মেয়ের সঙ্গে শাশ্বত।
বাপি,
আবারও একটা বছর শেষ। আবারও তোমার জন্মদিন। তোমার জন্য এ বারও কার্ড বানিয়েছি। কিন্তু তুমি যে মুম্বইয়ে। পাঠাই কী করে? তোমার জন্য মনটাও খারাপ করছে। যদিও তুমি বাইরে গেলেই প্রতি রাতে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বল। তোমার কাজ, তোমার কথা বল। আমাদের খবরাখবরও নাও। কিন্তু জন্মদিনে তুমি নিজে সামনে থাকা আর তোমায় ফোনে পাওয়া কি এক হল? আনন্দবাজার অনলাইন অনুরোধ জানিয়েছে, তোমার জন্য কলম ধরার। আমি তাই তোমায় একটা খোলা চিঠিই লিখে ফেললাম। হয়তো এই প্রথম!
তুমি অন্য শহরে। তোমার মতো করে কাজে ডুবে। আমি আর মা (মহুয়া চট্টোপাধ্যায়) তোমার অপেক্ষায়। প্রতি বছর মাঝ রাতে ছোট্ট করে তোমার জন্মদিন পালন। ছোট্ট কেকের মোমবাতিগুলো এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দাও তুমি। আমরা গেয়ে উঠি জন্মদিনের গান। তার পরে কেক খেয়ে তখনকার মতো উদযাপনের পালা সাঙ্গ। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ‘ব্র্যান্ডি’ও (পোষ্য সারমেয়) তোমার জন্মদিন নিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজিত থাকে। হবেই তো, ও তো তোমার ছোট মেয়ে!
পরের দিন সকাল থেকেই মায়ের ব্যস্ততা। একা হাতে তোমার জন্মদিনের পায়েস রাঁধছে। তার পরেই তোমার ফরমায়েশ অনুযায়ী চিংড়ির মালাইকারি, পাঁঠার মাংস, চাটনি- সব। দুপুরের খাবারের থালাটা দেখার মতো হয়! চুড়ো করা, ধবধবে সাদা সরু চালের ভাত। গা বেয়ে গড়িয়ে নামছে ঘি। থালাতেই সাজানো পাঁচ রকম ভাজা। থালা ঘিরে বাটিতে বাটিতে তোমার মনের মতো পদ। বাপি, এই দিন তোমায় যে মাছের মুড়োটা দেওয়া হয়, বাইরের কেউ দেখলে কিন্তু চমকে উঠবেন। এই একটা দিন তোমার খাওয়াদাওয়ায় সব বিধিনিষেধ শিথিল। তুমি কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছ। আমরা তো তোমার থেকেই রসিয়ে খেতে শিখেছি! ৩৬৫ দিনের মধ্যে এই একটা দিন পুরোটা তোমার ছুটি। অফুরন্ত অবসর। অফুরন্ত সিনেমা দেখা।
বিকেল হলে সেজেগুজে আবারও কেক কাটা। তার পর ভাল কোনও রেস্তরাঁয় সবাই মিলে গিয়ে খাওয়া। এক সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখা। সারা বছর তুমি আমাদের ভাল রাখ। বছরের একটা দিন তোমায় তাই খুশি দেখতে চাই আমি আর মা। আমাদের সঙ্গে প্রতি বছর যোগ দেন তোমার কয়েক জন বন্ধু। তাঁরা ফোনে তোমায় শুভেচ্ছা জানান। পার্টির আয়োজন করলে আসেন। গত বছর যেমন এসেছিলেন সস্ত্রীক অরিন্দম শীল, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, যিশু সেনগুপ্ত, আরও কয়েক জন। বাপি, এ সব কথা পড়ে তুমিও কি মনখারাপ করছ? তুমি ফিরলেই সব হবে কিন্তু, প্রতি বছরের মতো। আমার বানানো কার্ড তুমি পাবে। মায়ের হাতের ভাল-মন্দ রান্নাও পাবে। পার্টিও হবে তোমার জন্মদিনের কথা মনে রেখে। আমি আর মা উপহারও দেব।
উপহারের কথাতেই মনে পড়ল, এ বছর কী দিই তোমায়? এক বছর তোমার ছোটবেলায় করা কাগজের কোলাজ ফ্রেমে বাঁধিয়ে আমরা দিয়েছিলাম। এখনও সেটা দেওয়ালে সাজানো। মনে আছে? কোনও বার ঘড়ি দিয়েছি। কোনও বার ব্লেজার, শার্ট বা দরকারি কোনও জিনিস। এ বছর একটা মোবাইল নেবে বাপি? নাও না! জানি, তোমায় বলে লাভ নেই। তুমি ছুঁয়েও দেখবে না। এই যে তুমি সকলের থেকে এক্কেবারে অন্য রকম, এই জন্যেই তো তুমি আমার ‘হিরো’! আর আমি তোমার হদয়জুড়ে। তাই তো আমার নাম রেখেছ...
তোমার,
হিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy