Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নতুন জোট

স্বস্তিকা! সুতরাং সঙ্গে সুমন আশ্চর্য কী? কিন্তু সঙ্গে যে ব্রাত্য-ও। নির্বাচনী বাজারে নতুন ফিল্মি জোট। খবর পেলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়রাজনীতির বিবাদ নয়, অবশেষে জয়ী হল বন্ধুতা। সুমন মুখোপাধ্যায়ের নতুন বাংলা ছবিতে অভিনয় করছেন ব্রাত্য বসু। ‘হারবার্ট’য়ের পর আবার ব্রাত্য-সুমন একসঙ্গে। নতুন জোট আসন্ন নির্বাচনে কি কোনও ছাপ ফেলবে? ‘‘কিছু কিছু আদিম বন্ধুত্ব কখনও নষ্ট হয় না। সেখানে ঝগড়া হয়, রাগারাগি হয় আবার বন্ধুত্বও থাকে। ব্রাত্যর সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু সখ্য আরও বেড়েছে। অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম একসঙ্গে কিছু করি।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

রাজনীতির বিবাদ নয়, অবশেষে জয়ী হল বন্ধুতা। সুমন মুখোপাধ্যায়ের নতুন বাংলা ছবিতে অভিনয় করছেন ব্রাত্য বসু।

‘হারবার্ট’য়ের পর আবার ব্রাত্য-সুমন একসঙ্গে।

নতুন জোট আসন্ন নির্বাচনে কি কোনও ছাপ ফেলবে? ‘‘কিছু কিছু আদিম বন্ধুত্ব কখনও নষ্ট হয় না। সেখানে ঝগড়া হয়, রাগারাগি হয় আবার বন্ধুত্বও থাকে। ব্রাত্যর সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু সখ্য আরও বেড়েছে। অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম একসঙ্গে কিছু করি। আমার ছবিতে ব্রাত্য অভিনয় করলে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্কের কোনও হেরফের হবে না,’’ সাফ জবাব সুমনের। বেশ নস্টালজিক লাগছিল সুমনকে। ফিরে যাচ্ছিলেন তাঁর কলেজের দিনগুলোয়। যেখানে তিনি আর ব্রাত্য বসু একই সময়ে নাটক করার কথা ভাবছেন, নিজেদের রাজনৈতিক মতামত তৈরি করছেন একটু একটু করে...

নির্বাচনী প্রচার নিয়ে রীতিমতো ব্যস্ত ব্রাত্য বসু। ফোনে বললেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে কাজ করব এটাই আসল কথা। ‘হারবার্ট’-এ প্রথম কাজ করি লাল (সুমন মুখোপাধ্যায়)-য়ের সঙ্গে। তবে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে এত ব্যস্ত যে স্ক্রিপ্টটা এখনও পড়া হয়নি। প্রচারের কাজ শেষ হলে স্ক্রিপ্টটা শুনব।’’

ভোটের মুখে তাঁদের এই নতুন জোট নিয়ে প্রশ্ন করায় ব্রাত্য পরিষ্কার বললেন, ‘‘আমার আর লালের রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক হলে মিডিয়া সেটাকে বিশাল বড় করে ছাপে। কিন্তু আমরা একসঙ্গে ভাল কাজ করলে সে ভাবে কি বড় করে লেখা হয়?’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, রাজনীতি আর অভিনয় দুটো আলাদা ক্ষেত্র। সেই কারণেই অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘কিরীটী রায়’ ছবিতে চিরঞ্জিত ওরফে কিরীটীর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেট আর চিরঞ্জিতের রাজনৈতিক মতামত ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই সহাবস্থানে কোনও অসুবিধে হয়নি।

সদ্যই মুম্বইতে একটি চ্যানেলের জন্য হেনরিক ইবসেনের ‘ডলস হাউজ’ অবলম্বনে ‘গুড়িয়া ঘর’ নাটকের শ্যুট শেষ করে কলকাতায় ফিরেছেন সুমন।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘আশ্চর্য ভ্রমণ’ গল্প অবলম্বনে নতুন ছবির জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে প্রযোজকের সঙ্গে মিটিং, সব নিয়েই এখন ব্যস্ত তিনি। বলছিলেন, ‘‘পরিবার, প্রেম নিয়ে একঘেয়ে গল্পের মতো গল্পটা নয়। এই ছবি যেন চেখভের সেই গল্পের মতো, যেখানে টুকরো টুকরো মুহূর্ত তৈরি করে নানা রকম আবেগ।’’ সদ্যই ‘কিরীটী রায়’ ছবিতে অভিনয় করতে মুম্বই থেকে কলকাতা এসেছেন স্বস্তিকা। সুমনের সাত বাংলোই এখন স্বস্তিকার মুম্বইয়ের ঠিকানা। কলকাতায় কাজ ছাড়া বছরের পুরো সময়টাই তিনি এখন মুম্বইতে কাটাতে চান। কলকাতায় বসে মুম্বইয়ের কাজ যে পাবেন না এটা তিনি বুঝে ফেলেছেন। সুমনের পাশ থেকে হঠাৎ বলে উঠলেন তিনি। ‘‘এই গল্পটার জন্য মিশরে গিয়ে আমি প্রচুর বোর হয়েছি। ফ্লাইটে পুরোটা সময়ই লাল বইটা পড়ে গেল। আর কোনও কথা নেই। তখনই বুঝেছিলাম এই গল্পটা নিয়ে ও কিছু একটা ভাবছে।’’

স্বস্তিকার চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। এই উচ্ছ্বাসের কারণ ব্রাত্য বসুর স্ত্রীর ভূমিকায় এই ছবিতে তাঁকে প্রথম দেখা যাবে। বললেন, ‘‘‘নন্দিনী’ বলে একটা ছবিতে ব্রাত্যদার সঙ্গে ছোট্ট একটা রোলে অভিনয় করেছিলাম। সেই ছবি রিলিজ করেনি। আমি আর ব্রাত্যদা যে অনস্ক্রিন কোনও জুটি হতে পারি, এটা কিন্তু লোকে সহজে ভাবতে পারবে না। আর ব্রাত্যদা ফ্লোরে কখন যে কী প্যাটার্নে অভিনয় করবে সেটাও আমার অজানা।’’

সব মিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। মুম্বইতে সুমনের পরিচালনায় ‘ডলস হাউস’ নাটকে ‘নোরা’ চরিত্রে অভিনয় করে মঞ্চেও হাত পাকিয়ে এসেছেন স্বস্তিকা। স্বস্তিকা, ব্রাত্য বসু ছাড়াও ছবিতে অভিনয় করবেন ঋত্বিক চক্রবর্তী ও পাওলি। মুম্বইয়ের নাট্যজগতের দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যকেও বিশেষ একটা চরিত্রে দেখা যাবে।

সুমনের সব কাজেই তা হলে এখন স্বস্তিকা? ‘‘টুকি চরিত্রের জন্য স্বস্তিকার মুখটাই মনে পড়েছিল। যেমন আর একটি মহিলা চরিত্র মিতুনের জন্য পাওলিকে ভেবেছিলাম। সব তারকাই তো আর অভিনেত্রী হতে পারেন না। অভিনয়ের কথা মাথায় রেখেই কাস্টিং করেছি,’’ বললেন সুমন। মিশর থেকেই সুমনের পাশে থাকতে থাকতে গল্পের টুকি চরিত্রটা ততদিনে মৌতাত ছড়িয়েছে স্বস্তিকার ভেতরে। ‘‘লাল নিশ্চয়ই ওই চরিত্রে আমার চেয়ে ভাল আর কাউকে পেত না...’’ খুনসুটি জুড়লেন স্বস্তিকা।

সিনেমার নাম যদিও এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু ছবির নাম ‘আশ্চর্য ভ্রমণ’ রাখার ইচ্ছে সুমনের নেই। মে মাসের শেষের দিকে ছবির কাজ শুরু হবে। সিকিম বা পশ্চিমবঙ্গের কোনও পাহাড়ে শ্যুট করার কথা ভাবছেন পরিচালক।

গল্পের নায়ক বিচিত্র এক মানুষ। তাঁর প্রেমের জন্য অপেক্ষা আছে, কিন্তু কোনও মেয়েকে গ্রহণ করার সাহস নেই। সে একাই বেরিয়ে পড়ে পাহাড়ের পথে। পাহাড়ের বাঁকেই খুঁজে পায় পুরনো প্রেমিকাকে, এক খুনিকেও!

ঋত্বিক চক্রবর্তীর কেমন লাগছে এই রকম একটা চরিত্র পেয়ে? কথাটা জানতে চাওয়ায় ঋত্বিক বললেন, ‘‘চরিত্রটা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। লালদার সঙ্গে প্রাথমিক স্তরেই কথা হয়ে আছে। অনেক দিন ধরেই লালদার পরিচালনায় অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প সেই সুযোগটা করে দিল।’’

গোয়েন্দা-রহস্য বা পরিবার—সব ছবিতেই এখন ঘুরে ঘুরে আসছে নতুন সম্পর্ক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সুমনের এই ছবি নতুন প্রজন্মের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? ‘‘গল্পতে যেমন শব্দ নিয়ে প্রচুর খেলা আছে, তেমনি চমৎকার একটা হিউমার ধরা আছে। সুমনের মতো পরিণত পরিচালকই এই রকম একটা বিষয় নিয়ে ছবি করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন,’’ বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

এই দুঃসাহসিক অ্যাটেম্পট সম্ভব হচ্ছে প্রযোজক পবন কানোরিয়ার সহযোগিতায়। ‘হারবার্ট’, ‘কাঙাল মালসাট’য়ের পর সুমন-পবন জুটির এটা তৃতীয় প্রযোজনা।

অসমে হবু শ্বশুরবাড়িতে বর আর শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন পাওলি। ফোনে বললেন, ‘‘লালদার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। কলকাতায় ফিরেই স্ক্রিপ্ট শুনতে যাব। অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল ওর ছবিতে কাজ করি। ‘হারবার্ট’, ‘কাঙাল মালসাট’য়ের সময়ও আমার সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা নানা কারণে হয়নি। লালদার ছবি মানেই অন্য রকম একটা মেকিং। আমি খুব এক্সাইটেড।’’

একটানা ন্যারেটিভ স্টাইলে গল্প বলা নয়। গল্পহীনতাই ছবির সম্পদ। সামাজিক-রাজনীতির ক্যানভাসে সুমন এ বার বলবেন মুহূর্তের সম্পর্কের কথা। সোজাসুজি রাজনীতির গল্প থেকে সরে এসে তিনিও পরিবার-সম্পর্ক নিয়েই ছবি করছেন। কথাটা বলতেই সপ্রতিভ হলেন সুমন, ‘‘আমি কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতির সব ঘটনাই দেখে চলেছি। কানহাইয়ার কথা তো রোজই ভাবি। কিন্তু এ বার সমাজের রাজনীতিকে ধরতে চাইছি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো একজন মার্কসিস্ট হয়েও সম্পর্ক নিয়ে গল্প লিখেছেন।’’

মুম্বইয়ের সাত বাংলোয় তৈরি হচ্ছে একের পর এক দৃশ্য।
বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সুমন গড়ছেন, ‘ক্যালাইডোস্কোপ অব ইমোশন’—সঙ্গে স্বস্তিকা।
ছবির ‘টুকি’। তাঁদের জীবনের ছায়াও কি ধরা থাকবে সেলুলয়েডের এই ফ্রেমে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE