ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
অনেকেই তো এ বার ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন। আপনি বাদ কেন?
আরে আমি কী দাঁড়াব? আমার লোকসভা-টভায় যাওয়ার ইন্টারেস্ট নেই। আমি ভোটে দাঁড়ানো মানেই সোজা প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসব।
এত কনফিডেন্স?
কনফিডেন্স হবে না কেন বলুন তো? কত লোক এসেছে আইডিয়া রক কনসার্টে দেখেছেন? চল্লিশ হাজার। আরে সবাই তো একই শহরে বছরে দু’বার আসতে ভয় পায়। দ্বিতীয়বার কোনও ক্রাউড হবে না বলে। আমি তো কলকাতায় শেষ দু’বছরে দশটা শো করলাম। একই রকম ক্রাউড।
আমার ভয় পাওয়ার কী আছে?
ভয় যদি না-ই থাকে, তবে সব সময় চোখ লুকিয়ে থাকেন কেন?
(প্রচণ্ড হেসে) আরে এটা ‘কিং মিকা’র স্টাইল স্টেটমেন্ট। এখন তো আমার দেখা দেখি অনেকেই কপি করা শুরু করেছে। রাতের বেলাও ঘুটঘুটে কালো চশমা পরে থাকে। হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায়। বাঁচতে হলে রাজার মতোই বাঁচতে হবে। তার ফলটা দেখুন।
ফল তো দেখাই যাচ্ছে। শোনা যায়, এক একটা শোয়ের জন্য আপনি ৪০ লাখ টাকা নেন...
সেটার জন্য পারফর্মার হতে হবে। সেই ’৯৮ থেকে আমার সঙ্গে অনেকেই বড় বড় ব্রেক পেয়েছে। জ্যাজ জি, জেসি জে ছিল। ২০০৫-এ রাব্বি সেরগিল ছিল। ২০০৭-এ আতিফ আর মোহিত। এখন হানি আর অরিজিৎ। ষোলো বছর হয়ে গেল গান গাইছি। ক’জন আছে আমার মতো কেরিয়ারের এতটা লম্বা ইনিংস খেলে।
আপনার লাইভ শোতে হাতেখড়ি তো দাদা দলের মেহেন্দির থেকে?
হ্যাঁ, দাদার থেকে অনেক শিখেছি। দু’বছর দাদার সঙ্গে বাজিয়েছি। এখন প্রত্যেক ছবিতে একটা না একটা আমার গান থাকবেই। ‘ঢিচকিয়াও’, ‘ওহ তেরি’ আর ‘ইয়াংগিস্তান’ সব ছবিতেই একটা করে গান আমার আছে। ‘ভুতনাথ রির্টানস’য়েও গেয়েছি। তবে লাইভ শো মাস্ট। কেরিয়ারে অনেক দিন থাকতে হলে, লাইভ শো-য়ের ডন হতে হবে।
কিন্তু সেই ডন তো বাইরেও বেরিয়ে পড়ে...
হা হা হা। একটা গল্প বলি। কিছু দিন আগে অটোতে দেখি একটা ছেলে আর মেয়ে যাচ্ছে। আমি গাড়ি থেকে দেখলাম ওদের কিছু একটা গন্ডোগোল হচ্ছে। ভাবলাম মেয়েটা বিপদে পড়েছে। নেমে দিলাম কয়েক ঘা ছেলেটাকে। পরে শুনলাম ছেলেটা আসলে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড। এমনিই ঝগড়া হচ্ছিল। এই রকমই যখনই আমি কোনও সেবা করতে যাই বা সাহায্য করতে যাই আমিই ফেঁসে যাই।
আচ্ছা। আপনার জন্ম তো দূর্গাপুরে। বাংলার সঙ্গে তো আরও একটা যোগ আছে। আপনার বলিউড ব্রেক তো প্রীতম-এর হাতে?
আরে, আমি তো প্রথম যখন প্রীতমদা-র সঙ্গে দেখা করেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল ও সর্দার। কারণ প্রীতম নামটা তো আমাদের মধ্যেও খুব পপুলার। তার ওপর তখন পঞ্জাবী গানই ও বানাত। ‘তবা ম্যয় প্যায়র কর কে’, ‘মউজা হি মউজা’, ‘সিং ইজ কিং’ হ্যাঁ অনেক গান আমাকে প্রীতমদা দিয়েছে। ওহ্, শুধু প্রীতম কেন, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক গানও তো আমি গেয়েছি। তবে আমার প্রথম গান কিন্তু ‘এ গনপত’। ওটা কিন্তু আমার নিজের লেখা আর সুর করা। দ্বিতীয় গান ছিল প্রীতমের ‘দেখা যো তুঝে ইয়ার দিল মে বাজি গিটার’। প্রীতমদা পুরো গানটাই আই ফোনে পাঠায়। কখনওই রেকর্ডিংয়ে বসে থাকে না। আমার উপর কনফিডেন্স আছে যে, মিকা ঠিকই করবে।
শুনেছি ‘গনপত’ গানটা নিয়ে আপনি সঞ্জয় গুপ্ত-কে জ্ঞানও দিয়েছিলেন?
(হেসে) হ্যাঁ হ্যাঁ। ব্যাপারটা হয়েছিল কী। রাত দেড়টার সময় একদিন সঞ্জয় ডাকলেন। বললেন যে উনি আমার ফ্যান... ডিনার করলাম। আমাকে ছবিটা টিভিতে চালিয়ে দেখালেন। আমি শুনে বললাম, ‘যে ফিল্ম দেখাচ্ছেন আর যে গান গাইতে বলছেন দু’টো কিন্তু একসঙ্গে যায় না।’ ওঁর তো মনে হয়েছে, ‘আরে এক তো একে দিয়ে গান গাওয়াচ্ছি । তার উপর আমাকেই জ্ঞান দিচ্ছে।’ এটাও তো হয়নি যে, আমার কোনও বড় গান হিট হয়েছে। আমাকে তো সে দিনের মতো খাইয়েদাইয়ে ছেড়ে দিলেন। কোনও খবর নেই। তিন মাস পরে ফোন করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আমার আইডিয়া কী? আমি বললাম। সেটাই মেনে নিলেন।
আর সেই মিউজিক ডিরেক্টর হওয়ার স্বপ্নটা...
দেখুন, ২৫টা ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে পারি। কিন্তু গানেই লাগিয়ে দিল বলিউড। চান্সই পেলাম না। এখন তো শোয়ের পর শো... গানের পর গান। একটু সময় বের করতে পারলেই মিউজিক ডিরেকশনে যাব। দাদার ‘দর দি রব’ আমার কম্পোজিশনে। ’৯৮-এ আমার নিজের অ্যালবাম এসে গেল, ‘সাওয়ান মে লগ গয়ি আগ’। আগে পপ সিঙ্গিংয়ে তো ব্যাপারটা অনেক সোজা ছিল। এখন খুব টাফ। খুব কম্পিটিশন।
হ্যাঁ, হানি সিংহ আর অরিজিৎ সিংহ তো ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন...
প্রথমেই বলি, আমার কিন্তু দু’জনকেই খুব ভাল লাগে। অরিজিৎ প্লে ব্যাকে দারুণ। গিটারও ভাল বাজায়। হানিও খুব ভাল। সাঙ্ঘাতিক র্যাপার। কিন্তু ওদের প্ল্যাটফর্ম তো আমি বানিয়ে দিয়েছি।
এ বার, আপনার প্রশ্নে আসি। কোনও একটা সিঙ্গারের নাম বলুন তো যে, কলকাতায় এক বছরে তিনবার এসেছে? কলকাতায় এদের কারও শোয়ে এত লোক হয়েছে? আমি লিখে দিতে পারি, হয়নি। তা হলে কেন ইনসিকিওর্ড হব? আমার তো ভালই লাগে ওদের নাম হলে। হানিকে তো আমিই ব্রেক দিয়েছিলাম। এখনও তো অনেক মিউজিক ডিরেক্টরকে আমি হানি-র নম্বর দিই, গান গাওয়ানোর জন্য। আর ‘সুভা হোনে না দে’-র রেকর্ডিং কিন্তু অরিজিৎ করেছিল। ও তো প্রীতমের খুব কাছের। আমার ইনসিকিওর্ড লাগে না। বরং মজাই লাগে যে, আমার সঙ্গে দু’জন ভাই আছে।
কিন্তু ‘লুট’ আর ‘মিট্টি’-তে অভিনয় তো জমল না।
অভিনয়টা করলাম কখন? অভিনেতার মতো করে তো আর অভিনয় করিনি। দশজন অভিনেতার সঙ্গে আমাকেও ঢুকিয়ে দেবে। সে ছবি না চললে আমি কী করব! ‘মিট্টি’তে আমার ছিল ফোর্থ ক্যারেকটার। আরে তার থেকে তো ভাল আমি হিমেশ বা সোনু-র মতো নায়কই হয়ে যাব। পয়সা তো আমার কম নেই। না হয় নিজেই কুড়ি কোটি দিয়ে একটা ছবি বানিয়ে নেব। এ বার ‘লুট’। ওটা করেছিলাম সুনীল শেঠির জন্য। বন্ধু বললে তো না করা যায় না। তবে হ্যাঁ, এ বার আমি অ্যাক্টিংয়ে আসছি। লিড রোলে আছে শান। পঞ্জাবী ফিল্ম। নাম ‘বলবিন্দর সিংহ’। এটাতেও মজা হয়েছিল। আমাকে অ্যাক্টর হিসেবে সই করিয়ে, পাঁচ দিনের মাথায় বলে টাকা নেই। আমি তখন বললাম চলো, আমিই ছবি প্রোডিউস করে দিচ্ছি। পরিচালক তো খুশি হয়ে গেল। পয়সা দেওয়ার বদলে আমার কাছ থেকেই তো পেয়ে গেল। দু’-এক মাসেই রিলিজ করবে ছবিটা।
আচ্ছা শেষ প্রশ্ন করি, পাসপোর্ট কতবার রিনিউ করতে হয়?
হা হা হা। অনেকবার। একবার তো অস্ট্রেলিয়ায় আটকে গিয়েছিলাম আমার কাছে তিনটে পাসপোর্ট ছিল বলে। ওদের বোঝালাম, ‘আরে ভাই, ইন্ডিয়ায় এটাই হয়’।
এত ব্যস্ত শিডিউলে বিয়ে করবেন কবে?
এ বছরে বিয়েটা করেই ফেলব। বাড়ির লোকেরা তো উঠে পড়ে লেগেছে। (হেসে) হানি আর অরিজিৎ তো বিয়ে করেই ফেলল। আমাকে এ বার করতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy