Advertisement
০৮ মে ২০২৪

‘কে’ এলেন?

বাংলার রঙ্গমঞ্চ হালফিল তীব্র বিরোধে ভরপুর থাকলেও সেখানে ভাব-টাব হয়। এই যেমন হঠাৎই নতুন নাটক ‘কে?’ দেখতে গাড়ি থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে নামলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ব্রাত্য বসু কি নিজেও বিস্মিত? জিজ্ঞেস করলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তবাংলার রঙ্গমঞ্চ হালফিল তীব্র বিরোধে ভরপুর থাকলেও সেখানে ভাব-টাব হয়। এই যেমন হঠাৎই নতুন নাটক ‘কে?’ দেখতে গাড়ি থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে নামলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ব্রাত্য বসু কি নিজেও বিস্মিত? জিজ্ঞেস করলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:২৭
Share: Save:

মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে কেউ কখনও এসেছেন আপনার নাটক দেখতে?

হ্যাঁ এসেছেন।

তার মানে ‘কে?’ দেখতে এসে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত-স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর হাতে মিষ্টির প্যাকেট দেখে আশ্চর্য হননি?

না, বরং ভাল লেগেছে। নাটকটা দেখতে আমিই ওঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।

মিষ্টিটা খেয়েছেন?

আমি মিষ্টি ভালবাসি না। আমার দলের ছেলেরা সবাই মিষ্টি খেয়েছে। আমিও তো ওঁদের থিয়েটার দেখতে যাব। তাতেই বা কী এসে গেল? কিছু দিন পর আমরা একসঙ্গে ‘কন্যাদান’ও করব।

এত দিন এত জায়গায় ঝগড়া করে এখন বলছেন তাতে কী এসে গেল?

আমি তো কোথাও ঝগড়া করিনি! আমি মনে করি আমাদের সিনিয়রদের মধ্যে থিয়েটারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। কারণ আমি এ রকম ২৪ ঘণ্টা থিয়েটারপ্রাণ মানুষ দুটো দেখিনি। তাঁর দল নান্দীকারকে সব সময় জাতীয় স্তরে ভেবেছেন। নতুন অনেক অভিনেতা তৈরি করেছেন রুদ্রবাবু। রক্ষণশীল নন। মনটা আধুনিক। এই সময়ের থিয়েটারের ভাষা তিনি বুঝতে পারেন। তাঁর মতকেই আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ফলে তিনি এই থিয়েটার দেখতে এসেছেন এবং এত ভাল ভাল কথা বলেছেন, এতে আমি ধন্য বোধ করেছি। তাঁকে আমার প্রণাম। স্বাতীদির সঙ্গে তো আমি ‘কন্যাদান’ও করি। তাঁর মতো গুণী মানুষ বাংলা থিয়েটারে বিরল।

তা হলে এ বার ভাব-ভাব স্ট্র্যাটেজি?

ওঁরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরাও ওঁদের সঙ্গে আছি।

এই নাটকীয় বন্ধুত্বে থিয়েটারে কী প্রভাব পড়বে?

খুব পজিটিভ। দর্শক বুঝবে যে থিয়েটারের লোকেরা শেষ পর্যন্ত একসঙ্গেই থাকে।

আর অতীতের তিক্ততা?

আমার ধারণা, লোকে তা ভুলে গিয়েছে।

বলছেন সবাই ‘গজনী’-র আমির খান? সবার স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে?

বা ‘ব্ল্যাক’য়ের অমিতাভ বচ্চনও বলতে পারেন। আপনি কি জানেন, আমার বন্ধুদের সঙ্গে রুদ্রবাবুর কথা হয়?

কথা হওয়া এক জিনিস। আর তিক্ততা অন্য বিষয়...যদি কিছু তিক্ততা থাকে সেটাও ঘুচে যাবে। ভুললে চলবে না যাঁদের সঙ্গে তিক্ততা হয়েছে, তাঁরা ওঁর সন্তানতুল্য।

ব্রাত্যকে বলেছি নাটক দেখতে যাওয়ার আগে আমার ভয়ই লাগছিল। দেখার পর রুদ্রবাবু আর আমি দুজনেই ফ্লোরড্। প্রোডাকশনটা খুব ভাল লেগেছে। ঋত্বিক অসাধারণ। কৃষ্ণেন্দুও দারুণ। এই রকম একটা স্ক্রিপ্ট ব্রাত্য লিখল কী করে! আমরা চাইছি ‘নান্দীকার’য়ের জন্য ও একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক। আর মতবিরোধ? রুদ্রবাবুর একটা বিশ্বাস আছে। তবে তার সঙ্গে এটাও বলব এখনকার থিয়েটারের পৃথিবীটা তো পাল্টে গিয়েছে। এখন ওই বিশ্বাস সব সময় ধরে রাখাটা ঠিক নয়। অল্পবয়সিরাও যদি সিনিয়রদের সম্মান দিয়ে দেখে সেটাও ভাল। এখনকার অনেকে নানা রকম কথা বলেছে। আমার মতে হয়তো সেটা বলা উচিত হয়নি। তবে ব্রাত্য একটাও অসম্মানজনক কথা বলেনি

স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত

আপনি কি এই তিক্ততা কাটানোর জন্য মধ্যস্থতা করবেন?

আমার মধ্যস্থতা যদি কাজে দেয়, নিশ্চয়ই করব।

আপনি অতীতের সেই মন কষাকষির ঘটনাকে কী ভাবে দেখেন?

দেখুন, উনি একটি পত্রিকায় আমাদের প্রজন্মের থিয়েটারের মানুষদের সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। পরবর্তী কালে উনি নিজেই বলেছেন যে ও ভাবে বলতে চাননি। আমার ধারণা সবাই ওই প্রসঙ্গ ভুলে গিয়েছে।

এর পরেও কি দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নাটকের মতো’ সিনেমাটা করবেন যেখানে মূল চরিত্ররা নাকি কেয়া চক্রবর্তী, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে লেখা?

আমি তো ওখানে অভিনেতা মাত্র। অজিতেশের ভূমিকায় অভিনয় করব। এই ব্যাপারটা পরিচালক বলতে পারবেন। এই নাটকটা দেখে রুদ্রবাবু আমার থেকে একটা নাটক চেয়েওছেন। আমি লিখে সেটা ‘নান্দীকার’কে দেব।

নাটক না হয় লিখে দিলেন, কিন্তু ওই সিনেমাটা হয় বা না হয়, তার জন্য আপনি কি সক্রিয় ভূমিকা নেবেন?

শিল্পের কাজে আমি সব সময় আছি। পরের সপ্তাহে আমি স্ক্রিপ্টটা শুনব। যদি কোনও জীবিত ব্যক্তিকে তা আহত করে, তা হলে আমি পরিচালককে বলব সেখান থেকে বিরত থাকতে।

রুদ্রবাবু কি নাট্যস্বজন-য়ের সদস্য?

না, এখনও নয়।

এমনটা শোনা যায় যে, প্রো-ব্রাত্য বা অ্যান্টি-ব্রাত্য কোনও পক্ষ না নিয়ে নাকি আজকাল থিয়েটার করাটা খুব ঝামেলার...

অভিযোগটা ভুল। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁদের পরিচয় দিন। আমি কথা বলব।

নাম বলে দিলে তো তাঁরা চিহ্নিত হয়ে যাবেন...

বলছি তো, আমার পক্ষ নিতে হবে তার মানে নেই। যে যোগ্য, তার জায়গা থাকবেই।

বাংলা সিনেমার দর্শক এখন হলমুখী হয়েছে। তবে ছবির মান সে ভাবে উচ্চতা পাচ্ছে কি না তা নিয়ে মতান্তর আছে। থিয়েটারে আপনি একটা মুভমেন্ট করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নাটকের মানও কি উচ্চতা পাচ্ছে?

আমাদের কয়েক জনের ১২-১৪ বছরের আয়ুক্ষয়কারী, হাড়ভাঙা খাটুনি রয়েছে এই মুভমেন্টটার পিছনে। ফলটা এখন দেখতে পাচ্ছি। এটা এক ধরনের সামাজিক নির্মাণ। বেশি সংখ্যক থিয়েটারে যদি সে জোর না থাকে, তা হলে এই সামাজিক নির্মাণটা ভেঙে পড়তে বাধ্য। সেটা অবশ্য সিনেমার ক্ষেত্রেও সত্যি। বাংলা থিয়েটারে দর্শক সিনেমার থেকে আগে এসেছে। কিন্তু প্রচার হয়নি। তবে আমি একটা জিনিস করি। আমি একমাত্র তাঁদের সিনেমা দেখি, যাঁরা আমার কাজটা দেখেন। যদি অন্যদেরটা দেখিও, তা আমি পাবলিক ডোমেনে স্বীকার করি না। লজিকটা হল তুমি এমন কিছু ছবি বানাচ্ছ না, যা আমার থিয়েটারের থেকে ভাল। তোমার যদি আমার থিয়েটার না দেখে কিছু এসে না যায়, আমারও তোমার ফিল্ম না দেখলে কিছু যাবে আসবে না।

ঋত্বিক চক্রবর্তী ও পৌলমী বসু। ‘কে?’ নাটকে

অহংকার থেকে বলছেন এটা? এই করে করে আপনি ক’জনের সিনেমা দেখে প্রকাশ্যে তা বলতে পারেন?

যত জনকে ‘কে?’-র প্রথম শো-তে দেখলেন। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় নাগ...আরও অনেককে ডেকেছি। সব মিলিয়ে ১২ জন হবে।

এখনকার থিয়েটারের মান কেমন?

খুব ভাল। ওয়ান অব দ্য গোল্ডেন পিরিয়ডস তো বটেই। পেশাদার থিয়েটার বাদ রেখে বলব গত শতাব্দীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল ৫০ আর ৬০-য়ের দশক। ১০-য়ে ১০ দেব সে সময়কে। ৭০ আর ৮০-র দশকেও ভাল কাজ হয়েছে। ১০-য়ে ৯ দেব ওই দুই দশককে। আমাদের এই সময়টাকে (২০০০-২০১৪) ১০- য়ে সাড়ে নয় দেব। এই আধ নম্বরটা বেশি দেব কারণ এখন থিয়েটারকে বিনোদনের অন্য অনেক মাধ্যমের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।

অনেকেই বলেন ব্রাত্য বসুর নাটক একটা পেজ-থ্রি ইভেন্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক শো-তেই প্রচুর সেলিব্রিটি থাকেন দর্শকাসনে...

আমি তো থিয়েটারকে গ্রুপ থিয়েটার হিসেবে দেখি না। কোম্পানি থিয়েটার হিসেবে দেখি। আমরা কেউ শুধু পরিচালক নই। আমরা প্রযোজক-পরিচালক। কোম্পানি থিয়েটারের অন্যতম কথা হল থিয়েটার নিয়ে চর্চা। তাতে অন্য ফিল্ডের মানুষ আসুক। হয়তো সে জন্যই এত সেলিব্রিটি আপনি দেখতে পেয়েছেন প্রথম শো-তে। তবে সেটা বরাবরই হয়ে এসেছে।

এর কারণ কি ভালবাসা না শিক্ষামন্ত্রীর প্রোফাইল?

প্রোফাইলের জন্য আসেন ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ আসেন থিয়েটার ভালবেসেই। ‘কে?’ যে সেলিব্রিটিরা দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই আমার নাটক দেখছেন। যেমন জয় গোস্বামী। স্বপন চক্রবর্তী। তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ দেখেছেন। ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ থেকে রূপম আমার সব নাটক দেখছে। আমিও তো ওঁদের সব কাজ শুনি, দেখি। তা তো মন্ত্রী হিসেবে নয়। রসিক হিসেবে।

উৎপল দত্ত কখনও থিয়েটারকে পেজ-থ্রি ইভেন্ট করে ফেলেননি। কোথাও কি আপনি থিয়েটার ব্যাপারটার সরলীকরণ করে দিচ্ছেন এই ইভেন্ট ব্যাপারটা করে?

শম্ভু মিত্র যখন থিয়েটার করতেন, তখন সন্তোষকুমার ঘোষ থিয়েটার দেখতে যেতেন। পণ্ডিত রবিশঙ্কর দেখতে যেতেন। সত্যজিৎ রায় থিয়েটার দেখতে যেতেন। আমার মনে হয় না যে, এতে থিয়েটারের ‘নিশ্’ ব্যাপারটা নষ্ট হয়। তা ছাড়া আমি থিয়েটারকে ‘নিশ্’ মনে করি না।

কেন নয়?

আমি ব্রডওয়ে, অফ ব্রডওয়ে, অফ অফ ব্রডওয়ে দেখেছি। সেখানেও একটা ভাগাভাগি আছে। যাদের দর্শক কম হচ্ছে, তাদের গৌরবান্বিত করা হয় না। থিয়েটার যদি বেশি সংখ্যক লোক দেখে এবং তা নিয়ে যদি মিডিয়ায় চর্চা হয়, তা হলে তো একটা অ্যাটেনশন তৈরি হয়। এই অ্যাটেনশন পাওয়াটা শুধু মাত্র সিনেমা বা ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়েই কেন হবে? আমি মনে করি থিয়েটারেরও সেই জোর আছে। তাই আমি চাই থিয়েটারের প্রতি সেই উৎসাহটা তৈরি হোক।

আপনি চান সিনেমার মতো থিয়েটার নিয়েও ট্যুইট করুক দর্শক?

হ্যাঁ, চাই।

‘কে?’ নাটকে দাম্পত্য নিয়ে এত বিতর্কিত সংলাপ লেখার পরেও গৃহযুদ্ধ এড়ালেন কী করে?

(হাসি) শিবরাম চক্রবর্তীর একটা কথা আমি মানি। উনি বলেছিলেন, “পৃথিবীতে দু’ধরনের মানুষ হয়। এক জীবিত, দুই বিবাহিত।” আমি বরাবরই ‘কে?’ নাটকের ডা. সুনীল সেনের মতোই। বৌকে ভয় পেয়েই চলি। মাঝে মাঝে যে একটা শ্রীকান্ত গুপ্ত আবির্ভূত হয় না, তা নয়। কিন্তু আমার বৌ জানে যে আসলে আমি ওই নাটকের ডিটেকটিভ চটক চট্টরাজের মতো। এগুলোর ঊর্ধ্বে। ফলে ও আমাকে সিরিয়াসলি নেয় না। পৌলমীকে তো প্রথমেই ‘কুরচি’ চরিত্রটা করতে বলেছিলাম। তার ফলে নাটকের কনটেন্ট নিয়ে বেশি ভাববার আর অবকাশ ছিল না।

এই নাটকে নিজে অভিনয় না করে ঋত্বিক চক্রবর্তীকে কেন বেছে নিলেন পৌলমীর স্বামীর ভূমিকায়?

সামনে লোকসভা নির্বাচন। সেই ব্যস্ততার পরে নিজে অভিনয় করাটা সম্ভব ছিল না। আমি মনে করি ওদের জেনারেশনে থিয়েটার আর ফিল্ম দুনিয়ার সব থেকে ভাল অভিনেতা হল ঋত্বিক। সৃজনশীল, নিয়মনিষ্ঠ। একদম পরিচালকের অভিনেতা। আর দারুণ ফ্লেক্সিবল। মঞ্চে অভিনয় করতে গেলে তো বুদ্ধি এবং দক্ষতা লাগবেই। গলা, শরীরের ছন্দ, মঞ্চকে বোঝাটাও দরকার। ঋত্বিক যেটা বাড়তি আনে, তা হল ও বুদ্ধি দিয়ে টেক্সটটা বোঝে এবং অভিনয়ের জোরে চরিত্রটা হয়ে যায়।

ঋত্বিকের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে অভিনয় করেছেন কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি। সঙ্গে গৌতম মুখোপাধ্যায়ও...কৃষ্ণেন্দু দারুণ প্রতিভাবান অভিনেতা। ‘সিনেমার মতো’-তে আমার ভাইয়ের চরিত্র করেছে। ‘রুদ্ধসঙ্গীত’-য়ে করেছিল ঋত্বিক ঘটকের চরিত্র। গৌতমদার অভিনয়ের আমি দারুণ অনুরাগী। ‘পেজ ফোর’ করেছেন আমার সঙ্গে। ‘আলতাফ গোমস’-য়েও কী দারুণ কাজ! আমার নাটক করতে গেলে রাত জেগে জেগে রিহার্সাল করতে হয়। গৌতমদার এখন ৬৪ বছর বয়স। আমাদের শিডিউল মানিয়ে নিয়ে কী পরিশ্রম করে অভিনয় করেছেন গৌতমদা! নাটকে ম্যাজিকের কোয়ালিটি নিয়ে এসেছেন তিনি।

‘কে?’ নাটকের প্রোডাকশন ডিজাইনে স্বচ্ছন্দ চলাচল আছে। পরের শো কবে হবে সেটাও অভিনব ভাবে দেখিয়েছেন। এ নিয়ে যেমন চর্চা হচ্ছে, সংলাপ নিয়েও হচ্ছে। যেমন ‘কোনও নারী যদি মিসোজিনিস্ট হতে পারে, পুরুষবিরোধী তা হলে কোনও পুরুষই বা নারীবিদ্বেষী হতে পারবে না কেন?’ ব্যক্তিগত ভাবে এটাই কি আপনারও মত?

আমি বিশ্বাস করি যে, বাস্তববিচ্ছিন্ন ক্ষমতার চর্চা কিছু দিন পরে অসার হয়ে যায়। তার সঙ্গে এটাও বলব যে, একটা সংলাপ দেখে কখনও নাট্যকারের নিজস্ব ভয়েস বোঝা যায় না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ‘মিসোজিনি’ এবং ‘মিস্যান্ড্রি’ দুটোরই বিরোধী।

১. দেবশঙ্কর হালদার

২. গৌতম হালদার/ পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়

৩. দেবাশিস বিশ্বাস

৪. কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি

৫. কৌশিক সেন

১. দেবেশ চট্টোপাধ্যায়

২. অর্পিতা ঘোষ

৩. সুমন মুখোপাধ্যায়

৪. দেবাশিস রায়

৫. মণীশ মিত্র

আপনার পরপর সব নাটকেই একটা চরিত্র থাকে, যে ইতিহাস থেকে গড়গড় করে সব তথ্য আউড়ে যায়। ‘সিনেমার মতো’তে ছিল ফিল্ম নিয়ে তথ্য। ‘কে?’-তে রয়েছে ক্রিকেট-ইতিহাস। ইতিহাসকে চরিত্র হিসেবে ব্যবহার করাটা কি আপনার নাটকের একটা চমক?

হ্যাঁ। ফ্রেডরিক জেমসন বলেছিলেন শিল্প মৃত। এখন শিল্পের দু’টো কাজ আছে। হয় সেই অতীতকে সংরক্ষণ করো। অথবা ভাঙচুর করো। আমি মনে করি দু’টো কাজই একসঙ্গে চলতে পারে। এর পরে আমি দুর্যোধনকে নিয়ে একটা নাটক লিখছি। অন্য একটা নাটক লিখছি দেশভাগ নিয়ে। সেখানেও ইতিহাস আর পুরাণের বড় ভূমিকা থাকবে।

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর সঙ্গে না হয় ভাব হল। কিন্তু অনেকের ধারণা থিয়েটারের লোকেরা আজকাল বড্ড বেশি কোমর বেঁধে ঝগড়া করে। একটা সাক্ষাৎকার বেরোলে তিনটে চিঠি আসবেই...

থিয়েটারের লোকেরা এটা স্ট্র্যাটেজিক্যালি করে। ভাল কাজের থেকে ঝগড়ার আকর্ষণ বেশি। মাথায় রাখবেন থিয়েটারের ঝগড়াটা শরিকি বাড়ির ঝগড়ার মতো। হয়তো কলতলায় বসে ঝগড়া করছি ঠিকই, কিন্তু আপনি জানেন না, সন্ধেবেলা আবার একসঙ্গে বসে সিরিয়াল দেখছি কি না।

আপনি কি বলছেন যে ১৫ বছর পর তা হলে কফি হাউসে আপনি, সুমন, কৌশিক আড্ডা দিয়ে বলতেই পারেন ‘তখন কেমন ঝগড়া করে জমিয়ে দিলাম বল’?

আপনি জানলেন কী করে যে এখন রাতে আমরা ‘উল্লাস’ করছি না? কাজের পাশাপাশি ঝগড়া অধিকতর বিপণনযোগ্য (হাসতে হাসতে)।

সত্যিকারের থিয়েটারপ্রেমীদের এটা কি দূরে সরিয়ে দিচ্ছে না?

না। যাঁরা থিয়েটার দেখার, তাঁরা ঠিক দেখবেন।

কিন্তু দিনে তো ২৪ ঘণ্টা। এক দিকে মন্ত্রিত্ব, অন্য দিকে নাটক লেখা, অভিনয়, পরিচালনা। তার পর ফুল-টাইম ঝগড়া, চিঠি লেখা। টাইম ম্যানেজমেন্ট করেন কী করে?

(হাসি) আসলে এগুলোকে আমরা ঝগড়া হিসেবে দেখি না। ইভেন্ট হিসেবে দেখি।

থিয়েটারের নতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি?

বলতে পারেন।

কিন্তু এই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিটা তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বা চিত্রশিল্পে দেখি না। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তো কেউ প্রকাশ্যে বলেন না, অমুক উস্তাদ গাইতে পারেন না। বা অমুকের সুরটা লাগে না। অন্য প্রদেশের থিয়েটারের মানুষেরাও এ রকম ঝগড়া করে না...

বাংলা থিয়েটারের বাজারটা ছোট। থিয়েটারের লোকেরা সেল্ফ-মেড। তাঁদের অভিমান এবং প্রতিক্রিয়া দুটোই বেশ চড়া। তাঁরা খুব ডেলিকেটও বটে। যেহেতু শুধু মাত্র থিয়েটার করে জীবিকা অর্জন করা যায় না, তাই নাট্যকর্মীদের ইনসিকিওরিটিটা বেশি। এটা তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহন করছেন। আমরা ঠিক করেছি কিছু ঢাকব না। ফ্যাতাড়ু হব। তবে এটা আমাদের জ্ঞাতিভাইদের ঝগড়া। তলায় তলায় আমাদের কোনও ঘোঁট পাকানো নেই। আমার বন্ধু কে, আর বিপক্ষ কে, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে।

ফ্যাতাড়ু ব্রাত্যর বন্ধু কারা? শত্রুই বা কারা?

একজন বলেছিলেন সমবয়সে এবং সমব্যবসায় কখনও বন্ধুত্ব হয় না। বোদলেয়ার বলেছেন বন্ধুত্ব এমন একটা শব্দ, যার মানে আমি আজও বুঝতে পারিনি। এই দুটো লাইনকে আমি একসঙ্গে স্বীকার আর অস্বীকার করি। মনে করি, আমরা একটা সহাবস্থানে আছি। বন্ধুত্বে ততটা নেই।

দেবেশ, অর্পিতা, মণীশ কি আপনার বন্ধু, না তাঁদের সঙ্গে আপনার প্রয়োজনের সম্পর্ক?

সবাই বন্ধু।

সুমন?

সুমন বন্ধু। সোশ্যালি দেখা হলে কথা বলি, হাসি। একে অন্যের থিয়েটার দেখতে যাই। আবার ঝগড়াও করি। তবে আমি আর সুমন সহাবস্থানে নেই।

কৌশিক?

বন্ধু বলে জানতাম। আরও কিছু দিন ধরে বিষয়টা জানতে হবে। তার পর উত্তর দিতে পারব।

এমন কি হতে পারে যে আপনার নাটক দেখতে গাড়ি থেকে সুমন-কৌশিক মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে নামবেন?

উল্টোটাও হতে পারে। আমরা হয়তো মিষ্টি নিয়ে ওদের শো দেখতে যাব।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

entertainment bratya basu ke
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE