকের জন্য একটা মাউন্টিং দরকার হয়, যা এ ছবিতে মেলে না। লার্জার দ্যান লাইফ অনুভূতির প্রয়োজন ছিল এখানে। ক্যামেরা হাতে পাওয়ার অনেক আগে থেকেই হীরালালের ছবি নিয়ে প্যাশন ছিল। তাঁর ছায়াবাজির খেলার অংশগুলো থাকলে ভাল হত। এই সময়ের অনুপাতে ছবির দৈর্ঘ্যও বেশি। সম্পাদকের নির্দয় হওয়ার পরিসর ছিল কিন্তু।

ম্যাডানের মুখে একটি সংলাপ রয়েছে— সিনেমা মানে স্বপ্ন। আর মানুষ সেই স্বপ্নের টানেই বারেবারে সিনেমা হলে ফিরে আসবে। মাল্টিপ্লেক্সে আটজনের সঙ্গে বসে ভারতের প্রথম চলচ্চিত্রকারের জীবনী দেখতে দেখতে, সেই স্বপ্নের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য শঙ্কা জাগে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

review movie Hiralal Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE