Advertisement
E-Paper

সাফল্যের ফোয়ারা

‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়ের পর থেকে তাঁর ফোন বাজা থামছে না। ঋদ্ধি সেন-এর মুখোমুখি অরিজিৎ চক্রবর্তী‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়ের পর থেকে তাঁর ফোন বাজা থামছে না। ঋদ্ধি সেন-এর মুখোমুখি আনন্দplus

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

শুক্রবার থেকে দিনে পাঁচ বার করে চার্জে বসাতে হচ্ছে স্যামসুং গ্যালাক্সি ফোনটা।

একবারে ফোনে পাওয়াও অসম্ভব। বেশির ভাগ সময়ই শুনতে হচ্ছে, ‘যে নম্বরে আপনি কল করছেন, সেটি ব্যস্ত রয়েছে’।

মঙ্গলবার হিন্দুস্থান পার্কের কফিশপে ইন্টারভিউয়ের সময়ও তিন মিনিট পর পর বেজে উঠছে ফোন।

হবে না-ই বা কেন! ফোনের মালিকের নাম যে ঋদ্ধি সেন। ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়ের ফোয়ারা।

প্রিমিয়ারের পর তাঁকে সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘তোর অভিনয় দেখে কেঁদে ফেললাম রে!’’ আবির চট্টোপাধ্যায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘‘তোকে দেখার পর একরাশ মনখারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরব।’’ সুজয় ঘোষ ফোেন বলেছেন, ‘‘ফাটিয়ে দিয়েছিস গুরু!’’ আর অঞ্জন দত্ত বলেছিলেন, ‘‘শেষ পাঁচ বছরে এত কমপ্লিট অভিনয় কম দেখেছি।’’

ফেলুদা-শবর-ব্যোমকেশ‌দের গোয়েন্দাময় টলিউডে নস্টালজিয়ার সাইক্লোন এনেছেন ঋদ্ধি। সেই ঝড়ে কিছুটা এলোমেলো তিনি নিজেও।

হাজারখানেক এসএমএস ডিলিট না করে সকালে কফির কাপটা ধরাতে পারছেন না। শেষ পাঁচ দিনে অফার পেয়েছেন ছ’টা ছবিতে। এর মধ্যে রবিবার শ্যুটিং করে ফেললেন ‘লায়ন’‌য়ে। যে ছবিতে আবার অভিনয় করছেন নিকোল কিডম্যান। যদিও এই অফারটা ছিল ‘চিলড্রেন অব ওয়ার’‌য়ের পরেই।

তাঁর বয়সি আর পাঁচ জন যখন ব্যস্ত জয়েন্ট এনট্রান্স, টিউশন, ইন্সটাগ্রাম নিয়ে, ষোলো বছরের ঋদ্ধি তখন মগ্ন ট্রটস্কি, ব্রেখট, ট্যারেন্টিনোয়!

“কী করব, আমি তো এ ভাবেই বড় হয়েছি...,” ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন ঋদ্ধি।

কোনও দিন ফুটবল খেলিনি

সাতটা সিনেমায় অভিনয়, গোয়া ফিল্ম ফেিস্টভ্যালে ‘চিলড্রেন অব ওয়ার’‌য়ের প্রিমিয়ার— হলে কী হবে? ‘ওপেন টি...’ রিলিজের দিন বেশ টেনশনে ছিলেন ঋদ্ধি। এতটাই যে চার-চারটে রেডবুল খেতে হয়েছে নার্ভ ঠিক রাখতে। এই প্রথম যে মুখ্য চরিত্রে! কিছু দিন আগেও জনগণের কাছে তাঁর পরিচয় ছিল ‘কহানি’র পল্টু। আর ‘ওপেন টি...’ পরবর্তী অধ্যায়ে ফেসবুকে রিপ্লাই, এসএমএস ডিলিট করতে করতে ডান হাতটাই অবশ হওয়ার জোগাড়!

“পুরোটাই অনিন্দ্যদা (পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়)-র ক্রেডিট। ও ছাড়া এটা হত না। হেডলাইনে নিজের নাম, রিভিউতে প্রশংসা, এত এত এসএমএস— ভাল তো লাগেই। তবে আমার সিনেমার টার্ন আউট নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নতুন কিছু দিতে পারলাম কি না। নতুন কিছু শিখলাম কি না?”

নতুন তাঁকেও শিখতে হয়েছে। ‘ওপেন টি...’‌র কাস্টিং‌য়েরে পর জানতে পেরেছিলেন ছবিতে সাইকেল চালাতে হবে, ফুটবল খেলতে হবে। এ দিকে কোনও দিনই সে সব করেননি ‘বাবিয়া’। “বাবার কাছেই শিখলাম শ্যুটের আগে,” হাসতে হাসতে বলছিলেন কৌশিক সেন-পুত্র।

ছ’বছরে প্রথম অ্যাডাল্ট ফিল্ম

ফোয়ারা-র মতো সাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা বা লুকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে এ-মার্কা ছবি দেখার ছেলেবেলা পাননি ঋদ্ধি। দুঃখ হয় না সেটা নিয়ে? “না। স্পাইডারম্যানে একটা কথা আছে না? ‘উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপনসিবিলিটি’। আমারও সেটা মনে হয়। আমার মতো এক্সপোজারই বা ক’টা ছেলে পায়? আমি আমার ছেলেবেলা নিয়ে গ্রেটফুল। কোনও দিন আমার সামনে কিছু লুকোনো হয়নি। আমি তো ছ’বছর বয়সে বাবা-মায়ের মাঝে বসে অ্যাডাল্ট ফিল্মও দেখেছি,” বেশ পরিণত শোনাল ঋদ্ধিকে।

বাবা তাঁর কাছে বন্ধুর মতো। আর মা ‘লাইফ ডিসাইডার’। “তবে কোনও দিন কোন ছবিটা করব, কোনটা করব না এ নিয়ে একটা কথাও বলেনি ওরা। এমনকী যদি কেউ বাবা-মাকে ফোন করে বলে যে আমাকে স্ক্রিপ্ট শোনাতে চায়, তাদেরকে স্ট্রেট আমার নম্বর দিয়ে দেয়। বলে, ‘ওর সঙ্গে কথা বলে নিন’,” জানান ঋদ্ধি। যদিও রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের বাটার চিকেন না পেলে মুখ ভার হয় তাঁর।

চুমু, ফেসবুক, একাকীত্ব

‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ রিলিজের আগে যখন কথা হচ্ছিল, বলেছিলেন তাঁর কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই। সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে গার্লফ্রেন্ডও কি জুটল। ‘‘ধুর্। ফিমেল ফ্যান বেড়েছে। ফেসবুকে ‘ইউ আর সো কিউট’ মার্কা কমেন্টও পাচ্ছি। কিন্তু না, গার্লফ্রেন্ড এখনও কেউ নেই,’’ উড়িয়ে দেন তিনি।

কিন্তু ছবিতে তাঁর আর সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চুম্বন দৃশ্য নিয়ে তো বেশ হইচই? ‘ম্যাচিওর্ড’ ঋদ্ধি একটু ব্লাশ করলেন। তবে স্পষ্ট বললেন, ‘‘ওটা তো সিনেমার জন্য। সুরঙ্গনা আমার ভাল বন্ধু। আমি পর্দা আর বাস্তব আলাদা করতে পারি। আমার তো বেড সিন করাও হয়ে গিয়েছে।’’ ছবিটা এখনও মুক্তি পায়নি বলে, কোন ছবি, সেটা অফ দ্য রেকর্ড-ই রাখতে বললেন।

পরে বললেন, ‘‘গার্লফ্রেন্ড কী বলছেন! আমার তো তেমন কোনও বন্ধুও নেই।’’ এত ফোন-এসএমএস‌য়ের ভিড়েও কি একটু একলা তিনি? “হ্যাঁ, লোনলি লাগে কখনও কখনও।” সর্বক্ষণের সঙ্গী গিটারে আর একটা কর্ড বাজিয়ে যোগ করলেন, ‘‘কথা বলব কার সঙ্গে? হয় সবাই ব্রেক আপ নিয়ে কথা বলছে নয়তো ফেসবুকে লাইকস কম পড়ল কেন তা নিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছে। স্কুলমেটদের সঙ্গে যদি আধঘণ্টার জন্য কফিশপে বসতে চাই তো শুনব, ‘আজ তো... ফিজিক্স টিউশন আছে... নেক্সট সানডে হতে পারে...’ আরে! আধ ঘণ্টার জন্য সাত দিন আগে থেকে ভাবব কেন?” তাই ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’‌য়ের লাইমলাইটের থেকেও তাঁর মতে বড় পাওনা চার জন বন্ধু। যাঁদের সঙ্গে ‘হ্যাং আউট’ করতে পারেন।

জানি আমি হিরো হব না

অভিনয়ের জন্য সময়ের অভাবে সাউথ পয়েন্টে পড়া চালাতে পারেননি। জানেন, তাঁর ‘প্রাইভেট’ স্কুলে পড়া নিয়ে অনেকেই তেরছা চোখে দেখেন। কিন্তু ভাল স্কুল ছাড়া ভাল শিক্ষা হতে পারে না এ কথা একদম বিশ্বাস করেন না। তাঁর অভিনয়ের শিক্ষাও তো মঞ্চ থেকেই। সাড়ে তিন বছর বয়সে হাতেখড়ি। ‘স্বপ্নসন্ধানী’‌তে। যদিও লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব স্পিচ অ্যান্ড ড্রামা-তেও পড়েছেন। কিন্তু তাঁর মতে অ্যাক্টিং মানে অবজার্ভ করা। বলছিলেন, ‘‘বাবা-মা একটা কথা বলে, অ্যাক্টিংটা তত বেটার হবে যত রিয়েল লাইফ দেখা যাবে।’’

‘কমার্শিয়াল’ ছবিতে অ্যালার্জি নেই, কিন্তু চিত্রনাট্য ‘সেন্সিবল’ হতে হবে। আর স্ক্রিপ্টের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলে, সে ছবি করবেন না। কিন্তু এতে ‘সিরিয়াস অভিনেতা’র ছাপ পড়ে যাবে না? “অসুবিধা কোথায়? নওয়াজউদ্দিন তো ‘কিক’ও করছে আবার ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ও করছে!” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন। কফিতে চুমুক দিয়ে যোগ করলেন, “আমার কাছে কমার্শিয়াল ছবি মানে রাজকুমার হিরানি। ট্যারেন্টিনোর ‘জ্যাঙ্গো আনচেইন্ড’টাই দেখুন না। একটা সিরিয়াস গল্পকে কেমন রক অ্যান্ড রোলের মতো করে দিল।” আর যদি কেউ এটাকে পাকামি মনে করে? ‘‘ভাবলে ভাবুক। আমার তাতে কিছু এসে যায় না,’’ স্পষ্ট বলেন ঋদ্ধি।

কফিশপ থেকে বেরোতেই কয়েক জন চিনে ফেললেন ঋদ্ধি সেনকে। সেলফিও তুললেন তাঁর সঙ্গে।

যাওয়ার আগে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘এ বার লোকে আমার নামটা জেনে গেছে। আর ‘কৌশিক সেনের ছেলে’ শুনতে হবে না।’’

আনাচে কানাচে

আদর: মেয়ে ঋষণা নিয়ার সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: কৌশিক সরকার।

open tee bioscope riddhi sen arijit chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy